Tuesday, July 29, 2014
ইসলামের প্রথম শহীদ হলেন হযরত সুমাইয়া বিনতে খাব্বার রা.By:ফারাবী
ইসলামের ইতিহাসের প্রথম শহীদ হলেন একজন মহিলা সাহাবী এই কথাটা কি আমরা জানি ? হ্যাঁ হযরত সুমাইয়া বিনতে খুব্বাত রাযিয়াল্লাহু আনহা হলেন ইসলামের ইতিহাসের প্রথম শহীদ। মক্কী জীবনে হযরত সুমাইয়া বিনতে খুব্বাত রাযিয়াল্লাহু আনহাকে নরাধম আবু জাহেল বর্শা মেরে হত্যা করেছিল। সাহাবী হযরত সুমাইয়া বিনতে খুব্বাত রাযিয়াল্লাহু আনহার এই পৃথিবীতে জন্ম হয়েছিল একজন দাসী হিসাবে। নরাধম আবু জাহেলের চাচা আবু হুজায়ফার গৃহে হযরত সুমাইয়া বিনতে খুব্বাত রাযিয়াল্লাহু আনহার জন্ম হয়। হযরত সুমাইয়া বিনতে খুব্বাত রাযিয়াল্লাহু আনহার স্বামী ছিলেন হযরত ইয়াসীর ইবনে আমির রাযিয়াল্লাহু আনহু। ইয়েমেন থেকে হযরত ইয়াসীর ইবনে আমির রাযিয়াল্লাহু আনহু একজন দাস হিসাবে আবু হুজায়ফার গৃহে নীত হন। পরবর্তীতে ইসলাম পূর্ব যুগেই আবু হুজায়ফা উনার দাসী হযরত সুমাইয়া বিনতে খাব্বাত রাযিয়াল্লাহু আনহা কে উনার দাস হযরত ইয়াসীর ইবনে আমির রাযিয়াল্লাহু আনহুর সাথে বিয়ে দিয়ে দেন। উনাদের বিয়ে হবার পরে আবু হুজায়ফা ইবনে আল মুগীরা উনাদের ২ জন কেই স্বাধীন করে দেন। তাই হযরত সুমাইয়া বিনতে খাব্বাত রাযিয়াল্লাহু আনহার সাথে হযরত ইয়াসীর ইবনে আমির রাযিয়াল্লাহু আনহুর সংসার জীবন একজন স্বাধীন মানব মানবী রুপেই শুরু হয়, কিন্তু আরব সমাজের রীতি ছিল কোন দাস দাসী স্বাধীন হয়ে গেলেও স্বাধীন হওয়ার পর আরবের একজন প্রভাবশালী গোত্রপতির অধীনেই উনাদের কে আরব সমাজে বসবাস করতে হবে। যেহেতু আবু হুজায়ফা আবু জাহেলের আপন চাচা ছিল তাই আবু হুজায়ফার মৃত্যুর পর ইসলাম পূর্ব যুগ থেকেই হযরত সুমাইয়া বিনতে খুব্বাত রাযিয়াল্লাহু আনহা এবং হযরত ইয়াসীর ইবনে আমির রাযিয়াল্লাহু আনহু আবু জেহেলের অধীনতা মেনেই একটি স্বাধীন মানুষ দম্পত্তি রুপে মক্কায় বসবাস করছিলেন। উনারা মুলত মক্কার বনু মাখযুম গোত্রের অধীনতা মেনেই মক্কায় বসবাস করতেন। হযরত সুমাইয়া বিনতে খাব্বাত রাযিয়াল্লাহু আনহা যখন বার্ধক্যে আক্রান্ত হন ঠিক তখনই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নব্যুয়ত পান। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দ্বীন ইসলাম প্রচার করার সাথে সাথে হযরত সুমাইয়া বিনতে খাব্বাত রাযিয়াল্লাহু আনহা ও উনার স্বামী হযরত ইয়াসীর ইবনে আমির রাযিয়াল্লাহু আনহু ও উনাদের ছেলে হযরত আম্মার রাযিয়াল্লাহু আনহু মুসলমান হয়ে যান। উনারা প্রথমে গোপনে মুসলমান হলেও কিছুদিন পর প্রকাশ্যে উনারা দ্বীন ইসলাম গ্রহণ করার ঘোষণা দেন। মক্কায় উনাদের এমন কোন আত্মীয় স্বজন ছিল না যারা উনাদের কে কুরাইশদের নিষ্ঠুরতার হাত থেকে বাঁচাতে পারেন। হযরত সুমাইয়া বিনতে খাব্বাত রাযিয়াল্লাহু আনহা ছিলেন শুরুর দিক থেকে ইসলাম গ্রহন করার মাঝে ১৭ তম ব্যক্তি। ইসলাম গ্রহন করার পর হযরত সুমাইয়া বিনতে খুব্বাত রাযিয়াল্লাহু আনহার উপর নরাধম আবু জেহেল অকথ্য অত্যাচার শুরু করে। নরাধম আবু জাহেল হযরত সুমাইয়া বিনতে খুব্বাত রাযিয়াল্লাহু আনহা এবং উনার স্বামী হযরত ইয়াসীর ইবনে আমির রাযিয়াল্লাহু আনহা কে মক্কার আল-বাতহা উপত্যকার মরুভূমির তপ্ত বালুর মাঝে লোহার পোষাক পড়িয়ে শুয়িয়ে রাখত। যেহেতু হযরত সুমাইয়া বিনতে খুব্বাত রাযিয়াল্লাহু আনহার কোন নিজস্ব গোত্র ছিল না তাই আবু জাহেল তার ইচ্ছামত হযরত সুমাইয়া বিনতে খাব্বাত রাযিয়াল্লাহু আনহা কে অত্যাচার করত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন হযরত সুমাইয়া বিনতে খুব্বাত রাযিয়াল্লাহু আনহার পাশ দিয়ে যেতেন তখন বলতেন-” হে ইয়াসিরের পরিবার- পরিজন ! ধৈর্য্য ধর। তোমাদের জন্য সুসংবাদ। তোমাদের জন্য রয়েছে জান্নাত ! ” রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন হযরত সুমাইয়া বিনতে খাব্বাত রাযিয়াল্লাহু আনহা কে জান্নাতের সুসংবাদ দিতেন তখন হযরত সুমাইয়া বিনতে খাব্বাত রাযিয়াল্লাহু আনহা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে বলতেন- “ইয়া রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আমি জান্নাতের সুগন্ধ এই তপ্ত মরুভূমির বুকেই শুয়েই পাচ্ছি।” দীর্ঘদিন অত্যাচার নির্যাতন করার পরও যখন হযরত সুমাইয়া বিনতে খুব্বাত রাযিয়াল্লাহু আনহা দ্বীন ইসলাম পরিত্যাগ করল না তখন একদিন নরাধম আবু জাহেল হযরত সুমাইয়া বিনতে খুব্বাত রাযিয়াল্লাহু আনহার লজ্জাস্থানে বর্শা নিক্ষেপ করে উনাকে শহীদ করে ফেলে। হযরত সুমাইয়া বিনতে খুব্বাত রাযিয়াল্লাহু আনহার মৃত্যুর পর নরাধম আবু জেহেল উনার স্বামী হযরত ইয়াসীর ইবনে আমির রাযিয়াল্লাহু আনহু কেও তীরবিদ্ধ করে শহীদ করে ফেলে। হযরত সুমাইয়া বিনতে খুব্বাত রাযিয়াল্লাহু আনহার শাহাদাতের ঘটনাটা ঘটে ৬১৫ খ্রীষ্টাব্দে। অর্থ্যাৎ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নব্যুয়ত পাওয়ার পর ৫ বছর পর হযরত সুমাইয়া বিনতে খুব্বাত রাযিয়াল্লাহু আনহা শাহাদাত বরন করেন। বদর যুদ্ধে নরাধম আবু জেহেল নিহত হলে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হযরত সুমাইয়া বিনতে খুব্বাত রাযিয়াল্লাহু আনহার ছেলে হযরত আম্মার রাযিয়াল্লাহু আনহুকে বলেন- “আল্লাহ সুবহানাতায়ালা তোমার মায়ের ঘাতককে হত্যা করেছেন।” হযরত সুমাইয়া বিনতে খুব্বাত রাযিয়াল্লাহু আনহার একমাত্র সন্তান হযরত আম্মার রাযিয়াল্লাহু আনহুর তত্ত্বাবধানেই মদীনার কুবা শহরে ইসলামের ইতিহাসের প্রথম মসজিদ তৈরি হয়। আজ থেকে ১৪০০ বছর পূর্বে এই মহান মহিলা সাহাবী হযরত সুমাইয়া বিনতে খাব্বাত রাযিয়াল্লাহু আনহা ইসলামের সুমহান সৌন্দর্য্যে মুগ্ধ হয়ে মুসলমান হয়ে যান। ইসলাম গ্রহন করার কারনে আবু জেহেল হযরত সুমাইয়া বিনতে খুব্বাত রাযিয়াল্লাহু আনহার প্রতি কত অত্যাচারই না করেছিল কিন্তু হযরত সুমাইয়া বিনতে খুব্বাত রাযিয়াল্লাহু আনহা দ্বীন ইসলাম থেকে একচুলও সরে যাননি। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন দ্বীন ইসলাম প্রচার করা শুরু করেন তখন মক্কার একদম প্রান্তিক জন গোষ্ঠীর লোকেরাই প্রথম দ্বীন ইসলাম গ্রহন করেন। হযরত সুমাইয়া, হযরত বেলাল উনারা ছিলেন মক্কার সেই প্রান্তিক জন গোষ্ঠীর লোক। আজকে আমাদের মুসলিম ঘরের মেয়েদের আদর্শ হল হলিউঠের নায়িকা Angelina Jolie, Keira Neightly, Megan fox, Penelope Cruz, Paris Hilton. এলিট পরিবারের কয়টা মুসলিম মেয়ে জানে যে ইসলামের ইতিহাসের প্রথম শহীদ হলেন একজন মহিলা সাহাবী হযরত সুমাইয়া বিনতে খুব্বাত রাযিয়াল্লাহু আনহা ? এই মহান মহিলা সাহাবী মক্কা বিজয়, সাহাবীদের ইরাক ইরান মিশর তুরস্ক সিরিয়া, মুসলমানদের গৌরব উমাইয়া, আব্বাসীয়, উসমানীয় খিলাফত কিছুই দেখে যেতে পারেননি। হযরত সুমাইয়া বিনতে খুব্বাত রাযিয়াল্লাহু আনহা যখন শহীদ হন তখন সারা পৃথিবীতে ১০০ জনেরও বেশী মুসলমান ছিল না। আমরা মুসলমানরা তখন এতই অসহায় ছিলাম যে স্বয়ং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সামনে হযরত সুমাইয়া বিনতে খুব্বাত রাযিয়াল্লাহু আনহা কে লোহার বর্ম পরিয়ে মরুভুমির উত্তপ্ত বুকে শুয়াইয়ে রাখা হত কিন্তু সাহাবীরা কিছুই করতে পারতেন না। কিন্তু মক্কার সেই রুঢ় পরিবেশেও হযরত সুমাইয়া বিনতে খুব্বাত রাযিয়াল্লাহু আনহা দ্বীন ইসলাম থেকে একচুলও সরে দাঁড়াননি। আর আজকে আমরা মুসলমানের ঘরে জন্ম নিয়েও ইসলাম পালন করিনা, মুসলমান ঘরের কত ছেলে আজকে নাস্তিক সংশয়বাদী হয়ে যাচ্ছে কিন্তু এই ছেলে গুলি যদি একটু কষ্ট করে হায়াতুস সাহাবা, আসহাবে রাসূলের জীবন কথা এই বই গুলি থেকে মহান সাহাবীদের জীবনী গুলি পড়ত তাইলে বুঝত ইসলাম গ্রহন করার জন্য এই মক্কী জীবনে সাহাবীদের উপর মক্কার কাফেররা কত অত্যাচারই না করেছে। কিন্তু সাহাবীরা এক চুলও ইসলাম থেকে সরে দাড়ান নি। বাংলা ভাষায় সাহাবীদের জীবনীর উপর ২ টা বই আছে। হায়াতুস সাহাবা ও আসহাবে রাসূলের জীবন কথা। তাছাড়া ইসলামিক ফাউন্ডেশন থেকেও “হাদীস চর্চায় মহিলা সাহাবীদের অবদান” শীর্ষক খুব সুন্দর একটি বই বের করেছে। সকল মুসলিম ভাই বোনকে সাহাবীদের জীবনী পড়ার জন্য বিনীত ভাবে অনুরোধ করছি।
Sunday, July 27, 2014
মার্ক জুকারবার্গ তো একজন নাস্তিক তাইলে তার আবিষ্কৃত ফেইসবুক ব্যবহার করা কি মুসলমানের জন্য ঠিক হচ্ছে?:শফিউর রহমান ফারাবী স্টিকি পোস্ট
মার্ক জুকারবার্গ তো একজন নাস্তিক তাইলে তাঁর আবিস্কৃত ফেইসবুক ব্যবহার করা কি মুসলমানদের জন্য ঠিক হচ্ছে ? লিখেছেনঃ শাফিউর রহমান ফারাবী (তারিখঃ বৃহঃ, ২৭/১২/২০১২ - ১৫:০৪) নাস্তিক ভাইয়া ও আপুরা প্রায়ই একটা প্রশ্ন করেন যে মার্ক জুকারবার্গ তো একজন নাস্তিক তাইলে তাঁর আবিস্কৃত ফেইসবুক ব্যবহার করা কি আমাদের জন্য ঠিক হচ্ছে ? আচ্ছা নাস্তিক আপুরা যে প্রতিদিন সকালে রিকশায় চড়ে ক্যাম্পাসে যান সেই রিকশাওয়ালা তো মুসলমান তাইলে সেই রিকশায় চড়া কি ঐ নাস্তিক আপুর জন্য ঠিক হচ্ছে ? এখন হয়তো ঐ নাস্তিক আপু আমাকে বলবেন যে - '' আমি তো আমার বাপের টাকা খরচ করেই রিকশায় চড়ছি কিন্তু তুমি তো FREE তে ফেইসবুক ব্যবহার করছ ? '' আপাত দৃষ্টিতে ফেইসবুক ব্যবহার করা FREE হলেও মার্ক জুকারবার্গ কিন্তু Google Adsense এর মাধ্যমেই আমাদের কে উনার ফেইসবুক ব্যবহার করতে উত্সাহ দেন। আর আমরা ফেইসবুক ব্যবহার করি বলেই মার্ক জুকারবার্গ ফেইসবুক থেকে বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে কোটি কোটি ডলার কামিয়ে বান্ধবীদের সাথে ছবি তুলতে পারেন। আর ফেইসবুকের সব কিছুই কিন্তু FREE না। সামান্য কিছু ডলারের অভাবে বর্তমানে অনেক বড় বড় পেইজের এডমিনরা এখন Like খরায় ভুগছেন। Gmail ব্যবহার করাও কিন্তু Free কিন্তু আপনি পিসি থেকে Gmail এ ঢুকলে Google ও আপনাকে অনেক বিজ্ঞাপন দেখাবে। ইন্টারনেটের অনেক কিছু আপাতদৃষ্টিতে Free মনে হলেও এটা দেখিয়ে ঐসব কোম্পানী তাদের user বাড়িয়ে তারপর ঐ user দের কে ভিত্তি করে তারা বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে কোটি কোটি ডলার আয় করে। আচ্ছা মার্ক জুকারবার্গ তো একজন Programmer আর আমরা জানি কম্পিউটার Program করতে এলগরিদমের সাহায্য নিতে হয় ? আর এলগরিদম বীজগণিতের জনক তো মুসলমানরা। মুসলিম বিজ্ঞানী আল খাওরেজমি তো বীজগণিত ও এলগরিদমের জনক। এলগরিদম শব্দটি আল খাওরেজমি থেকেই এসেছে। আর আল খাওরেজমির লেখা ''আল জেবর ওয়াল মুকাবিলা '' বই থেকেই আল জেবরা শব্দটির উৎপত্তি হয়েছে। তাহলে মধ্যযুগের একজন মুসলিম গণিতবিদের আবিস্কৃত তত্ত্বের সাহায্যে ফেইসবুকের Programming চালানো কি মার্ক জুকারবার্গের জন্য ঠিক হচ্ছে ? আসলে এইখানে আমাদের একটা জিনিস বুঝতে হবে যে জ্ঞান বিজ্ঞান বস্তু উপকরন এইগুলি হচ্ছে মানব সভ্যতার অংশ। এইসব জড় বস্তু কোন জাতি বা ধর্মের নিজস্ব সম্পত্তি নয়। সাহাবীরা ইরাক ইরান মিশর তুরস্ক জর্ডান চীন এইসব দেশের খ্রিষ্ট ধর্ম, অগ্নি পূজ্ মূর্তি পূজা, এবং ইসলাম বিরোধী সংস্কৃতিকে অস্বীকার করেছিলেন কিন্তু ঐসব দেশের প্রযুক্তি ভাষা ও খাদ্যভাস কে সহজ ভাবে গ্রহন করেছিলেন। আর ধর্ম হচ্ছে যার যার ব্যক্তিগত ব্যাপার কিন্তু এই মানব সভ্যতার জ্ঞান বিজ্ঞান প্রযুক্তি হচ্ছে সমগ্র মানব জাতির সম্পদ। বর্তমানে ইউরোপ আমেরিকা পেটেন্টের মাধ্যমে প্রযুক্তি পণ্য গুলি খুব ব্যয়বহুল করে তুলেছে ইসলামী শরীয়াহ কিন্তু তথাকথিত পেটেন্টের এই কড়াকড়ি গুলি সমর্থন করে না। ইসলামী আক্বীদা সংশোধনের জন্য আরো পড়তে পারেন
Saturday, July 26, 2014
ইহুদিবাদী ইসরাইলের জন্মের ইতিকথা
