Saturday, July 26, 2014
ইহুদিবাদী ইসরাইলের জন্মের ইতিকথা
গত ১৫ই মে ছিল ইহুদিবাদী ইসরাইল প্রতিষ্ঠার বার্ষিকী। এ দিনটি ফিলিস্তিনসহ মুসলিম বিশ্বের কাছে ‘নাকাবা দিবস’ হিসেবে পরিচিত। ‘নাকাবা’ অর্থ হলো বিপর্যয়। ১৯৪৮ সালের এ দিনেই আনুষ্ঠানিকভাবে দখলদার ইসরাইল প্রতিষ্ঠা লাভ করে। এ বিষয়েই এখানে আমরা বিস্তারিত আলোচনার প্রয়াস পাব। পৃথিবীতে প্রতিনিয়তই ঘটছে নানা পরিবর্তন। কোনো কোনো পরিবর্তনে মানুষ নতুনকরে আশাবাদী হচ্ছে। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে পৃথিবীতে নৈতিকতা ও মানবিকতার বিকাশ ঘটবে বলে অনেকেই আশা করেছিলেন। ভেবেছিলেন বিশ্বজুড়ে অন্যায় ও অবিচারের মাত্রা কমে আসবে। মানুষ নিজের অধিকারের বিষয়ে সচেতন হওয়ার পাশাপাশি অন্যের অধিকারকেও সম্মান করবে। বিশ্বব্যাপী বিভিন্ন শ্লোগানে আন্তর্জাতিক সংস্থার সংখ্যা বৃদ্ধির কারণেও এ আশা জোরদার হয়েছিল। কিন্তু বাস্তবে এর কিছুই ঘটেনি। আধিপত্যকামীদের ক্ষমতা ও অর্থের লোভ সবকিছুতেই হতাশার ছোয়া লাগিয়ে দিয়েছে। অন্যায় ও জুলুমের পদ্ধতিতে হয়তো পরিবর্তন এসেছে, কিন্তু তা পুরোদমেই অব্যাহত রয়েছে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়- ইসরাইলের দখলদারি এবং হত্যা- নির্যাতনে কোন পরিবর্তন আসেনি। নিঃসন্দেহে গত দুইশ’ বছরের মধ্যে সবচেয়ে জঘন্য অপরাধের যেসব ঘটনা ঘটেছে তার মধ্যে সবচেয়ে কষ্টদায়ক হলো- ইহুদিবাদীদের মাধ্যমে ফিলিস্তিনি ভূখণ্ড দখল। ফরাসি গবেষক রুযে গারুদি বলেছেন, “রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিলের জন্যই ইহুদিবাদের উৎপত্তি। ইহুদিবাদীরা তাদের অবৈধ লক্ষ্য হাসিল করতে ইহুদি ধর্মকে অপব্যবহার করছে।” ইহুদিবাদীরা গত কয়েক দশক ধরে ফিলিস্তিনি জাতির ওপর চরম দুঃখ-দুর্দশা চাপিয়ে দিয়েছে। সেখানে চালানো হচ্ছে জাতিগত নিধনযজ্ঞ। ফিলিস্তিন দখল করে সেখানে এমন একটি অবৈধ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে যা গোটা মধ্যপ্রাচ্যকেই সংকটের গভীরে নিক্ষেপ করেছে। অবৈধ ইসরাইলের কারণে গত ৬৬ বছর ধরে গোটা মধ্যপ্রাচ্যই অশান্তি ও অনিরাপত্তার আগুনে জ্বলছে। এর জন্য সাম্রাজ্যবাদী সরকারগুলোর ক্ষমতালিপ্সাই প্রধান কারণ। ইসলামী জগতের একেবারে কেন্দ্রে ইহুদিদের জন্য আলাদা রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পেছনে সুদূরপ্রসারী অশুভ লক্ষ্য কাজ করেছে, তা বোঝা যায় ইতিহাস ঘাটলেই। ঊনবিংশ শতাব্দির দ্বিতীয়ার্ধে আধিপত্যের বলয় বাড়ানো নিয়ে তিন ইউরোপীয় দেশ ব্রিটেন, ফ্রান্স ও জার্মানির মধ্যে প্রতিযোগিতা চলছিল। বিভিন্ন দেশ ও অঞ্চলকে নিজেদের নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য তারা নানা অপকৌশল অবলম্বন করছিল। ফিলিস্তিন ভূখণ্ডের ওপরও তাদের লোলুপ দৃষ্টি ছিল। কারণ ইউরোপ, এশিয়া ও আফ্রিকা মহাদেশের মধ্যে সংযোগ স্থাপন করেছে এই ফিলিস্তিন। ভৌগলিক দিক থেকে এটি একটি কৌশলগত অঞ্চল। সম্রাট নেপোলিয়ন বোনাপার্টের শাসনামলে ফিলিস্তিনকে নিজের উপনিবেশে পরিণত করার জন্য ব্যাপক চেষ্টা চালায় ফ্রান্স। ফ্রান্সের ষড়যন্ত্রের বিষয়টি টের পেয়ে এক সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা হাতে নেয় ব্রিটেন। এ পরিকল্পনার আওতায় সাম্রাজ্যবাদ ও ইহুদিবাদের মধ্যে ঘনিষ্ঠতা সৃষ্টি হয়। এরই আওতায় দখল হয়ে যায় কয়েক হাজার বছরের ঐতিহ্যের ধারক ফিলিস্তিন। ওসমানীয় সাম্রাজ্য যখন ক্ষয়িষ্ণু তখন পাশ্চাত্যে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ক্ষেত্রে বিপ্লব চলছিল। এ অবস্থায় ওসমানীয় সাম্রাজ্যের পতনন্মুখ পরিস্থিতি ইউরোপকে বিশ্বের যে কোনো প্রান্তে নিজেদের আধিপত্য প্রতিষ্ঠার সুযোগ করে দেয়। তাদের আধিপত্য বিস্তারের জন্য দু’টি জিনিস প্রয়োজন ছিল। এক- মধ্যপ্রাচ্য, উত্তর আফ্রিকা ও ইউরোপের একাংশ নিয়ে গঠিত উসমানীয় সাম্রাজ্যকে ভেঙে টুকরো টুকরো করা। দুই- টুকরো টুকরো ভূখণ্ডে পাশ্চাত্যের স্বার্থ সংরক্ষণকারী পুতুল সরকার বসানো। ওসমানীয় সামাজ্যের পতন ও মুসলিম বিশ্বের প্রভাব ক্ষুণ্ন করার সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনার অংশ হিসেবে ১৮৯৭ সালে থিয়োডর হার্জেল ও তার সহযোগীরা সুইজারল্যান্ডে এক সমাবেশের মাধ্যমে বিশ্ব ইহুদিবাদ সংস্থা প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দেয়। হার্জেল পরবর্তীতে ইহুদিবাদের জনক হিসেবে পরিচিতি লাভ করে। বিশ্বে ইহুদি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা তার বড় লক্ষ্য। কোথায় ইহুদি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা হবে, সে ইস্যু সামনে আসলে বিভিন্ন এলাকার নাম উত্থাপিত হয়। হার্জেল ফিলিস্তিনেই ইহুদিদের জন্য প্রথম রাষ্ট্র ও সরকার গঠনের পক্ষে ছিলেন। ওসমানীয় সাম্রাজ্য হার্জেলের এ পরিকল্পনা বাস্তবায়নে রাজি না হওয়ায় হার্জেলের পরিকল্পনা বাস্তবায়নে কিছুটা বিলম্ব হয়েছে। সাম্রাজ্যবাদী ও ইহুদিবাদীদের নানা ষড়যন্ত্রের মাঝেই শুরু হয়ে যায় প্রথম বিশ্বযুদ্ধ। যুদ্ধে নয়া শক্তির সমীকরণের এক পর্যায়ে ওসমানীয় সাম্রাজ্যের পতন ঘটে। এরপর বিশ্ব ইহুদিবাদ সংস্থা নতুন করে শক্তি সঞ্চয় করে। ইহুদিবাদের প্রতি ব্রিটিশ সামাজ্যবাদের সমর্থন ফিলিস্তিনে প্রথম ইহুদিবাদী সরকার গঠনের ক্ষেত্র তৈরি করে। ১৯১৭ সালে উপনিবেশবাদী ব্রিটেন ও বিশ্ব ইহুদিবাদের মধ্যে সম্পর্কের নয়া অধ্যায় শুরু হয়। ওই বছর তৎকালীন ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী ফিলিস্তিনে ইহুদি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার প্রতিশ্রুতির বিষয়ে একটি বিবৃতি প্রকাশ করেন। ১৯১৮ সালে নবপ্রতিষ্ঠিত রাষ্ট্রসংঘ ফিলিস্তিনের ওপর ব্রিটেনের একাধিপত্যকে স্বীকৃতি দেয়। তিন দশক ধরে ব্রিটিশ উপনিবেশ হিসেবে ছিল ফিলিস্তিন। তখন পর্যন্ত ফিলিস্তিনের ইতিহাসের সবচেয়ে অন্ধকার সময় ছিল এটি। ১৯৪৮ সাল পর্যন্ত ব্রিটিশ শাসকরা ফিলিস্তিনের সামাজিক ও অর্থনৈতিক সব কাঠামো ধ্বংস করে দিয়েছিল। এই তিন দশকে বিশ্ব ইহুদিবাদ সংস্থা ফিলিস্তিনে নিজেদের অবস্থান শক্তিশালী করে। বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ফিলিস্তিনের দিকে ইহুদিদের ঢল নামে। নানা দেশ থেকে তাদেরকে সেখানে নিয়ে আসা হয়। ফিলিস্তিনিদের জমি দখল করে ইহুদিবাদীদের জন্য স্থায়ী আবাসন প্রতিষ্ঠা করা হয়। শক্তি প্রয়োগ করে ফিলিস্তিনিদেরকে ভিটেমাটি ছাড়া করা হয়। এ সময় ব্রিটিশ সরকারের মদদে ইহুদিবাদীরা গোপনে ‘হাগানা’ নামের সন্ত্রাসী সেনাদল গঠন করে। তারা নিরপরাধ ফিলিস্তিনিদেরকে হত্যার মিশনে নামে। একের পর এক বহু ফিলিস্তিনিকে হত্যা করে। এ অবস্থায় পাশ্চাত্যের পুঁজিপতিরা ইহুদিবাদীদেরকে ব্যাপক অর্থ সাহায্য দেয়। এ অর্থে তারা ফিলিস্তিনে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল, কারখানা ও বিভিন্ন ইহুদিবাদী দপ্তর প্রতিষ্ঠা করে,যাতে সুযোগ এলেই ইহুদিবাদী সরকার প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দেয়া যায়। অবশেষে ১৯৪৭ সালে জাতিসংঘ অন্যায়ভাবে ফিলিস্তিনকে ভাগ করার ইশতেহার প্রকাশ করে। এরই ভিত্তিতে ফিলিস্তিনকে দুই ভাগে বিভক্ত করা হয়। এক অংশ দেয়া হয় ইহুদিবাদীদেরকে। সেখানে তারা ইহুদি সরকার প্রতিষ্ঠা করে। অন্য অংশ দেয়া হয় ফিলিস্তিনিদেরকে। একপেশে ওই ইশতেহারে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের জন্য ফিলিস্তিনের মোট ভূখণ্ডের অর্ধেককে বরাদ্দ দেয়া হয়। কিন্তু বিশ্বের মোড়লদের ইহুদিবাদপ্রীতির কারণে আজও ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হয়নি। ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডেও মোতায়েন রয়েছে ইহুদিবাদী বাহিনী। জাতিসংঘের একপেশে ইশতেহারের পক্ষে ভোট দিয়েছিল ৩৩টি দেশ। এর মধ্যে ছিল আমেরিকা, ব্রিটেন ও অন্যান্য ইউরোপীয় দেশ। ১৩টি দেশ ইশতেহারের বিপক্ষে ভোট দিয়েছিল। ভোটদানে বিরত ছিল আরও দশটি দেশ। ইশতেহার প্রকাশের এক বছর পর ফিলিস্তিন অংশটিও ইহুদিবাদীরা দখল করে নেয়। এর ফলে সেখানে নেমে আসে হাহাকার। শরণার্থীতে পরিণত করা হয় অসংখ্য ফিলিস্তিনিকে। তার হয়ে পড়েন সহায়-সম্বলহীন। ফিলিস্তিনি মুসলমানদের এ দুর্দশার মাঝে ইসলামি ও আরব দেশগুলোর মধ্যে অনৈক্য ও বিবাদ ছিল শতাব্দির সবচেয়ে বড় ট্র্যাজেডি। এই সুযোগে অবশেষে ১৯৪৮ মাসের মে মাসে ফিলিস্তিন থেকে ব্রিটিশ বাহিনী চলে যায়। শুরু হয় ইহুদিবাদীদের দুঃশাসন। ১৯৫০’র দশকে ইহুদিবাদী ইসরাইলের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী গোল্ডা মায়ার বলেছিলেন, “ফিলিস্তিনের বর্তমান প্রজন্মকে নিশ্চিহ্ন করতে হবে। এর ফলে পরবর্তী প্রজন্ম আর ফিলিস্তিনের কথা মনেই করতে পারবে না।” ফিলিস্তিন ভূখণ্ড ইহুদিদের ভূখণ্ড বলেও তিনি জোর গলায় দাবি করেছিলেন। তবে ফিলিস্তিনিদের সাহসিকতা ও প্রতিরোধ প্রমাণ করে গোল্ডা মায়ারের মতো ইহুদিবাদীদের স্বপ্ন পূর্ণ হয়নি। কারণ ফিলিস্তিনের নতুন প্রজন্মও মাতৃভূমি উদ্ধারে সোচ্চার রয়েছে এবং প্রতিরোধ সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছে। ইসরাইল নামক অবৈধ রাষ্ট্রের অস্তিত্ব শুধু ফিলিস্তিন নয় গোটা মধ্যপ্রাচ্যের জন্যই দুঃখ-দুর্দশার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ইসরাইল সৃষ্টির পর থেকেই মধ্যপ্রাচ্যে অশান্তি ও অনিরাপত্তা জেকে বসেছে। ১৯৪৮ সালের পর থেকে এ পর্যন্ত ইসরাইল মধ্যপ্রাচ্যের ওপর অন্তত ১০টি যুদ্ধ চাপিয়ে দিয়েছে। এসব যুদ্ধের মধ্যে ১৯৬৭, ১৯৮২ ও ২০০৬ সালের যুদ্ধের কথা বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। ফিলিস্তিন জবরদখলের দুই দশক পর ১৯৬৭ সালে ইহুদিবাদীরা আরব বিশ্বের ওপর ব্যাপকভিত্তিক যুদ্ধ চাপিয়ে দেয়। এ সময় ইহুদিবাদী ইসরাইল জর্দান নদীর পশ্চিম তীর, গাজা উপত্যকা, পূর্ব বায়তুল মোকাদ্দাস, সিরিয়ার গোলান মালভূমি ও মিশরের সিনাই মরুভূমি দখল করে নেয়। আরব ভূখণ্ড দখলের পর এসব এলাকায় ইহুদি উপশহর নির্মাণ প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ শুরু করে। জমি দখলের পাশাপাশি ফিলিস্তিনিদের অবশিষ্ট বসতিগুলোকে একে অপরের সঙ্গে বিচ্ছিন্ন করার ষড়যন্ত্র বাস্তবায়িত করা হয়। এর ফলে ফিলিস্তিনিদের শহর ও গ্রামগুলো পরস্পর থেকে আলাদা হয়ে গেছে। ফিলিস্তিনিদেরকে বিচ্ছিন্ন করতে ফিলিস্তিনি অধ্যুষিত এলাকার মাঝখানে ইহুদি উপশহর নির্মাণ করা হয়েছে। ইসরাইল প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দেয়ার পর বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ইহুদিদেরকে নিয়ে আসার প্রবণতা আরো বেড়ে যায় এবং ফিলিস্তিনিদেরকে তাদের ঘর- বাড়ি থেকে বের করে দিয়ে সেখানে ইহুদি অভিবাসীদেরকে ঢুকিয়ে দেয়া হয়। এর ফলে সব হারিয়ে শরণার্থীতে পরিণত হয় অগণিত ফিলিস্তিনি। ইসরাইলের এ ধরনের অমানবিক তৎপরতার বিরুদ্ধে জাতিসংঘ দুটি ইশতেহার প্রকাশ করেছে। জাতিসংঘের ইশতেহারে ১৯৬৭ সালে দখলীকৃত ভূখণ্ড থেকে সরে আসতে ইসরাইলের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে। কিন্তু ইসরাইল ওই দুই ইশতেহারকে কোন গুরুত্বই দেয়নি। এখনও তারা পুরোদমে ইহুদি বসতি নির্মাণ অব্যাহত রেখেছে। এছাড়া ২০০২ সালে ইসরাইল ৭০০ কিলোমিটার দীর্ঘ দেয়াল নির্মাণ করেছে। এ দেয়ালের উচ্চতা ছয় মিটার। এটি বর্ণবাদী দেয়াল নামেও পরিচিত। এই দেয়ালের মাধ্যমেও ফিলিস্তিন ভূখণ্ডের আরো একটা অংশ নতুনকরে দখলে নিয়েছে ইহুদিবাদী ইসরাইল। জাতিসংঘসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার কোনো প্রতিবাদকেই গুরুত্ব দিচ্ছে না ইসরাইল। গাজার ওপর ইহুদিবাদীদের ৭ বছরের সর্বাত্মক অবরোধও এখনও অব্যাহত রয়েছে। অবরোধের পাশাপাশি গাজার ওপর মাঝে মধ্যেই ব্যাপক হামলা চালাচ্ছে ইহুদিবাদীরা। বিশেষকরে ২০০৮ সালে ২২ দিন ও ২০১২ সালে ৮ দিনের ব্যাপক হামলায় গাজাজুড়ে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। শাহাদাতবরণ করে বহু নিরপরাধ ফিলিস্তিনি। ফিলিস্তিনিদের প্রতিরোধের মুখে ইহুদিবাদী সেনারা পিছু হটতে বাধ্য হলেও কাপুরুষের মতো ফিলিস্তিনের অবকাঠামোর ব্যাপক ক্ষতিসাধন করেছে তারা। পরমাণু অস্ত্র তৈরির মাধ্যমেও গোটা অঞ্চলকে হুমকির মুখে রেখেছে ইসরাইল। দিমুনা গ্রামে ইসরাইলের পরমাণু কেন্দ্র মধ্যপ্রাচ্যসহ গোটা বিশ্বের নিরাপত্তার জন্য হুমকি সৃষ্টি করেছে। অবৈধ রাষ্ট্রটি পরমাণু অস্ত্রবিস্তার রোধ চুক্তি বা এনপিটিতে সই করেনি। তারা একের পর এক পরমাণু বোমার মজুদ গড়ে তুলছে। ইসরাইলের কাছে শত শত পরমাণু বোমা রয়েছে বলে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। ইসরাইলের অপকর্ম এখন গোটা বিশ্বের কাছেই সুস্পষ্ট। পরিস্থিতি এখন এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, প্রথম দিকে যারা ইসরাইল প্রতিষ্ঠায় ভূমিকা রেখেছিলেন তারাই এখন এ কথা স্বীকার করছেন- ইসরাইল দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত হয়েছে এবং এটি ভেতর থেকেই ভেঙে পড়বে। যেসব ইহুদি ধোকায় পড়ে অন্য দেশ থেকে ইসরাইলে এসেছিল এখন তারা ইসরাইল ছাড়তে শুরু করেছে। সচেতন নাগরিকরা বলছেন, ইসরাইলি রাজনীতিবিদদের মাঝে নৈতিক অবক্ষয় এবং অর্থনৈতিক দুর্নীতি ইসরাইলের পতনের ঘন্টা বাজিয়ে দিয়েছে। সম্প্রতি ইসরাইলের প্রেসিডেন্ট শিমন পেরেজ বলেছেন, “ইসরাইল এখন অভ্যন্তরীণভাবে গভীর সংকটের মধ্যে রয়েছে এবং এই সংকট ইসরাইলকে ভেতর থেকেই পতনের দিকে নিয়ে যাচ্ছে।” তিনি বলেছেন, সোভিয়েত ইউনিয়ন, চেকোস্লোভাকিয়া ও ইউগোস্লাভিয়াও রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক দিক থেকে ভঙুর হয়ে পড়েছিল। কারণ ভেতর থেকেই তাদের পচন ধরেছিল। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ইসরাইলে গণঅসন্তোষ বেড়ে গেছে। মাঝে মধ্যেই লাখ লাখ বঞ্চিত মানুষ রাজপথে মিছিলে অংশ নিচ্ছেন। এসব বিক্ষোভকারী বৈষম্য, দারিদ্র, ক্ষুধা, বেকারত্ব, আবাসন সংকট, নৈতিক স্খলন এবং পতিতাবৃত্তির বিরুদ্ধে শ্লোগান দিচ্ছে। এই সেই ইসরাইল যেখানে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ইহুদিদেরকে সুখের স্বপ্ন দেখিয়ে আনা হয়েছিল। বলা হয়েছিল তাদের জন্য ভূস্বর্গ বানিয়ে দেয়া হবে। এসব ভুয়া প্রতিশ্রুতি দিয়ে তাদেরকে ইসরাইলে আনা হলেও এখন উল্টো চিত্রটিই চোখে পড়ছে। সামাজিক বৈষম্যের প্রতিবাদে এরইমধ্যে ১৪ জন বিক্ষোভকারী নিজের শরীরে নিজেই আগুন দিয়ে আত্মহত্যা করেছে। ১৪ জন আত্মহত্যাকারীর প্রথম ব্যক্তি ছিলেন মুশে সালমান। শরীরে আগুন দেয়ার কয়েক দিন পর তিনি হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করে। তিনি নিজের শরীরে আগুন দেয়ার আগে এক বার্তায় বলেন, ইসরাইলি নেতারা হলো চোর। তারা মানুষের অর্থ-সম্পদ চুরি করেছে। সাধারণ মানুষের কথা তারা ভাবে না। ওই আত্মহত্যার ঘটনার পর বিপুল সংখ্যক মানুষ বিক্ষোভে নামে এবং তারাও মুশে সালমানের কথাগুলোর প্রতি সমর্থন জানায়। এ ধরনের নানা অভ্যন্তরীণ সংকট ইসরাইলি নেতাদের উদ্বিগ্ন করে তুলেছে। এ ধরনের অভ্যন্তরীণ সংকট থেকে মানুষের দৃষ্টিকে সরাতে তারা মধ্যপ্রাচ্যে নতুন নতুন যুদ্ধ ও সংকট তৈরির পাঁয়তারা চালিয়ে যাচ্ছে। সিরিয়ায় চলমান গৃহযুদ্ধও সে ধরনের ষড়যন্ত্রেরই একটি অংশ। এছাড়া, ইরানভীতি ছড়িয়ে দিয়ে অভ্যন্তরীণ সঙ্কটকে ঢেকে রাখার চেষ্টা করছে ইসরাইল। ঘরে- বাইরে কোথাও ভালো নেই ইসরাইল। বিশেষকরে আমেরিকা নিজেই অর্থনৈতিক সমস্যার সম্মুখীন হওয়ায় ইসরাইলের প্রতি দেশটির অর্থনৈতিক সহযোগিতা কমে যাওয়ার আশঙ্কা বেড়েছে। সব মিলিয়ে ইসরাইলি নেতারা এখন নিজেরাই তাদের অস্তিত্বের সংকটের বিষয়টি উপলব্ধি করতে শুরু করেছেন। তারা নিজেরাই স্বীকার করছেন যে, ইসরাইল ভেতর থেকেই ভেঙে পড়তে পারে। আর এমনটি হলে গোটা বিশ্বই মুক্তি পাবে বলে সচেতন মহল আশা করছে।
আসুন জেনে নিই নাস্তিক্যবাদ কি ?
আসুন জেনে নিই: নাস্তিক্যবাদ কি নতুন কিছু না আগেও ছিল এবং কুরআন অবিশ্বাসীদের মন্তব্য কেমন ছিল নাস্তিকতা বিষয়টি নতুন কোন বিষয় নয়, মানব জাতির ধর্মীয় অবস্থা পর্যালোচনা করলে দেখা যায় , সুদূর প্রাচীন কাল থেকেই একদল মানুষ আল্লাহকে "রব" হিসেবে স্বীকৃতি না দিয়ে তারা প্রকৃতিবাদী হয়েছে। হুদ আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর জাতির মধ্যে এই জাতীয় চিন্তা- ভাবনা বিরাজমান ছিল বলে প্রমাণ পাওয়া যায়। জীবন ও জগত সম্পর্কে তাদের ধারণার বহিঃপ্রকাশ প্রসঙ্গে পবিত্র কুরআনে বর্ণিত হয়েছে, তারা বলতোঃ “(তারা বলে, কিসের আবার পুনরুত্থান) দুনিয়ার জীবনইতো হচ্ছে আমাদের একমাত্র জীবন, আমরা (এখানে) মরবো, (এখানেই) বাঁচবো, আমাদের কখনই পুনরুত্থিত করা হবে না"। (সূলা আল-মুমিনূন : ৩৭) বর্তমানে সময়ে বিশ্বে এদের উত্তরসূরীদের অভাব নেই। কিন্ত জ্ঞানের এ অভিনব অগ্রগতির যুগে একদল চিন্তাশীল মানুষ যেমন আল্লাহকেই তাদের 'রব' বলে স্বীকার করে নিচ্ছে, তেমনি আরেকদল মানুষ আল্লাহকেই অস্বীকার করে বলেছে- আল্লাহ বলতে কিছুই নেই। এ জগত মহা বিস্ফোরণের ফল। আল্লাহ বলতে কেউ এসব সৃষ্টি করেনি; বরং মানুষই আল্লাহকে সৃষ্টি করেছে। পূর্বের কুরআন অবিশ্বাসীরা কুরআন সম্পর্কে যা বলতো: “আমরা চাইলে এধরণের কথাতো নিজেরাও বলতে পারি, এগুলো তো আগের লোকদের উপকথা ছাড়া আর কিছুই নয়”। (সূরা আল আনফাল : ৩১) বর্তমান সময়ে নাস্তিকরা এই কথাগুলোই বলে থাকে। নবীরা যখন অবিশ্বাসীদের এক আল্লাহর দিকে ডাকতো তখন তার জবাবে তারা বলতো: “আমরা তো দেখছি যে, তুমি সুস্পষ্ট গুমরাহীতে লিপ্ত রয়েছ” (সূরা আল আ’রাফ: ৬০) “আমরা তো তোমাকে নির্বুদ্ধিতায় লিপ্ত মনে করি” (সূরা আল আ’রাফ: ৬৭) “তোমরা যা মেনে নিয়েছ আমরা তা অস্বীকার করি, অমান্য করি” (সূরা আল আ’রাফ: ৭৬) কেউ যদি বর্তমানে কোন নাস্তিককে আল্লাহর দাসত্ব কবুল করে নেওয়ার কথা বলে তখন তারা এই কথাগুলোই বলে থাকে যেমন: তোমরা বোকা, তোমরা যা মান আমরা তার অস্বীকার করি। হঠকারিতা বক্তব্য হিসেবে তারা যা বলতো: “আচ্ছা, তাহলে নিয়ে আস সেই আযাব, যার তুমি আমাদেরকে ভয় দেখাচ্ছ”। (সূরা আল আরাফ: ৭০) আযাবের ভয় দেখালে বর্তমান সময়ের নাস্তিকরা বলে থাকে, আযাব যদি সত্যিই থাকতো তাহলে তা আমাদের পাকড়াও করে না কেন? যারা আল্লাহতে বিশ্বাসী তাদের বিরুদ্ধে তারা যা বলতো: “এই লোকদিগকে তো এদের দ্বীন (ধর্ম) ধোকার কবলে নিক্ষিপ্ত করেছে” (সূরা আল আনফাল: ৪৯) আল্লাহতে বিশ্বাসীদের এরা বোকা এবং ধোকার কবলে নিক্ষিপ্ত রয়েছে বলে একই মন্তব্য করে যাচ্ছে। শুধু পারিপার্শ্বিক অবস্থার পরিবর্তন হয়েছে কিন্তু অবিশ্বাসী উত্তরসুরীদের কথাগুলো একই রয়ে গেছে। যেমন: ফিরাউন সুউচ্চ প্রাসাদ বানিয়ে তাতে আরোহন করে মূসা আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলেছিল, কই তোমার আল্লাহ, তাকে তো খুজে পেলাম না, ঠিক একই কথা বলেছিল সোভিয়েত ইউনিয়ন স্পুটনিক নিক্ষেপ করার পর, তারা বলেছিল, কই তোমাদের আল্লাহ, তাকে তো খুজে পেলাম না। এখন দেখুন তো এই দুই শক্তির কোনটি টিকে আছে?
স্যেকুলার বা ধর্মনিরপেক্ষতা কি?