গত ১৫ই মে ছিল ইহুদিবাদী ইসরাইল প্রতিষ্ঠার বার্ষিকী। এ দিনটি ফিলিস্তিনসহ মুসলিম বিশ্বের কাছে ‘নাকাবা দিবস’ হিসেবে পরিচিত। ‘নাকাবা’ অর্থ হলো বিপর্যয়। ১৯৪৮ সালের এ দিনেই আনুষ্ঠানিকভাবে দখলদার ইসরাইল প্রতিষ্ঠা লাভ করে। এ বিষয়েই এখানে আমরা বিস্তারিত আলোচনার প্রয়াস পাব। পৃথিবীতে প্রতিনিয়তই ঘটছে নানা পরিবর্তন। কোনো কোনো পরিবর্তনে মানুষ নতুনকরে আশাবাদী হচ্ছে। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে পৃথিবীতে নৈতিকতা ও মানবিকতার বিকাশ ঘটবে বলে অনেকেই আশা করেছিলেন। ভেবেছিলেন বিশ্বজুড়ে অন্যায় ও অবিচারের মাত্রা কমে আসবে। মানুষ নিজের অধিকারের বিষয়ে সচেতন হওয়ার পাশাপাশি অন্যের অধিকারকেও সম্মান করবে। বিশ্বব্যাপী বিভিন্ন শ্লোগানে আন্তর্জাতিক সংস্থার সংখ্যা বৃদ্ধির কারণেও এ আশা জোরদার হয়েছিল। কিন্তু বাস্তবে এর কিছুই ঘটেনি। আধিপত্যকামীদের ক্ষমতা ও অর্থের লোভ সবকিছুতেই হতাশার ছোয়া লাগিয়ে দিয়েছে। অন্যায় ও জুলুমের পদ্ধতিতে হয়তো পরিবর্তন এসেছে, কিন্তু তা পুরোদমেই অব্যাহত রয়েছে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়- ইসরাইলের দখলদারি এবং হত্যা- নির্যাতনে কোন পরিবর্তন আসেনি। নিঃসন্দেহে গত দুইশ’ বছরের মধ্যে সবচেয়ে জঘন্য অপরাধের যেসব ঘটনা ঘটেছে তার মধ্যে সবচেয়ে কষ্টদায়ক হলো- ইহুদিবাদীদের মাধ্যমে ফিলিস্তিনি ভূখণ্ড দখল। ফরাসি গবেষক রুযে গারুদি বলেছেন, “রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিলের জন্যই ইহুদিবাদের উৎপত্তি। ইহুদিবাদীরা তাদের অবৈধ লক্ষ্য হাসিল করতে ইহুদি ধর্মকে অপব্যবহার করছে।” ইহুদিবাদীরা গত কয়েক দশক ধরে ফিলিস্তিনি জাতির ওপর চরম দুঃখ-দুর্দশা চাপিয়ে দিয়েছে। সেখানে চালানো হচ্ছে জাতিগত নিধনযজ্ঞ। ফিলিস্তিন দখল করে সেখানে এমন একটি অবৈধ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে যা গোটা মধ্যপ্রাচ্যকেই সংকটের গভীরে নিক্ষেপ করেছে। অবৈধ ইসরাইলের কারণে গত ৬৬ বছর ধরে গোটা মধ্যপ্রাচ্যই অশান্তি ও অনিরাপত্তার আগুনে জ্বলছে। এর জন্য সাম্রাজ্যবাদী সরকারগুলোর ক্ষমতালিপ্সাই প্রধান কারণ। ইসলামী জগতের একেবারে কেন্দ্রে ইহুদিদের জন্য আলাদা রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পেছনে সুদূরপ্রসারী অশুভ লক্ষ্য কাজ করেছে, তা বোঝা যায় ইতিহাস ঘাটলেই। ঊনবিংশ শতাব্দির দ্বিতীয়ার্ধে আধিপত্যের বলয় বাড়ানো নিয়ে তিন ইউরোপীয় দেশ ব্রিটেন, ফ্রান্স ও জার্মানির মধ্যে প্রতিযোগিতা চলছিল। বিভিন্ন দেশ ও অঞ্চলকে নিজেদের নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য তারা নানা অপকৌশল অবলম্বন করছিল। ফিলিস্তিন ভূখণ্ডের ওপরও তাদের লোলুপ দৃষ্টি ছিল। কারণ ইউরোপ, এশিয়া ও আফ্রিকা মহাদেশের মধ্যে সংযোগ স্থাপন করেছে এই ফিলিস্তিন। ভৌগলিক দিক থেকে এটি একটি কৌশলগত অঞ্চল। সম্রাট নেপোলিয়ন বোনাপার্টের শাসনামলে ফিলিস্তিনকে নিজের উপনিবেশে পরিণত করার জন্য ব্যাপক চেষ্টা চালায় ফ্রান্স। ফ্রান্সের ষড়যন্ত্রের বিষয়টি টের পেয়ে এক সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা হাতে নেয় ব্রিটেন। এ পরিকল্পনার আওতায় সাম্রাজ্যবাদ ও ইহুদিবাদের মধ্যে ঘনিষ্ঠতা সৃষ্টি হয়। এরই আওতায় দখল হয়ে যায় কয়েক হাজার বছরের ঐতিহ্যের ধারক ফিলিস্তিন। ওসমানীয় সাম্রাজ্য যখন ক্ষয়িষ্ণু তখন পাশ্চাত্যে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ক্ষেত্রে বিপ্লব চলছিল। এ অবস্থায় ওসমানীয় সাম্রাজ্যের পতনন্মুখ পরিস্থিতি ইউরোপকে বিশ্বের যে কোনো প্রান্তে নিজেদের আধিপত্য প্রতিষ্ঠার সুযোগ করে দেয়। তাদের আধিপত্য বিস্তারের জন্য দু’টি জিনিস প্রয়োজন ছিল। এক- মধ্যপ্রাচ্য, উত্তর আফ্রিকা ও ইউরোপের একাংশ নিয়ে গঠিত উসমানীয় সাম্রাজ্যকে ভেঙে টুকরো টুকরো করা। দুই- টুকরো টুকরো ভূখণ্ডে পাশ্চাত্যের স্বার্থ সংরক্ষণকারী পুতুল সরকার বসানো। ওসমানীয় সামাজ্যের পতন ও মুসলিম বিশ্বের প্রভাব ক্ষুণ্ন করার সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনার অংশ হিসেবে ১৮৯৭ সালে থিয়োডর হার্জেল ও তার সহযোগীরা সুইজারল্যান্ডে এক সমাবেশের মাধ্যমে বিশ্ব ইহুদিবাদ সংস্থা প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দেয়। হার্জেল পরবর্তীতে ইহুদিবাদের জনক হিসেবে পরিচিতি লাভ করে। বিশ্বে ইহুদি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা তার বড় লক্ষ্য। কোথায় ইহুদি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা হবে, সে ইস্যু সামনে আসলে বিভিন্ন এলাকার নাম উত্থাপিত হয়। হার্জেল ফিলিস্তিনেই ইহুদিদের জন্য প্রথম রাষ্ট্র ও সরকার গঠনের পক্ষে ছিলেন। ওসমানীয় সাম্রাজ্য হার্জেলের এ পরিকল্পনা বাস্তবায়নে রাজি না হওয়ায় হার্জেলের পরিকল্পনা বাস্তবায়নে কিছুটা বিলম্ব হয়েছে। সাম্রাজ্যবাদী ও ইহুদিবাদীদের নানা ষড়যন্ত্রের মাঝেই শুরু হয়ে যায় প্রথম বিশ্বযুদ্ধ। যুদ্ধে নয়া শক্তির সমীকরণের এক পর্যায়ে ওসমানীয় সাম্রাজ্যের পতন ঘটে। এরপর বিশ্ব ইহুদিবাদ সংস্থা নতুন করে শক্তি সঞ্চয় করে। ইহুদিবাদের প্রতি ব্রিটিশ সামাজ্যবাদের সমর্থন ফিলিস্তিনে প্রথম ইহুদিবাদী সরকার গঠনের ক্ষেত্র তৈরি করে। ১৯১৭ সালে উপনিবেশবাদী ব্রিটেন ও বিশ্ব ইহুদিবাদের মধ্যে সম্পর্কের নয়া অধ্যায় শুরু হয়। ওই বছর তৎকালীন ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী ফিলিস্তিনে ইহুদি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার প্রতিশ্রুতির বিষয়ে একটি বিবৃতি প্রকাশ করেন। ১৯১৮ সালে নবপ্রতিষ্ঠিত রাষ্ট্রসংঘ ফিলিস্তিনের ওপর ব্রিটেনের একাধিপত্যকে স্বীকৃতি দেয়। তিন দশক ধরে ব্রিটিশ উপনিবেশ হিসেবে ছিল ফিলিস্তিন। তখন পর্যন্ত ফিলিস্তিনের ইতিহাসের সবচেয়ে অন্ধকার সময় ছিল এটি। ১৯৪৮ সাল পর্যন্ত ব্রিটিশ শাসকরা ফিলিস্তিনের সামাজিক ও অর্থনৈতিক সব কাঠামো ধ্বংস করে দিয়েছিল। এই তিন দশকে বিশ্ব ইহুদিবাদ সংস্থা ফিলিস্তিনে নিজেদের অবস্থান শক্তিশালী করে। বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ফিলিস্তিনের দিকে ইহুদিদের ঢল নামে। নানা দেশ থেকে তাদেরকে সেখানে নিয়ে আসা হয়। ফিলিস্তিনিদের জমি দখল করে ইহুদিবাদীদের জন্য স্থায়ী আবাসন প্রতিষ্ঠা করা হয়। শক্তি প্রয়োগ করে ফিলিস্তিনিদেরকে ভিটেমাটি ছাড়া করা হয়। এ সময় ব্রিটিশ সরকারের মদদে ইহুদিবাদীরা গোপনে ‘হাগানা’ নামের সন্ত্রাসী সেনাদল গঠন করে। তারা নিরপরাধ ফিলিস্তিনিদেরকে হত্যার মিশনে নামে। একের পর এক বহু ফিলিস্তিনিকে হত্যা করে। এ অবস্থায় পাশ্চাত্যের পুঁজিপতিরা ইহুদিবাদীদেরকে ব্যাপক অর্থ সাহায্য দেয়। এ অর্থে তারা ফিলিস্তিনে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল, কারখানা ও বিভিন্ন ইহুদিবাদী দপ্তর প্রতিষ্ঠা করে,যাতে সুযোগ এলেই ইহুদিবাদী সরকার প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দেয়া যায়। অবশেষে ১৯৪৭ সালে জাতিসংঘ অন্যায়ভাবে ফিলিস্তিনকে ভাগ করার ইশতেহার প্রকাশ করে। এরই ভিত্তিতে ফিলিস্তিনকে দুই ভাগে বিভক্ত করা হয়। এক অংশ দেয়া হয় ইহুদিবাদীদেরকে। সেখানে তারা ইহুদি সরকার প্রতিষ্ঠা করে। অন্য অংশ দেয়া হয় ফিলিস্তিনিদেরকে। একপেশে ওই ইশতেহারে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের জন্য ফিলিস্তিনের মোট ভূখণ্ডের অর্ধেককে বরাদ্দ দেয়া হয়। কিন্তু বিশ্বের মোড়লদের ইহুদিবাদপ্রীতির কারণে আজও ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হয়নি। ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডেও মোতায়েন রয়েছে ইহুদিবাদী বাহিনী। জাতিসংঘের একপেশে ইশতেহারের পক্ষে ভোট দিয়েছিল ৩৩টি দেশ। এর মধ্যে ছিল আমেরিকা, ব্রিটেন ও অন্যান্য ইউরোপীয় দেশ। ১৩টি দেশ ইশতেহারের বিপক্ষে ভোট দিয়েছিল। ভোটদানে বিরত ছিল আরও দশটি দেশ। ইশতেহার প্রকাশের এক বছর পর ফিলিস্তিন অংশটিও ইহুদিবাদীরা দখল করে নেয়। এর ফলে সেখানে নেমে আসে হাহাকার। শরণার্থীতে পরিণত করা হয় অসংখ্য ফিলিস্তিনিকে। তার হয়ে পড়েন সহায়-সম্বলহীন। ফিলিস্তিনি মুসলমানদের এ দুর্দশার মাঝে ইসলামি ও আরব দেশগুলোর মধ্যে অনৈক্য ও বিবাদ ছিল শতাব্দির সবচেয়ে বড় ট্র্যাজেডি। এই সুযোগে অবশেষে ১৯৪৮ মাসের মে মাসে ফিলিস্তিন থেকে ব্রিটিশ বাহিনী চলে যায়। শুরু হয় ইহুদিবাদীদের দুঃশাসন। ১৯৫০’র দশকে ইহুদিবাদী ইসরাইলের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী গোল্ডা মায়ার বলেছিলেন, “ফিলিস্তিনের বর্তমান প্রজন্মকে নিশ্চিহ্ন করতে হবে। এর ফলে পরবর্তী প্রজন্ম আর ফিলিস্তিনের কথা মনেই করতে পারবে না।” ফিলিস্তিন ভূখণ্ড ইহুদিদের ভূখণ্ড বলেও তিনি জোর গলায় দাবি করেছিলেন। তবে ফিলিস্তিনিদের সাহসিকতা ও প্রতিরোধ প্রমাণ করে গোল্ডা মায়ারের মতো ইহুদিবাদীদের স্বপ্ন পূর্ণ হয়নি। কারণ ফিলিস্তিনের নতুন প্রজন্মও মাতৃভূমি উদ্ধারে সোচ্চার রয়েছে এবং প্রতিরোধ সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছে। ইসরাইল নামক অবৈধ রাষ্ট্রের অস্তিত্ব শুধু ফিলিস্তিন নয় গোটা মধ্যপ্রাচ্যের জন্যই দুঃখ-দুর্দশার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ইসরাইল সৃষ্টির পর থেকেই মধ্যপ্রাচ্যে অশান্তি ও অনিরাপত্তা জেকে বসেছে। ১৯৪৮ সালের পর থেকে এ পর্যন্ত ইসরাইল মধ্যপ্রাচ্যের ওপর অন্তত ১০টি যুদ্ধ চাপিয়ে দিয়েছে। এসব যুদ্ধের মধ্যে ১৯৬৭, ১৯৮২ ও ২০০৬ সালের যুদ্ধের কথা বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। ফিলিস্তিন জবরদখলের দুই দশক পর ১৯৬৭ সালে ইহুদিবাদীরা আরব বিশ্বের ওপর ব্যাপকভিত্তিক যুদ্ধ চাপিয়ে দেয়। এ সময় ইহুদিবাদী ইসরাইল জর্দান নদীর পশ্চিম তীর, গাজা উপত্যকা, পূর্ব বায়তুল মোকাদ্দাস, সিরিয়ার গোলান মালভূমি ও মিশরের সিনাই মরুভূমি দখল করে নেয়। আরব ভূখণ্ড দখলের পর এসব এলাকায় ইহুদি উপশহর নির্মাণ প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ শুরু করে। জমি দখলের পাশাপাশি ফিলিস্তিনিদের অবশিষ্ট বসতিগুলোকে একে অপরের সঙ্গে বিচ্ছিন্ন করার ষড়যন্ত্র বাস্তবায়িত করা হয়। এর ফলে ফিলিস্তিনিদের শহর ও গ্রামগুলো পরস্পর থেকে আলাদা হয়ে গেছে। ফিলিস্তিনিদেরকে বিচ্ছিন্ন করতে ফিলিস্তিনি অধ্যুষিত এলাকার মাঝখানে ইহুদি উপশহর নির্মাণ করা হয়েছে। ইসরাইল প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দেয়ার পর বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ইহুদিদেরকে নিয়ে আসার প্রবণতা আরো বেড়ে যায় এবং ফিলিস্তিনিদেরকে তাদের ঘর- বাড়ি থেকে বের করে দিয়ে সেখানে ইহুদি অভিবাসীদেরকে ঢুকিয়ে দেয়া হয়। এর ফলে সব হারিয়ে শরণার্থীতে পরিণত হয় অগণিত ফিলিস্তিনি। ইসরাইলের এ ধরনের অমানবিক তৎপরতার বিরুদ্ধে জাতিসংঘ দুটি ইশতেহার প্রকাশ করেছে। জাতিসংঘের ইশতেহারে ১৯৬৭ সালে দখলীকৃত ভূখণ্ড থেকে সরে আসতে ইসরাইলের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে। কিন্তু ইসরাইল ওই দুই ইশতেহারকে কোন গুরুত্বই দেয়নি। এখনও তারা পুরোদমে ইহুদি বসতি নির্মাণ অব্যাহত রেখেছে। এছাড়া ২০০২ সালে ইসরাইল ৭০০ কিলোমিটার দীর্ঘ দেয়াল নির্মাণ করেছে। এ দেয়ালের উচ্চতা ছয় মিটার। এটি বর্ণবাদী দেয়াল নামেও পরিচিত। এই দেয়ালের মাধ্যমেও ফিলিস্তিন ভূখণ্ডের আরো একটা অংশ নতুনকরে দখলে নিয়েছে ইহুদিবাদী ইসরাইল। জাতিসংঘসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার কোনো প্রতিবাদকেই গুরুত্ব দিচ্ছে না ইসরাইল। গাজার ওপর ইহুদিবাদীদের ৭ বছরের সর্বাত্মক অবরোধও এখনও অব্যাহত রয়েছে। অবরোধের পাশাপাশি গাজার ওপর মাঝে মধ্যেই ব্যাপক হামলা চালাচ্ছে ইহুদিবাদীরা। বিশেষকরে ২০০৮ সালে ২২ দিন ও ২০১২ সালে ৮ দিনের ব্যাপক হামলায় গাজাজুড়ে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। শাহাদাতবরণ করে বহু নিরপরাধ ফিলিস্তিনি। ফিলিস্তিনিদের প্রতিরোধের মুখে ইহুদিবাদী সেনারা পিছু হটতে বাধ্য হলেও কাপুরুষের মতো ফিলিস্তিনের অবকাঠামোর ব্যাপক ক্ষতিসাধন করেছে তারা। পরমাণু অস্ত্র তৈরির মাধ্যমেও গোটা অঞ্চলকে হুমকির মুখে রেখেছে ইসরাইল। দিমুনা গ্রামে ইসরাইলের পরমাণু কেন্দ্র মধ্যপ্রাচ্যসহ গোটা বিশ্বের নিরাপত্তার জন্য হুমকি সৃষ্টি করেছে। অবৈধ রাষ্ট্রটি পরমাণু অস্ত্রবিস্তার রোধ চুক্তি বা এনপিটিতে সই করেনি। তারা একের পর এক পরমাণু বোমার মজুদ গড়ে তুলছে। ইসরাইলের কাছে শত শত পরমাণু বোমা রয়েছে বলে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। ইসরাইলের অপকর্ম এখন গোটা বিশ্বের কাছেই সুস্পষ্ট। পরিস্থিতি এখন এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, প্রথম দিকে যারা ইসরাইল প্রতিষ্ঠায় ভূমিকা রেখেছিলেন তারাই এখন এ কথা স্বীকার করছেন- ইসরাইল দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত হয়েছে এবং এটি ভেতর থেকেই ভেঙে পড়বে। যেসব ইহুদি ধোকায় পড়ে অন্য দেশ থেকে ইসরাইলে এসেছিল এখন তারা ইসরাইল ছাড়তে শুরু করেছে। সচেতন নাগরিকরা বলছেন, ইসরাইলি রাজনীতিবিদদের মাঝে নৈতিক অবক্ষয় এবং অর্থনৈতিক দুর্নীতি ইসরাইলের পতনের ঘন্টা বাজিয়ে দিয়েছে। সম্প্রতি ইসরাইলের প্রেসিডেন্ট শিমন পেরেজ বলেছেন, “ইসরাইল এখন অভ্যন্তরীণভাবে গভীর সংকটের মধ্যে রয়েছে এবং এই সংকট ইসরাইলকে ভেতর থেকেই পতনের দিকে নিয়ে যাচ্ছে।” তিনি বলেছেন, সোভিয়েত ইউনিয়ন, চেকোস্লোভাকিয়া ও ইউগোস্লাভিয়াও রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক দিক থেকে ভঙুর হয়ে পড়েছিল। কারণ ভেতর থেকেই তাদের পচন ধরেছিল। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ইসরাইলে গণঅসন্তোষ বেড়ে গেছে। মাঝে মধ্যেই লাখ লাখ বঞ্চিত মানুষ রাজপথে মিছিলে অংশ নিচ্ছেন। এসব বিক্ষোভকারী বৈষম্য, দারিদ্র, ক্ষুধা, বেকারত্ব, আবাসন সংকট, নৈতিক স্খলন এবং পতিতাবৃত্তির বিরুদ্ধে শ্লোগান দিচ্ছে। এই সেই ইসরাইল যেখানে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ইহুদিদেরকে সুখের স্বপ্ন দেখিয়ে আনা হয়েছিল। বলা হয়েছিল তাদের জন্য ভূস্বর্গ বানিয়ে দেয়া হবে। এসব ভুয়া প্রতিশ্রুতি দিয়ে তাদেরকে ইসরাইলে আনা হলেও এখন উল্টো চিত্রটিই চোখে পড়ছে। সামাজিক বৈষম্যের প্রতিবাদে এরইমধ্যে ১৪ জন বিক্ষোভকারী নিজের শরীরে নিজেই আগুন দিয়ে আত্মহত্যা করেছে। ১৪ জন আত্মহত্যাকারীর প্রথম ব্যক্তি ছিলেন মুশে সালমান। শরীরে আগুন দেয়ার কয়েক দিন পর তিনি হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করে। তিনি নিজের শরীরে আগুন দেয়ার আগে এক বার্তায় বলেন, ইসরাইলি নেতারা হলো চোর। তারা মানুষের অর্থ-সম্পদ চুরি করেছে। সাধারণ মানুষের কথা তারা ভাবে না। ওই আত্মহত্যার ঘটনার পর বিপুল সংখ্যক মানুষ বিক্ষোভে নামে এবং তারাও মুশে সালমানের কথাগুলোর প্রতি সমর্থন জানায়। এ ধরনের নানা অভ্যন্তরীণ সংকট ইসরাইলি নেতাদের উদ্বিগ্ন করে তুলেছে। এ ধরনের অভ্যন্তরীণ সংকট থেকে মানুষের দৃষ্টিকে সরাতে তারা মধ্যপ্রাচ্যে নতুন নতুন যুদ্ধ ও সংকট তৈরির পাঁয়তারা চালিয়ে যাচ্ছে। সিরিয়ায় চলমান গৃহযুদ্ধও সে ধরনের ষড়যন্ত্রেরই একটি অংশ। এছাড়া, ইরানভীতি ছড়িয়ে দিয়ে অভ্যন্তরীণ সঙ্কটকে ঢেকে রাখার চেষ্টা করছে ইসরাইল। ঘরে- বাইরে কোথাও ভালো নেই ইসরাইল। বিশেষকরে আমেরিকা নিজেই অর্থনৈতিক সমস্যার সম্মুখীন হওয়ায় ইসরাইলের প্রতি দেশটির অর্থনৈতিক সহযোগিতা কমে যাওয়ার আশঙ্কা বেড়েছে। সব মিলিয়ে ইসরাইলি নেতারা এখন নিজেরাই তাদের অস্তিত্বের সংকটের বিষয়টি উপলব্ধি করতে শুরু করেছেন। তারা নিজেরাই স্বীকার করছেন যে, ইসরাইল ভেতর থেকেই ভেঙে পড়তে পারে। আর এমনটি হলে গোটা বিশ্বই মুক্তি পাবে বলে সচেতন মহল আশা করছে।
আসুন জেনে নিই নাস্তিক্যবাদ কি ?
আসুন জেনে নিই: নাস্তিক্যবাদ কি নতুন কিছু না আগেও ছিল এবং কুরআন অবিশ্বাসীদের মন্তব্য কেমন ছিল নাস্তিকতা বিষয়টি নতুন কোন বিষয় নয়, মানব জাতির ধর্মীয় অবস্থা পর্যালোচনা করলে দেখা যায় , সুদূর প্রাচীন কাল থেকেই একদল মানুষ আল্লাহকে "রব" হিসেবে স্বীকৃতি না দিয়ে তারা প্রকৃতিবাদী হয়েছে। হুদ আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর জাতির মধ্যে এই জাতীয় চিন্তা- ভাবনা বিরাজমান ছিল বলে প্রমাণ পাওয়া যায়। জীবন ও জগত সম্পর্কে তাদের ধারণার বহিঃপ্রকাশ প্রসঙ্গে পবিত্র কুরআনে বর্ণিত হয়েছে, তারা বলতোঃ “(তারা বলে, কিসের আবার পুনরুত্থান) দুনিয়ার জীবনইতো হচ্ছে আমাদের একমাত্র জীবন, আমরা (এখানে) মরবো, (এখানেই) বাঁচবো, আমাদের কখনই পুনরুত্থিত করা হবে না"। (সূলা আল-মুমিনূন : ৩৭) বর্তমানে সময়ে বিশ্বে এদের উত্তরসূরীদের অভাব নেই। কিন্ত জ্ঞানের এ অভিনব অগ্রগতির যুগে একদল চিন্তাশীল মানুষ যেমন আল্লাহকেই তাদের 'রব' বলে স্বীকার করে নিচ্ছে, তেমনি আরেকদল মানুষ আল্লাহকেই অস্বীকার করে বলেছে- আল্লাহ বলতে কিছুই নেই। এ জগত মহা বিস্ফোরণের ফল। আল্লাহ বলতে কেউ এসব সৃষ্টি করেনি; বরং মানুষই আল্লাহকে সৃষ্টি করেছে। পূর্বের কুরআন অবিশ্বাসীরা কুরআন সম্পর্কে যা বলতো: “আমরা চাইলে এধরণের কথাতো নিজেরাও বলতে পারি, এগুলো তো আগের লোকদের উপকথা ছাড়া আর কিছুই নয়”। (সূরা আল আনফাল : ৩১) বর্তমান সময়ে নাস্তিকরা এই কথাগুলোই বলে থাকে। নবীরা যখন অবিশ্বাসীদের এক আল্লাহর দিকে ডাকতো তখন তার জবাবে তারা বলতো: “আমরা তো দেখছি যে, তুমি সুস্পষ্ট গুমরাহীতে লিপ্ত রয়েছ” (সূরা আল আ’রাফ: ৬০) “আমরা তো তোমাকে নির্বুদ্ধিতায় লিপ্ত মনে করি” (সূরা আল আ’রাফ: ৬৭) “তোমরা যা মেনে নিয়েছ আমরা তা অস্বীকার করি, অমান্য করি” (সূরা আল আ’রাফ: ৭৬) কেউ যদি বর্তমানে কোন নাস্তিককে আল্লাহর দাসত্ব কবুল করে নেওয়ার কথা বলে তখন তারা এই কথাগুলোই বলে থাকে যেমন: তোমরা বোকা, তোমরা যা মান আমরা তার অস্বীকার করি। হঠকারিতা বক্তব্য হিসেবে তারা যা বলতো: “আচ্ছা, তাহলে নিয়ে আস সেই আযাব, যার তুমি আমাদেরকে ভয় দেখাচ্ছ”। (সূরা আল আরাফ: ৭০) আযাবের ভয় দেখালে বর্তমান সময়ের নাস্তিকরা বলে থাকে, আযাব যদি সত্যিই থাকতো তাহলে তা আমাদের পাকড়াও করে না কেন? যারা আল্লাহতে বিশ্বাসী তাদের বিরুদ্ধে তারা যা বলতো: “এই লোকদিগকে তো এদের দ্বীন (ধর্ম) ধোকার কবলে নিক্ষিপ্ত করেছে” (সূরা আল আনফাল: ৪৯) আল্লাহতে বিশ্বাসীদের এরা বোকা এবং ধোকার কবলে নিক্ষিপ্ত রয়েছে বলে একই মন্তব্য করে যাচ্ছে। শুধু পারিপার্শ্বিক অবস্থার পরিবর্তন হয়েছে কিন্তু অবিশ্বাসী উত্তরসুরীদের কথাগুলো একই রয়ে গেছে। যেমন: ফিরাউন সুউচ্চ প্রাসাদ বানিয়ে তাতে আরোহন করে মূসা আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলেছিল, কই তোমার আল্লাহ, তাকে তো খুজে পেলাম না, ঠিক একই কথা বলেছিল সোভিয়েত ইউনিয়ন স্পুটনিক নিক্ষেপ করার পর, তারা বলেছিল, কই তোমাদের আল্লাহ, তাকে তো খুজে পেলাম না। এখন দেখুন তো এই দুই শক্তির কোনটি টিকে আছে?