যে মতবাদটিকে ইংরেজিতে secularism বলা হয় তার আরবি প্রতিশব্দ হিসেবে বহুলভাবে ﻋﻠﻤﺎﻧﻲ [‘আলমানি] শব্দটি ব্যবহৃত হয়ে আসছে। আর বাংলায় এর (সত্যের অপলাপকৃত) অনুবাদ করা হয় ‘ধর্মনিরপেক্ষতাবাদ’ শব্দ দিয়ে। তাহলে দেখা যাক সে সেকুলারিজম (বা তথাকথিত ধর্মনিরপেক্ষতা) কী? ছোট্ট একটি প্রশ্ন, কিন্তু তার উত্তর চাই স্পষ্ট, নিখুঁত ও বিস্তারিত। এ প্রশ্নের সঠিক উত্তর প্রত্যেক মুসলিমের জানা- থাকা জরুরি। আল্লাহর মেহেরবানী যে, এ পর্যন্ত সেকুলারিজমের উপর বহু গ্রন্থ লিখা হয়েছে, আমাদের কর্তব্য শুধু জানা ও আমল করা। এবার প্রশ্নের উত্তর অনুসন্ধান করি, তবে এ জন্য আমাদের বেশী কষ্ট করতে হবে না, কারণ যেখানে ‘সেকুলারিজম’ বা তথাকথিত ‘ধর্মনিরপেক্ষতাবাদ’ মতবাদের জন্ম, সে পাশ্চাত্য দেশসমূহে লিখিত অভিধানগুলো আমাদেরকে সেটার অর্থ খোজা ও সন্ধান করার কষ্ট থেকে মুক্তি দিয়েছে। ইংরেজি অভিধানে secularism শব্দের নিম্নরূপ অর্থ এসেছে: ১. পার্থিববাদী অথবা বস্তুবাদী। ২. ধর্মভিত্তিক বা আধ্যাত্মিক নয়। ৩. দ্বীনপালনকারী নয়, দুনিয়াবিমুখ নয় [a]। একই অভিধানে secularism শব্দের সংজ্ঞায় এসেছে: “secularism এমন একটি দর্শন, যার বক্তব্য হচ্ছে, চরিত্র- নৈতিকতা ও শিক্ষা ধর্মীয় নীতির উপর প্রতিষ্ঠিত হতে পারবে না”। ‘ব্রিটিশ বিশ্বকোষ’-এ আমরা দেখি, সেখানে সেকুলারিজম সম্পর্কে বলা হয়েছে: “সেকুলারিজম একটি সামাজিক আন্দোলন, যার একমাত্র লক্ষ্য মানুষদেরকে পরকালমুখী থেকে ফিরিয়ে এনে দুনিয়ামুখী করা”। Encyclopedia Britanica নামীয় ব্রিটিশ বিশ্বকোষে Atheism বা ‘নাস্তিকতা’ শিরোনামের অধীন secularism এর আলোচনা এসেছে। তাতে Atheism তথা নাস্তিকতাকে দু’ভাগে ভাগ করা হয়েছে: ১. তাত্ত্বিক নাস্তিকতা (ﺇﻟﺤﺎﺩ ﻧﻈﺮﻱ) ২. ব্যবহারিক নাস্তিকতা (ﺇﻟﺤﺎﺩ ﻋﻤﻠﻲ)। ‘বিশ্বকোষ’ সেকুলারিজমকে দ্বিতীয় প্রকার নাস্তিকতার অন্তর্ভুক্ত করেছে । এ আলোচনা থেকে দু’টি বিষয় স্পষ্ট হল: এক. সেকুলারিজম একটি কুফরি দর্শন, তার একমাত্র লক্ষ্য দুনিয়াকে দ্বীনের প্রভাব মুক্ত করা। সেকুলারিজম একটি মতবাদ, তার কাজ হচ্ছে পার্থিব জগতের সকল বিষয়কে ধর্মীয় বিধি-নিষেধ থেকে মুক্ত রেখে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক, আদর্শিক ও পারস্পরিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে তার নিজের তৈরি বিধান দেওয়া ও সকল স্তরে নেতৃত্ব প্রদান করা। দুই. সেকুলারিজমের সাথে জ্ঞান বা বিজ্ঞানের কোনো সম্পর্ক নেই, যেমন কতক কুচক্রী মানুষদেরকে প্রতারণার ফাঁদে ফেলার জন্য বলে, সেকুলারিজম অর্থ ‘ব্যবহারিক বিজ্ঞানের উপর গুরুত্বারোপ ও তার প্রতি আগ্রহ সৃষ্টি করা’। এ বক্তব্যের অসারতা ও সত্য গোপন করার অপকৌশল আমাদের বর্ণিত অর্থ থেকে স্পষ্ট, যা আমরা গ্রহণ করেছি ‘সেকুলারিজম’ এর সুতিকাগার থেকে, যে সমাজে তার জন্ম ও পরিচর্যা হয়েছে। তাই ‘সেকুলারিজম’ এর অর্থ যদি করা হয় ধর্মহীনতা, তাহলে তার সূক্ষ্ম ব্যাখ্যা ও সঠিক অর্থ প্রকাশ পাবে এবং তাতে অপলাপের কিছু থাকবে না, বরং যথার্থ অর্থই স্পষ্ট হবে। সেকুলারিজম (ধর্মনিরপেক্ষতা) এর বিবিধ রূপ সেকুলারিজমের দু’টি রূপ রয়েছে। যার একটি অপরটি থেকে জঘন্য: প্রথম রূপ:সরাসরি নাস্তিকতা: এ প্রকার সেকুলারিজম (ধর্মনিরপেক্ষতা) দ্বীনকে পুরোপুরি প্রত্যাখ্যান ও সৃষ্টিকর্তা আল্লাহর অস্তিত্বকে অস্বীকার করে। তা ধর্মীয় কোনো বিষয় স্বীকার করে না, বরং যারা আল্লাহর অস্তিত্বের প্রতি ঈমানের দাওয়াত দেয়, তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে। এ জাতীয় সেকুলারিজমের (ধর্মনিরপেক্ষতার) অনুসারীরা নিজেদের কুফরি, অশ্লীলতা ও কুকর্মে আত্মগর্বী ও অহংকারী। তাদের কুফরির ফয়সালা করা সকল মুসলিমের পক্ষে সহজ। আলহামদুলিল্লাহ তাদের বিষয়টি মুসলিমদের নিকট স্পষ্ট। কোনো মুসলিম তাদের দিকে ধাবিত হয় না, তবে যে দ্বীন থেকে বিচ্ছিন্ন হতে চায় সে ব্যতীত। এ ধরনের সেকুলারিজম (ধর্মনিরপেক্ষতা) জনসাধারণের নিকট কম বিপজ্জনক, তারা সাধারণ মানুষকে সহসা ধোঁকায় ফেলতে সক্ষম নয়, তবে দ্বীনের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করা, মুমিনদের সাথে শত্রুতা ও বিদ্বেষ পোষণ করা এবং তাদেরকে কষ্ট দেওয়া, অথবা জেল দেওয়া অথবা হত্যা করা ইত্যাদি ক্ষেত্রে তারাও কম ক্ষতিকর নয়। দ্বিতীয় রূপ:পরোক্ষ নাস্তিকতা [1]: এ প্রকার নাস্তিকতা আল্লাহর অস্তিত্বকে অস্বীকার করে না, তাত্ত্বিকভাবে তার উপর ঈমান আনে, তবে দুনিয়ার কোনো বিষয়ে দ্বীনের কর্তৃত্ব মানে না । তাদের শ্লোগান দুনিয়াকে দ্বীন থেকে পৃথক কর। জনসাধারণকে ধোঁকায় ফেলা ও বিপথগামী করার ক্ষেত্রে এ প্রকার নাস্তিকতা বা সেকুলারিজম (তথাকথিত ধর্মনিরপেক্ষতা) অপেক্ষাকৃত বেশি বিপজ্জনক। কারণ তারা আল্লাহর অস্তিত্বকে অস্বীকার ও তার দ্বীনের বিরুদ্ধে প্রকাশ্য বিদ্রোহ করে না, তাই তাদের কুফরির প্রকৃত অবস্থা অনেক মুসলিমের নিকট প্রচ্ছন্ন ও অস্পষ্ট থাকে। [2] দ্বীনের সঠিক জ্ঞান ও পর্যাপ্ত ইলম না থাকার কারণে তারা সেকুলারিজমকে (তথাকথিত ধর্মনিরপেক্ষতাকে) কুফরি বলে মনে করে না। এ কারণে মুসলিম দেশসমূহের অধিকাংশ সরকার সেকুলার (তথাকথিত ধর্মনিরপেক্ষ) মতবাদের অনুসারী। অনেক, বরং অধিকাংশ মুসলিম তাদের হাকিকত জানে না। এ প্রকার সেকুলারিজমের (ধর্মনিরপেক্ষতার) অনুসারী সংগঠনগুলো দ্বীন ও দ্বীনের দাওয়াত প্রদানকারীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেও নিশ্চিত থাকে, কেউ তাদের কাফের ও দ্বীন থেকে খারিজ বলবে না। কারণ, তারা প্রথম প্রকারের ন্যায় প্রকাশ্য নাস্তিকতাসহ আত্মপ্রকাশ করেনি। তাদের কাফের না বলা মুসলিমদের মূর্খতার প্রমাণ। আল্লাহর নিকট প্রার্থনা করছি, তিনি আমাদেরকে ও সকল মুসলিমকে সঠিক জ্ঞান দান করুন। মুসলিম উম্মতকে দ্বীন বুঝার তৌফিক দিন, তারা যেন এসব সংস্থা ও সংগঠন থেকে আত্মরক্ষা গ্রহণ করে। অতএব দ্বীন সম্পর্কে ওয়াকিবহাল কোনো মুসলিম সেকুলার বা তথাকথিত ধর্মনিরপেক্ষ মতাবলম্বীদের কথা বা লেখনীতে আল্লাহর নাম অথবা রাসূলের নাম অথবা ইসলামের নাম শুনে বা দেখে আশ্চর্য হয় না [3], বরং তারাই আশ্চর্য হয় ও বিস্ময় প্রকাশ করে, যারা তাদের প্রকৃত অবস্থা জানে না। secularism1 মোদ্দাকথা: উভয় প্রকার সেকুলারিজম (ধর্মনিরপেক্ষতা) স্পষ্ট কুফরি, এতে কোনো সন্দেহ ও সংশয় নেই । যদি কেউ উল্লেখিত কোনো প্রকার ধর্মনিরপেক্ষ মতবাদ মনেপ্রাণে মেনে নেয়, সে ইসলাম থেকে বহিষ্কৃত ও মুরতাদ হয়ে যাবে। আল্লাহ আমাদের হিফাজত করুন। কারণ, ইসলামই হচ্ছে পূর্ণাঙ্গ দ্বীন তথা জীবন বিধান, মানুষের জীবনের সকল ক্ষেত্রে তার স্পষ্ট বিধান রয়েছে, হোক তা আধ্যাত্মিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, চারিত্রিক বা সামাজিক কোনো শাখা। ইসলাম কখনো কোনো মতবাদকে তার বিধানে হস্তক্ষেপ করার অনুমতি দেয় না। ইসলামের সকল শাখায় পরিপূর্ণরূপে প্রত্যেক মুসলিমের প্রবেশ করা ফরয। আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেন: ﴿ ﻳَٰٓﺄَﻳُّﻬَﺎ ﭐﻟَّﺬِﻳﻦَ ﺀَﺍﻣَﻨُﻮﺍْ ﭐﺩۡﺧُﻠُﻮﺍْ ﻓِﻲ ﭐﻟﺴِّﻠۡﻢِ ﻛَﺎٓﻓَّﺔٗ ٢٠٨ ﴾ ]ﺍﻟﺒﻘﺮﺓ: ٢٠٨ [ “হে মুমিনগণ, তোমরা ইসলামে পূর্ণরূপে প্রবেশ কর”। [4] কুরআনুল কারিমের কতক বিধান গ্রহণ করে কতক বিধান ত্যাগকারীকে আল্লাহ তা‘আলা কাফের বলেছেন। ইরশাদ হচ্ছে: ﴿ ﺃَﻓَﺘُﺆۡﻣِﻨُﻮﻥَ ﺑِﺒَﻌۡﺾِ ﭐﻟۡﻜِﺘَٰﺐِ ﻭَﺗَﻜۡﻔُﺮُﻭﻥَ ﺑِﺒَﻌۡﺾٖۚ ﻓَﻤَﺎ ﺟَﺰَﺍٓﺀُ ﻣَﻦ ﻳَﻔۡﻌَﻞُ ﺫَٰﻟِﻚَ ﻣِﻨﻜُﻢۡ ﺇِﻟَّﺎ ﺧِﺰۡﻱٞ ﻓِﻲ ﭐﻟۡﺤَﻴَﻮٰﺓِ ﭐﻟﺪُّﻧۡﻴَﺎۖ ﻭَﻳَﻮۡﻡَ ﭐﻟۡﻘِﻴَٰﻤَﺔِ ﻳُﺮَﺩُّﻭﻥَ ﺇِﻟَﻰٰٓ ﺃَﺷَﺪِّ ﭐﻟۡﻌَﺬَﺍﺏِۗ ﻭَﻣَﺎ ﭐﻟﻠَّﻪُ ﺑِﻐَٰﻔِﻞٍ ﻋَﻤَّﺎ ﺗَﻌۡﻤَﻠُﻮﻥَ ٨٥ ﴾ ]ﺍﻟﺒﻘﺮﺓ: ٨٥ [ “তোমরা কি কিতাবের কিছু অংশে ঈমান রাখ আর কিছু অংশ অস্বীকার কর? সুতরাং তোমাদের মধ্যে যারা তা করে দুনিয়ার জীবনে লাঞ্ছনা ছাড়া তাদের কী প্রতিদান হতে পারে? আর কিয়ামতের দিনে তাদেরকে কঠিনতম আযাবে নিক্ষেপ করা হবে। আর তোমরা যা কর, আল্লাহ সে সম্পর্কে গাফেল নন”। [5] ইসলামে নিশ্চিতভাবে প্রমাণিত কোনো বিষয় যে প্রত্যাখ্যান করল, সে কাফের ও পথভ্রষ্ট, যদিও তার প্রত্যাখ্যান করা বিষয়ের পরিমাণ খুবকম ও সামান্য হয়। অতএব পার্থিব রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত ইসলামের সকল বিধান যে প্রত্যাখ্যান করে, সে কাফের বলার অপেক্ষা রাখে না, যেমন সেকুলারিজম বা ধর্মনিরপেক্ষতার অনুসারীরা। দ্বিতীয়ত ধর্মনিরপেক্ষ মতবাদের অনুসারীদের মাঝে ইসলাম বিনষ্টকারী কারণও রয়েছে, যেমন তারা বিশ্বাস করে নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের আদর্শ থেকে অন্য কারও আদর্শ উত্তম, অনুরূপ তার ফয়সালা থেকে অন্য কারও বিচার-ফয়সালা উত্তম। এ কারণেও তারা কাফের।[6] শায়খ আব্দুল আযীয ইবন বায রাহিমাহুল্লাহ বলেন: “ইসলাম বিনষ্টকারী চতুর্থ প্রকারের অন্তর্ভুক্ত ঐ ব্যক্তি, যে বিশ্বাস করল মানুষের তৈরি আইনি সংস্থাগুলো ইসলামী শরীয়তের বিধান থেকে উত্তম, অথবা বিশ্বাস করল যে, বিংশ শতাব্দীতে ইসলামী বিধান বাস্তবায়ন করা যুক্তিসঙ্গত নয়, অথবা ইসলাম প্রগতির অন্তরায়, অথবা বলল ইসলাম শুধু ব্যক্তি ও তার রবের মধ্যেই সীমাবদ্ধ, মানুষের জীবনের অন্য কোনো অংশে প্রবেশ করার অধিকার ইসলামের নেই”। [7] [1] আমরা সেকুলারিজম বা ধর্মনিরপেক্ষতাকে সরাসরি নাস্তিকতা ও পরোক্ষ নাস্তিকতা দু’ভাগে ভাগ করেছি, কারণ সাধারণ লোকেরা নাস্তিকতা বলতে আল্লাহর অস্তিত্ব অস্বীকার করাকেই বুঝায়, অথচ সেকুলারিজম বা তথাকথিত ধর্মনিরপেক্ষতাও এক প্রকার নাস্তিকতা, বরং নাস্তিকতার একটি শাখা হচ্ছে সেকুলারিজম বা তথাকথিত ধর্মনিরপেক্ষতা। [2] দ্বীনের সাথে পরোক্ষ নাস্তিকতা বা সেকুলারিজমের (ধর্মনিরপেক্ষতার) সংঘর্ষ অনেকের নিকট স্পষ্ট নয়, কারণ তাদের নিকট দ্বীন হচ্ছে ধর্মীয় কয়েকটি ইবাদতের নাম। তাই এ পরোক্ষ সেকুলারিজম (পরোক্ষ ধর্মনিরপেক্ষতা) যেহেতু মসজিদে সালাত আদায় ও বায়তুল্লাহ শরীফের হজকে নিষেধ করে না, তারা ধারণা করে নিয়েছে যে, ধর্মনিরপেক্ষতা দীন বিরোধী নয়। কিন্তু দীনকে যারা সঠিকভাবে বুঝেন, তারা অবশ্যই জানেন যে, সেকুলারিজম (তথাকথিত ধর্মনিরপেক্ষতা) দীনের সাথে সাংঘর্ষিক। যে মতবাদ মানুষের জীবনের সব শাখায় আল্লাহর শরীয়তকে নিষিদ্ধ ও হারাম ঘোষণা করেছে, তার চেয়ে স্পষ্ট ও কঠিন ইসলাম বিরোধী কোনো মতবাদ কি আছে? যদি তারা তা বুঝে! [3] কারণ তারা ভালো করেই জানে যে এরা এগুলো ব্যবহার করার মাধ্যমে মানুষকে ধোকা দিচ্ছে। [সম্পাদক] [4] সূরা বাকারা: (২০৮) [5] সূরা বাকারা: (৮৫) [6] দেখুন: শায়খ মুহাম্মদ ইবনে আব্দুল ওয়াহহাব রহ. রচিত ﻧﻮﺍﻗﺾ ﺍﻹﺳﻼﻡ গ্রন্থের ইসলাম বিনষ্টকারী চতুর্থ প্রকার। আরো দেখুন: শায়খ আব্দুল আযীয ইবন বায রহ. রচিত ﺍﻟﻌﻘﻴﺪﺓ ﺍﻟﺼﺤﻴﺤﺔ গ্রন্থের (২৭) নং পৃষ্ঠা। [7] দেখুন: শায়খ আব্দুল আযীয ইবন বায রহ. রচিত ﺍﻟﻌﻘﻴﺪﺓ ﺍﻟﺼﺤﻴﺤﺔ গ্রন্থের (২৭) নং পৃষ্ঠা। [a] ‘দুনিয়াবিমুখিতা’ বা ‘সংসারবিরাগী’ খৃস্ট ধর্মে একটি ইবাদতগত বিষয়। খৃস্টানগণ এ বিদ‘আতটি আবিস্কার করেছে। সুতরাং যখন তারা বলে, সেক্যুলার অর্থ, ‘সংসারবিরাগী নয়’ তখন তারা এর দ্বারা অর্থ নেয় যে, সে ইবাদতকারী নয়। মুসলিমরা মনে করে যে সংসারবিরাগী হওয়া বিদ‘আত। কিন্তু খৃস্টানরা এটাকে বিদ‘আত মনে করে না। তারা এটাকে তাদের সত্যিকার দ্বীন মনে করে। সুতরাং যখন কেউ বলবে যে, অমুক সংসারবিরাগী নয় তখন সে এর দ্বারা উদ্দেশ্য নেয় যে, লোকটি ইবাদতের ধার-ধারে না। ‘বিদ‘আত করে না’ এ অর্থ উদ্দেশ্য নেয় না। নাস্তিকতার উপর আভিধানিক বিশ্লেষণ ড. মুহাম্মদ যায়ন আল- হাদি রচিত ﻧﺸﺄﺓ ﺍﻟﻌﻠﻤﺎﻧﻴﺔ বা ‘সেকুলারিজম এর উৎপত্তি’ গ্রন্থ থেকে গ্রহণ করা হয়েছে। মূলঃ ধর্মনিরপেক্ষতা ও তার কুফল মুহাম্মদ শাকের আশ-শরীফ অনুবাদ : সানাউল্লাহ নজির আহমদ সম্পাদনা : ড. আবু বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া শেয়ার করি Facebook 1 Twitter Tumblr Email This entry was posted in কুফর. Bookmark the permalink. ফেসবুকে পেইজ সরল পথ 19.7 ফেইসবুক সামাজিক প্লাগইন পছন্দ করুন সরল পথ Bahar Sarkar এবং অন্যান্য 2 জন- এর সাথে জুলাই 16 এতে 10:03am TRUE TRUE ইমেইল গ্রহণ ইমেইলের মাধ্যমে সর্বশেষ আপডেট ও নতুন পোস্ট গ্রহণ করুন Join 243 other followers সাইন আপ আর্টিকেল সমূহ অডিও (1) অনুপ্রেরণাদায়ী ঘটনা (16) আখেরাত (8) আত্মশুদ্ধি (3) আল-কুর'আন (12) আসাবিয়াহ (1) ইতিহাস (11) ইবাদত (12) ইসলাম এবং প্রচলিত প্রথা (28) ইসলাম এবং প্রচলিত ভুল ধারনা (20) ইসলাম ও অন্যান্য ধর্ম (4) ইসলাম ও মুসলিম (12) ইসলাম ও সমাজ (42) ইসলাম সম্পর্কে অমুসলিমদের ২০টি প্রশ্নের জবাব (ডা: জাকির নায়েক এর লেকচার) (19) ঈমান (51) উপদেশ (51) কবীরা গুনাহ (1) কালোত্তীর্ণ রচনাবলী (5) কিতাবুত তাওহীদ (3) কিয়ামত (2) কুফর (3) কোরআন ও আধুনিক বিজ্ঞান (21) খোলাফায়ে রাশেদীন (3) গণতন্ত্র (2) গল্প সম্ভার (5) জান্নাত জাহান্নাম (4) জ্ঞানের মণি মুক্তো (9) তাওহীদ (20) তাওয়াক্কুল বা আল্লাহর উপর ভরসা (8) ধৈর্য্যধারণ (5) পিতামাতাদের জন্য (6) প্রশ্ন উত্তর (19) বই (17) বিদ'আত (18) বিবিধ (28) ব্যক্তিত্ব (1) ভিডিও গ্যালারি (16) মুসলিম উম্মাহ (6) রোযা (12) শিশু কিশোরদের জন্য (1) শুধুমাত্র নারীদের জন্য (7) সন্তানদের জন্য (2) সালাহ/নামায (3) স্বপ্ন (3) হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম (11) হাদীস (18) সর্বমোট 301,000 বার দেখা হয়েছে শীর্ষ পোস্ট ও পাতাগুলো লাইলাতুল কদর (প্রশ্নোত্তর) তাহাজ্জুদ নামাজ :বান্দাদের প্রতি আল্লাহ পাকের অসাধারণ একটি উপহার ডাউনলোড করুন আল-কোরআনের বাংলা অনুবাদ আপনার যে কোন জাভা সমর্থিত মোবাইলে আল-ওয়াহান; মুসলিমদের একটি ঘাতক ব্যাধি সূচীপত্র রামাদানের উপহার - হাজার মাস অপেক্ষা উত্তম রজনী 'লায়লাতুল কাদর' যে ব্যক্তি মানুষ হাসানোর জন্য মিথ্যা বলে তার জন্য ধ্বংস! রোজার মাকরুহ(অপছন্দনীয়) ও মুবাহ (বৈধ) বিষয়সমূহ রামাদানে পালিত কতিপয় ভ্রান্তিপূর্ণ কাজ ভিডিও
Tuesday, July 22, 2014
মাহমুদুর রহমানের কলাম:বল্গাহীন দূর্ণীতি