স্যেকুলার বা ধর্মনিরপেক্ষতা কি?
যে মতবাদটিকে ইংরেজিতে secularism বলা হয় তার আরবি প্রতিশব্দ হিসেবে বহুলভাবে ﻋﻠﻤﺎﻧﻲ [‘আলমানি] শব্দটি ব্যবহৃত হয়ে আসছে। আর বাংলায় এর (সত্যের অপলাপকৃত) অনুবাদ করা হয় ‘ধর্মনিরপেক্ষতাবাদ’ শব্দ দিয়ে। তাহলে দেখা যাক সে সেকুলারিজম (বা তথাকথিত ধর্মনিরপেক্ষতা) কী? ছোট্ট একটি প্রশ্ন, কিন্তু তার উত্তর চাই স্পষ্ট, নিখুঁত ও বিস্তারিত। এ প্রশ্নের সঠিক উত্তর প্রত্যেক মুসলিমের জানা- থাকা জরুরি। আল্লাহর মেহেরবানী যে, এ পর্যন্ত সেকুলারিজমের উপর বহু গ্রন্থ লিখা হয়েছে, আমাদের কর্তব্য শুধু জানা ও আমল করা। এবার প্রশ্নের উত্তর অনুসন্ধান করি, তবে এ জন্য আমাদের বেশী কষ্ট করতে হবে না, কারণ যেখানে ‘সেকুলারিজম’ বা তথাকথিত ‘ধর্মনিরপেক্ষতাবাদ’ মতবাদের জন্ম, সে পাশ্চাত্য দেশসমূহে লিখিত অভিধানগুলো আমাদেরকে সেটার অর্থ খোজা ও সন্ধান করার কষ্ট থেকে মুক্তি দিয়েছে। ইংরেজি অভিধানে secularism শব্দের নিম্নরূপ অর্থ এসেছে: ১. পার্থিববাদী অথবা বস্তুবাদী। ২. ধর্মভিত্তিক বা আধ্যাত্মিক নয়। ৩. দ্বীনপালনকারী নয়, দুনিয়াবিমুখ নয় [a]। একই অভিধানে secularism শব্দের সংজ্ঞায় এসেছে: “secularism এমন একটি দর্শন, যার বক্তব্য হচ্ছে, চরিত্র- নৈতিকতা ও শিক্ষা ধর্মীয় নীতির উপর প্রতিষ্ঠিত হতে পারবে না”। ‘ব্রিটিশ বিশ্বকোষ’-এ আমরা দেখি, সেখানে সেকুলারিজম সম্পর্কে বলা হয়েছে: “সেকুলারিজম একটি সামাজিক আন্দোলন, যার একমাত্র লক্ষ্য মানুষদেরকে পরকালমুখী থেকে ফিরিয়ে এনে দুনিয়ামুখী করা”। Encyclopedia Britanica নামীয় ব্রিটিশ বিশ্বকোষে Atheism বা ‘নাস্তিকতা’ শিরোনামের অধীন secularism এর আলোচনা এসেছে। তাতে Atheism তথা নাস্তিকতাকে দু’ভাগে ভাগ করা হয়েছে: ১. তাত্ত্বিক নাস্তিকতা (ﺇﻟﺤﺎﺩ ﻧﻈﺮﻱ) ২. ব্যবহারিক নাস্তিকতা (ﺇﻟﺤﺎﺩ ﻋﻤﻠﻲ)। ‘বিশ্বকোষ’ সেকুলারিজমকে দ্বিতীয় প্রকার নাস্তিকতার অন্তর্ভুক্ত করেছে । এ আলোচনা থেকে দু’টি বিষয় স্পষ্ট হল: এক. সেকুলারিজম একটি কুফরি দর্শন, তার একমাত্র লক্ষ্য দুনিয়াকে দ্বীনের প্রভাব মুক্ত করা। সেকুলারিজম একটি মতবাদ, তার কাজ হচ্ছে পার্থিব জগতের সকল বিষয়কে ধর্মীয় বিধি-নিষেধ থেকে মুক্ত রেখে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক, আদর্শিক ও পারস্পরিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে তার নিজের তৈরি বিধান দেওয়া ও সকল স্তরে নেতৃত্ব প্রদান করা। দুই. সেকুলারিজমের সাথে জ্ঞান বা বিজ্ঞানের কোনো সম্পর্ক নেই, যেমন কতক কুচক্রী মানুষদেরকে প্রতারণার ফাঁদে ফেলার জন্য বলে, সেকুলারিজম অর্থ ‘ব্যবহারিক বিজ্ঞানের উপর গুরুত্বারোপ ও তার প্রতি আগ্রহ সৃষ্টি করা’। এ বক্তব্যের অসারতা ও সত্য গোপন করার অপকৌশল আমাদের বর্ণিত অর্থ থেকে স্পষ্ট, যা আমরা গ্রহণ করেছি ‘সেকুলারিজম’ এর সুতিকাগার থেকে, যে সমাজে তার জন্ম ও পরিচর্যা হয়েছে। তাই ‘সেকুলারিজম’ এর অর্থ যদি করা হয় ধর্মহীনতা, তাহলে তার সূক্ষ্ম ব্যাখ্যা ও সঠিক অর্থ প্রকাশ পাবে এবং তাতে অপলাপের কিছু থাকবে না, বরং যথার্থ অর্থই স্পষ্ট হবে। সেকুলারিজম (ধর্মনিরপেক্ষতা) এর বিবিধ রূপ সেকুলারিজমের দু’টি রূপ রয়েছে। যার একটি অপরটি থেকে জঘন্য: প্রথম রূপ:সরাসরি নাস্তিকতা: এ প্রকার সেকুলারিজম (ধর্মনিরপেক্ষতা) দ্বীনকে পুরোপুরি প্রত্যাখ্যান ও সৃষ্টিকর্তা আল্লাহর অস্তিত্বকে অস্বীকার করে। তা ধর্মীয় কোনো বিষয় স্বীকার করে না, বরং যারা আল্লাহর অস্তিত্বের প্রতি ঈমানের দাওয়াত দেয়, তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে। এ জাতীয় সেকুলারিজমের (ধর্মনিরপেক্ষতার) অনুসারীরা নিজেদের কুফরি, অশ্লীলতা ও কুকর্মে আত্মগর্বী ও অহংকারী। তাদের কুফরির ফয়সালা করা সকল মুসলিমের পক্ষে সহজ। আলহামদুলিল্লাহ তাদের বিষয়টি মুসলিমদের নিকট স্পষ্ট। কোনো মুসলিম তাদের দিকে ধাবিত হয় না, তবে যে দ্বীন থেকে বিচ্ছিন্ন হতে চায় সে ব্যতীত। এ ধরনের সেকুলারিজম (ধর্মনিরপেক্ষতা) জনসাধারণের নিকট কম বিপজ্জনক, তারা সাধারণ মানুষকে সহসা ধোঁকায় ফেলতে সক্ষম নয়, তবে দ্বীনের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করা, মুমিনদের সাথে শত্রুতা ও বিদ্বেষ পোষণ করা এবং তাদেরকে কষ্ট দেওয়া, অথবা জেল দেওয়া অথবা হত্যা করা ইত্যাদি ক্ষেত্রে তারাও কম ক্ষতিকর নয়। দ্বিতীয় রূপ:পরোক্ষ নাস্তিকতা [1]: এ প্রকার নাস্তিকতা আল্লাহর অস্তিত্বকে অস্বীকার করে না, তাত্ত্বিকভাবে তার উপর ঈমান আনে, তবে দুনিয়ার কোনো বিষয়ে দ্বীনের কর্তৃত্ব মানে না । তাদের শ্লোগান দুনিয়াকে দ্বীন থেকে পৃথক কর। জনসাধারণকে ধোঁকায় ফেলা ও বিপথগামী করার ক্ষেত্রে এ প্রকার নাস্তিকতা বা সেকুলারিজম (তথাকথিত ধর্মনিরপেক্ষতা) অপেক্ষাকৃত বেশি বিপজ্জনক। কারণ তারা আল্লাহর অস্তিত্বকে অস্বীকার ও তার দ্বীনের বিরুদ্ধে প্রকাশ্য বিদ্রোহ করে না, তাই তাদের কুফরির প্রকৃত অবস্থা অনেক মুসলিমের নিকট প্রচ্ছন্ন ও অস্পষ্ট থাকে। [2] দ্বীনের সঠিক জ্ঞান ও পর্যাপ্ত ইলম না থাকার কারণে তারা সেকুলারিজমকে (তথাকথিত ধর্মনিরপেক্ষতাকে) কুফরি বলে মনে করে না। এ কারণে মুসলিম দেশসমূহের অধিকাংশ সরকার সেকুলার (তথাকথিত ধর্মনিরপেক্ষ) মতবাদের অনুসারী। অনেক, বরং অধিকাংশ মুসলিম তাদের হাকিকত জানে না। এ প্রকার সেকুলারিজমের (ধর্মনিরপেক্ষতার) অনুসারী সংগঠনগুলো দ্বীন ও দ্বীনের দাওয়াত প্রদানকারীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেও নিশ্চিত থাকে, কেউ তাদের কাফের ও দ্বীন থেকে খারিজ বলবে না। কারণ, তারা প্রথম প্রকারের ন্যায় প্রকাশ্য নাস্তিকতাসহ আত্মপ্রকাশ করেনি। তাদের কাফের না বলা মুসলিমদের মূর্খতার প্রমাণ। আল্লাহর নিকট প্রার্থনা করছি, তিনি আমাদেরকে ও সকল মুসলিমকে সঠিক জ্ঞান দান করুন। মুসলিম উম্মতকে দ্বীন বুঝার তৌফিক দিন, তারা যেন এসব সংস্থা ও সংগঠন থেকে আত্মরক্ষা গ্রহণ করে। অতএব দ্বীন সম্পর্কে ওয়াকিবহাল কোনো মুসলিম সেকুলার বা তথাকথিত ধর্মনিরপেক্ষ মতাবলম্বীদের কথা বা লেখনীতে আল্লাহর নাম অথবা রাসূলের নাম অথবা ইসলামের নাম শুনে বা দেখে আশ্চর্য হয় না [3], বরং তারাই আশ্চর্য হয় ও বিস্ময় প্রকাশ করে, যারা তাদের প্রকৃত অবস্থা জানে না। secularism1 মোদ্দাকথা: উভয় প্রকার সেকুলারিজম (ধর্মনিরপেক্ষতা) স্পষ্ট কুফরি, এতে কোনো সন্দেহ ও সংশয় নেই । যদি কেউ উল্লেখিত কোনো প্রকার ধর্মনিরপেক্ষ মতবাদ মনেপ্রাণে মেনে নেয়, সে ইসলাম থেকে বহিষ্কৃত ও মুরতাদ হয়ে যাবে। আল্লাহ আমাদের হিফাজত করুন। কারণ, ইসলামই হচ্ছে পূর্ণাঙ্গ দ্বীন তথা জীবন বিধান, মানুষের জীবনের সকল ক্ষেত্রে তার স্পষ্ট বিধান রয়েছে, হোক তা আধ্যাত্মিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, চারিত্রিক বা সামাজিক কোনো শাখা। ইসলাম কখনো কোনো মতবাদকে তার বিধানে হস্তক্ষেপ করার অনুমতি দেয় না। ইসলামের সকল শাখায় পরিপূর্ণরূপে প্রত্যেক মুসলিমের প্রবেশ করা ফরয। আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেন: ﴿ ﻳَٰٓﺄَﻳُّﻬَﺎ ﭐﻟَّﺬِﻳﻦَ ﺀَﺍﻣَﻨُﻮﺍْ ﭐﺩۡﺧُﻠُﻮﺍْ ﻓِﻲ ﭐﻟﺴِّﻠۡﻢِ ﻛَﺎٓﻓَّﺔٗ ٢٠٨ ﴾ ]ﺍﻟﺒﻘﺮﺓ: ٢٠٨ [ “হে মুমিনগণ, তোমরা ইসলামে পূর্ণরূপে প্রবেশ কর”। [4] কুরআনুল কারিমের কতক বিধান গ্রহণ করে কতক বিধান ত্যাগকারীকে আল্লাহ তা‘আলা কাফের বলেছেন। ইরশাদ হচ্ছে: ﴿ ﺃَﻓَﺘُﺆۡﻣِﻨُﻮﻥَ ﺑِﺒَﻌۡﺾِ ﭐﻟۡﻜِﺘَٰﺐِ ﻭَﺗَﻜۡﻔُﺮُﻭﻥَ ﺑِﺒَﻌۡﺾٖۚ ﻓَﻤَﺎ ﺟَﺰَﺍٓﺀُ ﻣَﻦ ﻳَﻔۡﻌَﻞُ ﺫَٰﻟِﻚَ ﻣِﻨﻜُﻢۡ ﺇِﻟَّﺎ ﺧِﺰۡﻱٞ ﻓِﻲ ﭐﻟۡﺤَﻴَﻮٰﺓِ ﭐﻟﺪُّﻧۡﻴَﺎۖ ﻭَﻳَﻮۡﻡَ ﭐﻟۡﻘِﻴَٰﻤَﺔِ ﻳُﺮَﺩُّﻭﻥَ ﺇِﻟَﻰٰٓ ﺃَﺷَﺪِّ ﭐﻟۡﻌَﺬَﺍﺏِۗ ﻭَﻣَﺎ ﭐﻟﻠَّﻪُ ﺑِﻐَٰﻔِﻞٍ ﻋَﻤَّﺎ ﺗَﻌۡﻤَﻠُﻮﻥَ ٨٥ ﴾ ]ﺍﻟﺒﻘﺮﺓ: ٨٥ [ “তোমরা কি কিতাবের কিছু অংশে ঈমান রাখ আর কিছু অংশ অস্বীকার কর? সুতরাং তোমাদের মধ্যে যারা তা করে দুনিয়ার জীবনে লাঞ্ছনা ছাড়া তাদের কী প্রতিদান হতে পারে? আর কিয়ামতের দিনে তাদেরকে কঠিনতম আযাবে নিক্ষেপ করা হবে। আর তোমরা যা কর, আল্লাহ সে সম্পর্কে গাফেল নন”। [5] ইসলামে নিশ্চিতভাবে প্রমাণিত কোনো বিষয় যে প্রত্যাখ্যান করল, সে কাফের ও পথভ্রষ্ট, যদিও তার প্রত্যাখ্যান করা বিষয়ের পরিমাণ খুবকম ও সামান্য হয়। অতএব পার্থিব রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত ইসলামের সকল বিধান যে প্রত্যাখ্যান করে, সে কাফের বলার অপেক্ষা রাখে না, যেমন সেকুলারিজম বা ধর্মনিরপেক্ষতার অনুসারীরা। দ্বিতীয়ত ধর্মনিরপেক্ষ মতবাদের অনুসারীদের মাঝে ইসলাম বিনষ্টকারী কারণও রয়েছে, যেমন তারা বিশ্বাস করে নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের আদর্শ থেকে অন্য কারও আদর্শ উত্তম, অনুরূপ তার ফয়সালা থেকে অন্য কারও বিচার-ফয়সালা উত্তম। এ কারণেও তারা কাফের।[6] শায়খ আব্দুল আযীয ইবন বায রাহিমাহুল্লাহ বলেন: “ইসলাম বিনষ্টকারী চতুর্থ প্রকারের অন্তর্ভুক্ত ঐ ব্যক্তি, যে বিশ্বাস করল মানুষের তৈরি আইনি সংস্থাগুলো ইসলামী শরীয়তের বিধান থেকে উত্তম, অথবা বিশ্বাস করল যে, বিংশ শতাব্দীতে ইসলামী বিধান বাস্তবায়ন করা যুক্তিসঙ্গত নয়, অথবা ইসলাম প্রগতির অন্তরায়, অথবা বলল ইসলাম শুধু ব্যক্তি ও তার রবের মধ্যেই সীমাবদ্ধ, মানুষের জীবনের অন্য কোনো অংশে প্রবেশ করার অধিকার ইসলামের নেই”। [7] [1] আমরা সেকুলারিজম বা ধর্মনিরপেক্ষতাকে সরাসরি নাস্তিকতা ও পরোক্ষ নাস্তিকতা দু’ভাগে ভাগ করেছি, কারণ সাধারণ লোকেরা নাস্তিকতা বলতে আল্লাহর অস্তিত্ব অস্বীকার করাকেই বুঝায়, অথচ সেকুলারিজম বা তথাকথিত ধর্মনিরপেক্ষতাও এক প্রকার নাস্তিকতা, বরং নাস্তিকতার একটি শাখা হচ্ছে সেকুলারিজম বা তথাকথিত ধর্মনিরপেক্ষতা। [2] দ্বীনের সাথে পরোক্ষ নাস্তিকতা বা সেকুলারিজমের (ধর্মনিরপেক্ষতার) সংঘর্ষ অনেকের নিকট স্পষ্ট নয়, কারণ তাদের নিকট দ্বীন হচ্ছে ধর্মীয় কয়েকটি ইবাদতের নাম। তাই এ পরোক্ষ সেকুলারিজম (পরোক্ষ ধর্মনিরপেক্ষতা) যেহেতু মসজিদে সালাত আদায় ও বায়তুল্লাহ শরীফের হজকে নিষেধ করে না, তারা ধারণা করে নিয়েছে যে, ধর্মনিরপেক্ষতা দীন বিরোধী নয়। কিন্তু দীনকে যারা সঠিকভাবে বুঝেন, তারা অবশ্যই জানেন যে, সেকুলারিজম (তথাকথিত ধর্মনিরপেক্ষতা) দীনের সাথে সাংঘর্ষিক। যে মতবাদ মানুষের জীবনের সব শাখায় আল্লাহর শরীয়তকে নিষিদ্ধ ও হারাম ঘোষণা করেছে, তার চেয়ে স্পষ্ট ও কঠিন ইসলাম বিরোধী কোনো মতবাদ কি আছে? যদি তারা তা বুঝে! [3] কারণ তারা ভালো করেই জানে যে এরা এগুলো ব্যবহার করার মাধ্যমে মানুষকে ধোকা দিচ্ছে। [সম্পাদক] [4] সূরা বাকারা: (২০৮) [5] সূরা বাকারা: (৮৫) [6] দেখুন: শায়খ মুহাম্মদ ইবনে আব্দুল ওয়াহহাব রহ. রচিত ﻧﻮﺍﻗﺾ ﺍﻹﺳﻼﻡ গ্রন্থের ইসলাম বিনষ্টকারী চতুর্থ প্রকার। আরো দেখুন: শায়খ আব্দুল আযীয ইবন বায রহ. রচিত ﺍﻟﻌﻘﻴﺪﺓ ﺍﻟﺼﺤﻴﺤﺔ গ্রন্থের (২৭) নং পৃষ্ঠা। [7] দেখুন: শায়খ আব্দুল আযীয ইবন বায রহ. রচিত ﺍﻟﻌﻘﻴﺪﺓ ﺍﻟﺼﺤﻴﺤﺔ গ্রন্থের (২৭) নং পৃষ্ঠা। [a] ‘দুনিয়াবিমুখিতা’ বা ‘সংসারবিরাগী’ খৃস্ট ধর্মে একটি ইবাদতগত বিষয়। খৃস্টানগণ এ বিদ‘আতটি আবিস্কার করেছে। সুতরাং যখন তারা বলে, সেক্যুলার অর্থ, ‘সংসারবিরাগী নয়’ তখন তারা এর দ্বারা অর্থ নেয় যে, সে ইবাদতকারী নয়। মুসলিমরা মনে করে যে সংসারবিরাগী হওয়া বিদ‘আত। কিন্তু খৃস্টানরা এটাকে বিদ‘আত মনে করে না। তারা এটাকে তাদের সত্যিকার দ্বীন মনে করে। সুতরাং যখন কেউ বলবে যে, অমুক সংসারবিরাগী নয় তখন সে এর দ্বারা উদ্দেশ্য নেয় যে, লোকটি ইবাদতের ধার-ধারে না। ‘বিদ‘আত করে না’ এ অর্থ উদ্দেশ্য নেয় না। নাস্তিকতার উপর আভিধানিক বিশ্লেষণ ড. মুহাম্মদ যায়ন আল- হাদি রচিত ﻧﺸﺄﺓ ﺍﻟﻌﻠﻤﺎﻧﻴﺔ বা ‘সেকুলারিজম এর উৎপত্তি’ গ্রন্থ থেকে গ্রহণ করা হয়েছে। মূলঃ ধর্মনিরপেক্ষতা ও তার কুফল মুহাম্মদ শাকের আশ-শরীফ অনুবাদ : সানাউল্লাহ নজির আহমদ সম্পাদনা : ড. আবু বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া শেয়ার করি Facebook 1 Twitter Tumblr Email This entry was posted in কুফর. Bookmark the permalink. ফেসবুকে পেইজ সরল পথ 19.7 ফেইসবুক সামাজিক প্লাগইন পছন্দ করুন সরল পথ Bahar Sarkar এবং অন্যান্য 2 জন- এর সাথে জুলাই 16 এতে 10:03am TRUE TRUE ইমেইল গ্রহণ ইমেইলের মাধ্যমে সর্বশেষ আপডেট ও নতুন পোস্ট গ্রহণ করুন Join 243 other followers সাইন আপ আর্টিকেল সমূহ অডিও (1) অনুপ্রেরণাদায়ী ঘটনা (16) আখেরাত (8) আত্মশুদ্ধি (3) আল-কুর'আন (12) আসাবিয়াহ (1) ইতিহাস (11) ইবাদত (12) ইসলাম এবং প্রচলিত প্রথা (28) ইসলাম এবং প্রচলিত ভুল ধারনা (20) ইসলাম ও অন্যান্য ধর্ম (4) ইসলাম ও মুসলিম (12) ইসলাম ও সমাজ (42) ইসলাম সম্পর্কে অমুসলিমদের ২০টি প্রশ্নের জবাব (ডা: জাকির নায়েক এর লেকচার) (19) ঈমান (51) উপদেশ (51) কবীরা গুনাহ (1) কালোত্তীর্ণ রচনাবলী (5) কিতাবুত তাওহীদ (3) কিয়ামত (2) কুফর (3) কোরআন ও আধুনিক বিজ্ঞান (21) খোলাফায়ে রাশেদীন (3) গণতন্ত্র (2) গল্প সম্ভার (5) জান্নাত জাহান্নাম (4) জ্ঞানের মণি মুক্তো (9) তাওহীদ (20) তাওয়াক্কুল বা আল্লাহর উপর ভরসা (8) ধৈর্য্যধারণ (5) পিতামাতাদের জন্য (6) প্রশ্ন উত্তর (19) বই (17) বিদ'আত (18) বিবিধ (28) ব্যক্তিত্ব (1) ভিডিও গ্যালারি (16) মুসলিম উম্মাহ (6) রোযা (12) শিশু কিশোরদের জন্য (1) শুধুমাত্র নারীদের জন্য (7) সন্তানদের জন্য (2) সালাহ/নামায (3) স্বপ্ন (3) হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম (11) হাদীস (18) সর্বমোট 301,000 বার দেখা হয়েছে শীর্ষ পোস্ট ও পাতাগুলো লাইলাতুল কদর (প্রশ্নোত্তর) তাহাজ্জুদ নামাজ :বান্দাদের প্রতি আল্লাহ পাকের অসাধারণ একটি উপহার ডাউনলোড করুন আল-কোরআনের বাংলা অনুবাদ আপনার যে কোন জাভা সমর্থিত মোবাইলে আল-ওয়াহান; মুসলিমদের একটি ঘাতক ব্যাধি সূচীপত্র রামাদানের উপহার - হাজার মাস অপেক্ষা উত্তম রজনী 'লায়লাতুল কাদর' যে ব্যক্তি মানুষ হাসানোর জন্য মিথ্যা বলে তার জন্য ধ্বংস! রোজার মাকরুহ(অপছন্দনীয়) ও মুবাহ (বৈধ) বিষয়সমূহ রামাদানে পালিত কতিপয় ভ্রান্তিপূর্ণ কাজ ভিডিও
Tuesday, July 22, 2014
মাহমুদুর রহমানের কলাম:বল্গাহীন দূর্ণীতি
Subscribe to:
Posts (Atom)