মন্তব্য প্রতিবেদন : বল্গাহীন দুর্নীতি ও ম্রিয়মাণ টিআইবি মাহমুদুর রহমান ২০০৯ সালের ডিসেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহ। সহকর্মী জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক এম. আবদুল্লাহ্ জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের কিছু কাগজপত্র হাতে খানিকটা উত্তেজিত হয়েই আমার অফিস কক্ষে এলেন। কাগজ-পত্র ঘেঁটে দেখলাম, পাঁচ মিলিয়ন ডলার (৪১ কোটি টাকা) ঘুষ গ্রহণের অভিযোগের তদন্ত নিয়ে জ্বালানি মন্ত্রণালয় এবং পেট্রোবাংলার মধ্যে চিঠি চালাচালি চলছে। অভিযোগের তীর জ্বালানি উপদেষ্টা ড. তৌফিক এলাহী চৌধুরী এবং প্রধানমন্ত্রী পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয়ের দিকে। জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা, প্রতিমন্ত্রী, সচিব এবং পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যানের মন্তব্যসহ আমি সংবাদটি ছাপার অনুমতি দিলাম। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার তখন দোর্দণ্ড প্রতাপে রাষ্ট্র চালাচ্ছে। জনগণের সঙ্গে সরকারের মধুচন্দ্রিমার উষ্ণতা তখনও পুরোপুরি শীতল হয়নি। বেশ ক’জন সহকর্মী সংবাদটি ছাপানোর বিপদ সম্পর্কে আমাকে সাবধান করেছিলেন। সত্য কথা বলা এবং লেখায় কারও সাবধানবাণীতে কর্ণপাত করা বরাবরই আমার স্বভাববিরুদ্ধ। ২০০৯ সালের ডিসেম্বরের ১৭ তারিখে মহাজোট আমলের প্রথম দুর্নীতি সংক্রান্ত সংবাদ আমার দেশ পত্রিকায় ছাপা হলো। খবর ছাপা হওয়া মাত্র মৌচাকে ঢিল পড়ল। জেলায় জেলায় আমার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের এবং কুশপুত্তলিকা দাহের প্রতিযোগিতা আরম্ভ হলো। আগে জানতাম, মানহানির মামলা কেবল সংক্ষুব্ধ ব্যক্তিরাই করতে পারেন এবং সেটাও একটিমাত্র মামলাই। ‘স্বাধীন’ বিচার বিভাগের জামানায় আমার জানাটা ভুল প্রমাণিত হতে সময় লাগল না। একে একে একই অভিযোগে ছাব্বিশটি মামলা দায়েরের বিশ্ব রেকর্ড তৈরি হলো। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের লিখিত নির্দেশে প্রশাসনের তাবত্ অংশ একসঙ্গে আমাকে জন্মের মতো শিক্ষা দেয়ার অতীব গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্রীয় কার্য সম্পাদনে ঝাঁপিয়ে পড়ল। তার পরের ইতিহাস দেশবাসী জানেন। আমার দেশ পত্রিকার প্রকাশনা বন্ধ এবং আমাকে জেলে পুরে সরকার এদেশে দুর্নীতিবিরোধী সব কণ্ঠ রোধ করতে চেয়েছিল। প্রশাসনের সঙ্গে তাল মিলিয়ে দেশের সর্বোচ্চ আদালতের মাননীয় বিচারপতিরাও আমাকে নজিরবিহীনভাবে সাজা দিয়ে উদাহরণ সৃষ্টি করতে চেয়েছিলেন। তারা আশা করেছিলেন আমার করুণ পরিণতি দেখার পর বাংলাদেশের আর কোনো নাগরিক অন্যায়ের প্রতিবাদে সাহসী হবে না। কিন্তু, তারা ইতিহাসের শিক্ষা ভুলে গিয়েছিলেন। সরকারের সাড়ে তিন বছর অন্তে আজ দেখা যাচ্ছে, আমি জেল খেটেছি বটে, তবে মহাজোট সরকারের যাবতীয় অপকর্মের কেচ্ছা সারা বিশ্বের গণমাধ্যমে আলোচনার খোরাকে পরিণত হয়েছে। এই সময়ের মধ্যে অবশ্য মন্ত্রী-এমপিরা জনগণের অর্থ নির্বিচারে লুণ্ঠন করে সম্পদের পাহাড় গড়লেও বাংলাদেশ দেউলিয়া হয়ে গেছে। বর্তমান অবস্থা অব্যাহত থাকলে কিছুদিনের মধ্যেই কেবল রাজস্ব ব্যয় মেটানোর জন্যই দেশ-বিদেশে ভিক্ষাপাত্র হাতে অর্থমন্ত্রীকে ঘুরে বেড়াতে হবে। ভবিষ্যত্ উন্নয়ন কর্মসূচির অর্থায়নের হাল পদ্মা সেতুর অবস্থা থেকেই সবার বোঝা উচিত। অনেক টানাপড়েনের পর গত শনিবার দুর্নীতির সুনির্দিষ্ট অভিযোগে বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশের সঙ্গে পদ্মা সেতু অর্থায়ন চুক্তি বাতিল করতে বলা চলে একরকম বাধ্যই হয়েছে। প্রায় এক বছর ধরে বিশ্বব্যাংকের কর্তাব্যক্তিরা পদ্মা সেতু প্রকল্পের পরামর্শক নিয়োগ প্রক্রিয়ায় দুর্নীতি তদন্তে বাংলাদেশ সরকারকে চাপ দিয়ে যাচ্ছিল। ওদিকে কানাডীয় পুলিশ সেদেশের বিশ্বখ্যাত পরামর্শক প্রতিষ্ঠান এসএনসি-লাভালিনের অফিসে অভিযান চালিয়ে এ সংক্রান্ত কাগজপত্র হাতে পাওয়ার পর বিশ্বব্যাংককে দুর্নীতির বিষয়ে সম্যক অবহিত করেছিল। সরকার বা বিশ্বব্যাংক কোনো পক্ষই সেই দুর্নীতিতে বাংলাদেশের কারা কারা জড়িত সে বিষয়ে আজ পর্যন্ত সরাসরি মুখ না খুললেও বিভিন্ন সূত্র থেকে শোনা যাচ্ছিল, কেবল সাবেক যোগাযোগমন্ত্রী আবুল হোসেনই নন, ঘুষ দাবি অথবা লেনদেন প্রক্রিয়ায় সরকারের আরও ওপরের ক্ষমতাশালীরাও জড়িত। ৩৮০ কোটি টাকা ব্যয়ে পরামর্শক নিয়োগে মোটামুটি দশ শতাংশ ঘুষের নাকি রফা হয়েছিল। ঘুষের এই হারকে ক্ষমতাসীনদের স্ট্যান্ডার্ড ধরে হিসেব কষলে এক পদ্মা সেতু থেকেই প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকা লুটপাটের বন্দোবস্ত করা হয়েছিল। বিএনপির দুর্নীতিবাজদের মতো আওয়ামী লীগ যে ছিটেফোঁটায় সন্তুষ্ট হয় না, সেটা এবারের সাড়ে তিন বছরের মেয়াদে তারা বহু ঘটনায় জনগণের কাছে প্রমাণ দিয়েছে। মাশাল্লাহ্ গলার জোরও যে আওয়ামী নেতাদের অনেক বেশি, সে বিষয়টি বাবু সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত প্রতিদিনই টেলিভিশনে দেখাচ্ছেন। বিএনপি আমলে জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী একেএম মোশাররফ হোসেন গ্যাস কোম্পানি নাইকো’র কাছ থেকে কেবল একটি গাড়ি মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত মন্ত্রী হিসেবে ব্যবহারের জন্য নিয়ে মন্ত্রিত্ব হারিয়েছিলেন। এর বাইরে এখন পর্যন্ত তার বিরুদ্ধে অতিরিক্ত অপ্রমাণিত অভিযোগ হলো, বিদেশ ভ্রমণকালে ওই কানাডীয় কোম্পানির কাছ থেকেই তিনি নাকি মাত্র ৫ হাজার ডলার (চার লাখ টাকা) রাহা খরচ হিসেবে গ্রহণ করেছিলেন। এতেই দুদকের লাফালাফি দেখে কে! অপরদিকে সুরঞ্জিত বাবুর এপিএস রাতদুপুরে ঘুষের ৭০ লাখ টাকা (দুষ্ট লোকে বলে টাকার প্রকৃত অংক কয়েক কোটি) মন্ত্রীর বাড়িতে পৌঁছে দেয়ার সময় গাড়ি চালকের সাহসিকতায় বমাল ধরা পড়লেও এককালের বাম নেতা এখনও জনগণের টাকায় মন্ত্রীর ফ্ল্যাগ উড়িয়ে চলেছেন। দুই কান কাটাদের আধিক্যের ফলেই রাজনীতির আজ এই হতশ্রী দশা। সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের সুপুত্র মাত্র ষাট হাজার টাকা নিজের পুঁজি নিয়ে (!) নগদ পাঁচ কোটি টাকায় টেলিকম লাইসেন্স নিয়েছেন। মন্ত্রীপুত্রের দাবি, লোকজন তাকে নাকি শুধু ভালোবেসে এই বিপুল অংকের অর্থ ঋণ দিয়েছে। সরকারের লেজুড়ের ভূমিকায় অবতীর্ণ ‘স্বাধীন’ দুদক সুরঞ্জিতপুত্রের সেই ভালোবাসার দাবি মেনে নিয়ে এরই মধ্যে মন্ত্রীকে সচ্চরিত্রের সার্টিফিকেট দেয়ার আয়োজনও প্রায় সম্পন্ন করেছে। একই দুদক অবশ্য এর আগে পদ্মা সেতু ইস্যুতেই মন্ত্রী আবুল হোসেনকেও সততার সার্টিফিকেট দিয়েছে। আমার পরিচিত এক অধ্যাপক চেয়ারম্যান গোলাম রহমানের দুদককে ‘আওয়ামী লীগের ধোপা’ নামকরণ করেছেন। ক্ষমতাসীন দলটির মন্ত্রী-এমপিদের গায়ে লেগে থাকা দুর্নীতির কালিমাগুলো পরিষ্কার করে তাদের সাদা করে দেয়াই নাকি প্রতিষ্ঠানটির অন্যতম প্রধান কাজ। অধ্যাপক মহোদয়ের রসবোধে আমি চমত্কৃত হয়েছি। পদ্মা সেতু প্রকল্প বাতিলের ঘোষণা দিয়ে বিশ্বব্যাংক যে আনুষ্ঠানিক বিবৃতি প্রকাশ করেছে, তার মর্মার্থ অর্থাত্ ইংরেজিতে যাকে between the line meaning বলা হয়ে থাকে সেটি বুঝতে পারলে বাংলাদেশের ভবিষ্যত্ ভেবে যে কোনো নাগরিক আতঙ্কিত বোধ করবেন। সেই বিবৃতি থেকে কয়েকটি লাইন এখানে উদ্ধৃত করছি : The world bank has credible evidence corroborated by a variety of sources which points to a high level corruption conspiracy... (বিশ্বব্যাংকের কাছে কয়েকটি উত্স দ্বারা সমর্থিত বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ রয়েছে যে উচ্চ পর্যায়ে দুর্নীতির ষড়যন্ত্র হয়েছে ...) The world bank provided evidence from two investigations to the Prime minister, as well as the minister of Finance and the Chairman of the Anti Corruption Commission of Bangladesh (ACC) in September 2011 and April 2012. (বিশ্বব্যাংক দুটি ভিন্ন তদন্তের মাধ্যমে প্রাপ্ত প্রমাণাদি প্রধানমন্ত্রী, অর্থমন্ত্রী ও দুদক চেয়ারম্যানের কাছে সেপ্টেম্বর ২০১১ এবং এপ্রিল ২০১২ তারিখে হস্তান্তর করে) In an effort to go the extra mile, we sent a high level team to Dhaka to fully explain the Bank’s position and receive the Government’s response. The response has been unsatisfactory. (বিশ্বব্যাংকের পক্ষ থেকে অতিরিক্ত ছাড় হিসেবে এক উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধিদল ব্যাংকের অবস্থান ব্যাখ্যা এবং সরকারের জবাব পাওয়ার জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়। সরকারের জবাব সন্তোষজনক হয়নি।) The World Bank cannot, should not, and will not turn a blind eye to evidence of corruption. We have both an ethical obligation and fiduciary responsibility to our shareholders and IDA donor countries. (দুর্নীতির প্রমাণ পাওয়ার পর বিশ্বব্যাংক চোখ বন্ধ করে থাকতে পারে না, থাকা উচিত নয় এবং থাকবে না। আমাদের নৈতিক দায়বদ্ধতা এবং ব্যাংকের অংশীদার ও আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সহযোগী রাষ্ট্রগুলোর কাছে আইনগত বাধ্যবাধকতা রয়েছে।) বিশ্বব্যাংকের আনুষ্ঠানিক বিবৃতি থেকে স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে যে, পদ্মা সেতু দুর্নীতিতে এ দেশের শাসকগোষ্ঠীর ওপর মহলের হাত রয়েছে এবং প্রায় এক বছর আগেই দুর্নীতির প্রমাণাদি প্রধানমন্ত্রী, অর্থমন্ত্রী ও দুদক চেয়ারম্যানের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। কাজেই পদ্মা চুক্তি অর্থায়ন বাতিলের দায় দুর্নীতিতে অভিযুক্ত ব্যক্তিবর্গসহ এই তিন ব্যক্তি এড়াতে পারেন না। এখন মুখরক্ষার জন্য সরকার বায়বীয় মালয়েশীয় বিনিয়োগ নিয়ে মিথ্যাচারে লিপ্ত হয়েছে। মালয়শিয়ার প্রস্তাব বাংলাদেশের জন্য প্রচণ্ড ব্যয়বহুল হওয়া সত্ত্বেও যোগাযোগমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের জাতিকে ধোঁকা দেয়ার জন্য দাবি করছেন যে, বিশ্বব্যাংক ঋণের চেয়ে পদ্মা সেতু প্রকল্পে মালয়েশীয় অর্থায়ন নাকি সাশ্রয়ী হবে। বাণীর রাজা নামে খ্যাত এই মন্ত্রী বাংলাদেশের জনগণকে সম্ভবত একেবারেই মূর্খ ও নির্বোধ বিবেচনা করেন। বিশ্বব্যাংকের যে কোনো ঋণে সর্বোচ্চ সুদের হার ০.৭৫ শতাংশ এবং সচরাচর ৩০ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে সেই ঋণ পরিশোধ করতে হয়। একমাত্র সরাসরি অনুদান ছাড়া অন্য কোনো সূত্র থেকে এর চেয়ে সুলভে ঋণ পাওয়ার অন্য কোনো উপায় আমার অন্তত জানা নেই। তথাকথিত মালয়েশীয় বিনিয়োগ সম্পর্কে এ পর্যন্ত পত্রপত্রিকায় যেসব তথ্য-উপাত্ত প্রকাশিত হয়েছে, তার ভিত্তিতে দেশের সব অর্থনীতিবিদই এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছেন যে, ওদের শর্ত মেনে নিলে পদ্মা সেতুর ব্যয় তিন থেকে চার গুণ বৃদ্ধি পাবে। এতদিন সততার ডঙ্কা বাজিয়ে ওবায়দুল কাদের অবশেষে স্বমূর্তিতে আবির্ভূত হয়েছেন। এদিকে দুর্নীতির বিরুদ্ধে জেহাদকারী প্রতিষ্ঠান ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) পদ্মা সেতু ইস্যুতে সবাইকে চমকে দিয়ে বাংলাদেশ সরকারের সহযোগীর ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে। তারা এক তাত্ক্ষণিক বিবৃতিতে শাসকগোষ্ঠীর বল্গাহীন দুর্নীতির সমালোচনার পরিবর্তে বিশ্বব্যাংককেই অপরাধীর কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির প্রধান নির্বাহী ড. ইফতেখারুজ্জামান এই প্রসঙ্গে বলেছেন, অর্থায়ন বন্ধ করে সরকার ও দেশের মানুষকে কষ্ট দেয়ার অধিকার বিশ্বব্যাংকের নেই। টিআইবি পদ্মা সেতু প্রকল্পে দুর্নীতির একটি বিচার বিভাগীয় তদন্তেরও দাবি জানিয়েছে। আশ্চর্যের বিষয় হলো, এই টিআইবিই গত বছর তাদের এক প্রতিবেদনে বিচার বিভাগকে বাংলাদেশের সর্বাপেক্ষা দুর্নীতিগ্রস্ত প্রতিষ্ঠানের ‘মর্যাদা’ দান করেছিল। সর্বাধিক দুর্নীতিগ্রস্ত প্রতিষ্ঠানের লোকজন দিয়ে দুর্নীতি তদন্তের দাবির চেয়ে স্ববিরোধী প্রস্তাব আর কী হতে পারে? আর বিচার বিভাগের স্বাধীনতা? মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তাদের এ বছরের বার্ষিক প্রতিবেদনে বাংলাদেশ বিচার বিভাগের যাবতীয় দুর্বলতা সম্পর্কে বিশদ আলোচনা করেছে। মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্ট বলেছে, বাংলাদেশের বিচার বিভাগে রাজনৈতিক দলীয়করণ এমন ভয়াবহ পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, সেখানে বিরোধী দলের লোকজন কিংবা ভিন্ন মতাবলম্বীদের সুবিচার প্রাপ্তির আর কোনো পরিবেশ অবশিষ্ট নেই। এহেন বিচার বিভাগীয় তদন্তের পরিণাম স্বাধীন দুদকের তদন্তের চাইতে ভিন্নতর কিছু হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই। মাঝখান থেকে মন্ত্রী আবুল হোসেনের ফুলের মতো চরিত্রের আরও একটি সনদপ্রাপ্তির সুব্যবস্থা হয়ে যাবে। দেশের অধিকাংশ নাগরিক যখন সরকারের দুর্নীতির বহরে লজ্জায় অধোবদন, সেই সময় বিভ্রান্তিকর সব প্রস্তাব উত্থাপন করে টিআইবি তাদের বিশ্বাসযোগ্যতাকেই প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। অবশ্য টিআইবি’র বর্তমান ট্রাস্টি বোর্ড সম্পর্কে ধারণা থাকলে তাদের বিবৃতি অথবা দুর্নীতিপরায়ণ মহাজোট সরকারের ত্রাতার ভূমিকায় প্রতিষ্ঠানটির প্রধান নির্বাহী ড. ইফতেখারুজ্জামানের অবতীর্ণ হওয়ার পেছনের কারণ বুঝে ফেলা শক্ত নয়। ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের বর্তমান চেয়ারম্যান সুলতানা কামাল চক্রবর্তী আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অত্যন্ত ঘনিষ্ঠজন হিসেবেই সারাদেশে সুপরিচিত। তিনি ২০০৬ সালে আওয়ামী লীগের পছন্দের ব্যক্তিরূপে ড. ইয়াজউদ্দিনের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা হয়েছিলেন। পরবর্তীকালে সেই সরকার থেকে পদত্যাগকারী চারজন উপদেষ্টার অন্যতম ছিলেন সুলতানা কামাল চক্রবর্তী। সেই পদত্যাগের পথ ধরেই এক এগারোর সামরিক অভ্যুত্থান সংঘটিত হয়েছিল। প্রতিষ্ঠানটির ট্রাস্টি বোর্ডের আর একজন প্রভাবশালী সদস্যের নাম অ্যাডভোকেট তৌফিক নেওয়াজ। বাংলাদেশের এই বিশিষ্ট আইনজীবীর আরও একটি পরিচয় হলো, তিনি আমাদের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মিজ দীপু মনির স্বামী। আপন স্ত্রী যে সরকারে পররাষ্ট্রমন্ত্রী, সেই সরকারের দুর্নীতির বিষয়ে তার ভূমিকা কী হতে পারে সেটি নিশ্চয়ই বলার অপেক্ষা রাখে না। একই ট্রাস্টি বোর্ডে আছেন সাবেক চিফ ইলেকশন কমিশনার ড. শামসুল হুদা। ২০০৮ সালের ডিজিটাল নির্বাচনের এই প্রধান ব্যক্তি মইনউদ্দিন জামানায় বিএনপিকে বিভক্ত করার ‘মহত্’ কাজে সর্বশক্তি নিয়োগ করেছিলেন। সাবেক এই আমলা প্রধান নির্বাচন কমিশনারের দায়িত্ব পালনকালে চারদলীয় জোট সরকারের প্রতি গণমাধ্যমের কাছে অসন্তোষ প্রকাশ করে বলেছিলেন যে, বেগম খালেদা জিয়ার সরকার তার মেধার যথোপযুক্ত মূল্যায়ন করেনি। এহেন একজন দলবাজ টিআইবিতে থেকে যে আওয়ামী লীগের স্বার্থের পক্ষেই প্রভাব খাটানোর চেষ্টা করবেন, সেটা বুঝতে কারও সমস্যা হওয়ার কথা নয়। টিআইবি’র বর্তমান ট্রাস্টি বোর্ডের সেক্রেটারি জেনারেল, বিশিষ্ট কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেনের আওয়ামী লীগ প্রীতির ব্যাপারটিও শিক্ষিত জনগোষ্ঠীর মোটামুটি জানা রয়েছে। এই ক’জন ছাড়াও প্রতিষ্ঠানটির ট্রাস্টি বোর্ডে অন্য যেসব বিশিষ্ট ব্যক্তি রয়েছেন, তাদের মধ্যেও আওয়ামীপন্থীদের সংখ্যাধিক্য চোখে পড়ার মতো। সুতরাং বিএনপি সরকারের সময় টিআইবি দুর্নীতির বিরুদ্ধে যতখানি আদর্শিক ও নৈতিক অবস্থান প্রদর্শন করেছিল, শেখ হাসিনার প্রধানমন্ত্রিত্বকালে সেটি তাদের কাছে আশা করাটাই বোকামি। তাছাড়া স্মরণে রাখা দরকার, টিআইবিতে এখনও ড. মোজাফফর আহমেদের মতো ব্যক্তির শূন্যতা পূরণ হয়নি। বাংলাদেশের সুশীল (?) সমাজের এক বিরাট গোষ্ঠীর নিরপেক্ষতা প্রশ্নবিদ্ধ হওয়ার কারণেই এদেশে সিভিল সোসাইটি মুভমেন্ট পাশ্চাত্যের মতো বিকশিত হতে পারেনি। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে পশ্চিমা রাষ্ট্রগুলো বাংলাদেশের রাজনীতিতে সুশীল (?) সমাজকে প্রতিষ্ঠিত করার প্রাণান্তকর প্রচেষ্টা চালালেও এই কারণেই আজ পর্যন্ত তাদের প্রচেষ্টা দেশের সাধারণ নাগরিকের কাছে গ্রহণযোগ্যতা পায়নি। পদ্মা সেতু দুর্নীতি নিয়ে টিআইবি’র এবারের বিতর্কিত অবস্থান কেবল সুশীল (?) সমাজকেই যে নতুন করে প্রশ্নবিদ্ধ করবে তাই নয়, এদেশে দুর্নীতির বিরুদ্ধে সাধারণ নাগরিকের স্বতঃস্ফূর্ত লড়াইকেও দুর্বল করে ফেলবে। আওয়ামী লীগ সরকারে থাকলে যদি টিআইবি’র দুর্নীতির বিরুদ্ধে অবস্থান নিতে সমস্যা হয়, তাহলে সবিনয়ে অন্তত তাদেরকে নীরব থাকতেই অনুরোধ জানাব। মহাজোট সরকারের গত সাড়ে তিন বছরের অপশাসনকালে টিআইবিকে অধিকাংশ ক্ষেত্রে আগের তুলনায় নিষ্ক্রিয় ঠেকেছে। বর্তমান সরকারের মেয়াদের বাকি দেড় বছরও তারা একটি দীর্ঘ শীতকালীন নিদ্রা (যরনবত্হধঃরড়হ) দিলে সবারই মঙ্গল হবে। বাংলাদেশের সচেতন দেশপ্রেমিক জনগোষ্ঠী দুর্নীতিপরায়ণ শাসকশ্রেণীর বিরুদ্ধে তাদের লড়াইয়ে টিআইবি মার্কা প্রতিষ্ঠানের সহযোগিতা ছাড়াই ইন্শাআল্লাহ বিজয় লাভ করবে। ই মেইল : admahmudrahman@ gmail.com
Monday, July 21, 2014
এলিয়েন বলতে কিছুই নেই
দৃশ্যপট→১ _______ বিজ্ঞানীরা বহুদিন যাবত্ পৃথিবীতে তাদের আবিষ্কার দিয়ে রাজত্ব করে যাচ্ছেন!থিওরির জনক হচ্ছেন। জ্ঞান বিজ্ঞানে মানুষকে উচ্চস্তরের করে তুলছে। তারা যেমন রোগ নিরাময় ঔষধ আবিষ্কার করছেন ঠিক তেমনি ব্যবসা করার জন্য আবার বড় বড় প্রাণঘাতি রোগ ও মানুষের মাঝে ছড়িয়ে দিয়েছেন। আপনারা জানলে আশ্চর্য হবেন যে HIV ভাইরাসটিও বিজ্ঞানীদের আবিষ্কার! আর এটি ছিল বানরের রোগ আর এই বানরের ভাইরাসটি তারা ভ্যাকসিনের মাধ্যমে আফ্রিকা শিশুদের মধ্যে ছড়িয়ে দিয়েছিল।আর এর মূল কারন ছিল কালোদের প্রতি সাদা চামড়ার বিদ্বেষ। আফ্রিকান ঐ শিশুদের ভেতর ঐ রোগ ছড়িয়ে দেওয়ার আরো একটি কারন হল "ব্যবসা"! HIV ভাইরাস ছড়ানোর মাধ্যমে বিজ্ঞানীদের কি ব্যবসা ছিল তা এই প্রবন্ধের শেষের দিকে আলোচনা করা হবে। হ্যা যা বলছিলাম,বিজ্ঞানীরা পৃথিবীর বুকে বহু কিছু আবিষ্কার করেছেন,বহু থিওরির জনক হয়েছেন ,এক কথায় পৃথিবীটাকে মানুষের হাতের মুঠোয় এনে দিয়েছেন। মানুষ এখন আকাশে পাড়ি জমায়,বিমানে মেঘের দেশে ভেসে বেড়ায়,চাঁদে উঠে ,এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তের খবর নেয় ,ইন্টারনেট এসে পৃথিবীটাকে আরো সহজ করে দিয়েছে।এই আমি যে যন্ত্রটা দিয়ে প্রবন্ধটা লিখছি এটাও কিন্তু একজন বিজ্ঞানীরই অবদান!রোবট,মোবাইল,কম্পিউটার ,ল্যাপটপ,প্রিন্ট মেশিন,ফ্রিজ ,টিভি,স্যাটেলাইট,বেতার,পরমানু শক্তি যা বলেন সবই তো বিজ্ঞানীরাই আমাদের উপহার দিয়েছেন। *বিজ্ঞানীরা যেমন পৃথিবীটাকে মানুষের হাতের মুঠোয় করে দিয়েছেন,মানুষের পরিপূর্ণ জ্ঞানঅর্জনে সাহায্য করেছেন ঠিক তদ্রুপ মানুষকে বোকা বানিয়েছেন!হ্যা সেটা এলিয়েন! এলিয়েনে বিশ্বাস আমাদের তরুণ প্রজন্মের ছেলেদের মাথায় এমন ভাবে গেঁথেছেন যে তা আর উপড়ে ফেলা সম্ভব নও। আদতে এলিয়েন বলতে কিছু এই বিশ্ব ব্রহ্মান্ডে নাই।যে গুলো বিজ্ঞানীরা এলিয়েন নামে অভিহিত করছে ওগুলো আসলে জ্বীন।
→এখন আপনি বলতে পারেন,তোমার একথার যৌক্তিকতা কি? কিন্তু আপনার মনে কখনো এ প্রশ্ন আসবেনা, বিজ্ঞানীরা যে এলিয়েনের কথা বলছে তা কি আদতেই সত্য? →বিজ্ঞানীরা যে ফ্লায়িং সসার গুলোর কথা বলছে সেটা কি সত্যিই নাকি গুজব? →বিজ্ঞানীরা যে মঙ্গল গ্রহে ইদুর দেখেছে সেটা কি সত্যিই?
না আপনি সে কথা নিজেকে একটিবারের জন্য ও প্রশ্ন করেনি। কেন করেননি? উত্তর একটাই আপনি বিজ্ঞানীদের প্রতি অন্ধ বিশ্বাসী ।আর আপনার এই দুর্বলতার সুযোগ নিয়েই বিজ্ঞানীরা আপনাকে বোকা বানাচ্ছে! *অনেক দিন আগে আমারব্লগ.কম এ একটি প্রবন্ধ পড়েছিলাম। যেখানে লেখক বলেছেন,হাজার হাজার বছর আগে এলিয়েনরা পৃথিবীতে আসত এবং মানুষকে বোকা বানিয়ে তাদের ঈশ্বর সাজতেন।মাঝে মাঝে এলিয়েনের রাজা বাদশাহ্রা তাদের দূত কে পাঠাতেন যাদের কিনা মানুষ ফেরেশতা ভাবতেন।আর মানুষকে তারাই বলে দিতেন যে সৃষ্টিকর্তা উপরে থাকেন,তাইতো মসজিদ মন্দিরগুলোর উপরের দিকে মিনার তৈরী। »আসলে লেখকের যে মাথায় গণ্ডগোল আছে তা তার প্রবন্ধ বলে দেয়!কেননা প্রাচীনকাল থেকেই মানুষ ইমারত গুলো উর্ধ্বমুখি ভাবে বানানো হতো রোদ বৃষ্টি থেকে নিজেদের বাঁচানোর জন্য।আর মিনারগুলো তৈরী করা হতো ইমারতের সৌন্দর্য আরো বাড়িয়ে তোলার জন্য। বর্তমানে যে ইমারত গুলো বানানো হয় তাও কিন্তু উর্ধ্বমুখি।বর্তমানের মানুষগুলো কিন্তু জ্ঞানী তারা কিন্তু এলিয়েনের কথায় ইমারত উর্ধ্বমুখি বানায়। আর যাদের লেখক এলিয়েন বলেছেন তারা কিন্তু এলিয়েন নও তারা ছিল দুষ্টু জ্বীন যারা কিনা প্যাগানদের ধোঁকা দিয়ে মূর্তিপূজা করাতো! বর্তমানে হিন্দুধর্মাবলম্বীরা এখনো ঐ মৃত জ্বীনদেরই পূজা করে। আপনি জ্বীন জাতীর ইতিহাস পড়লে জানবেন যে বর্তমান বিজ্ঞানীরা এলিয়েনদের যে চেহারার বর্ণনা দিচ্ছেন তার সাথে ঐ দুষ্টু জ্বীনদের চেহারার সাদৃশ আছে। ঐ দুষ্টু জ্বীনরা একেকটা ছিল একেক রকম,কোনটা লম্বাটে অথবা বড় মাথার,কোনটা মানুষ অথবা কুমির আকৃতির আবার কোনটা ছিল হাতির মত শূর ওয়ালা। আসুন এক নজরে বিজ্ঞানীদের আবিষ্কৃত এলিয়েনদের সম্বন্ধে কিছু জেনে নিই, বিজ্ঞানীদের মতে এলিয়েনস ৩ প্রকার এবং ৩ চেহারার যথা, ১/গ্রে এলিয়েন।(দেখতে অনেকটা গুইসাপের মতো,পিঠে খাঁজ কাঁটা খাঁজ কাঁটা আছে,বিজ্ঞানীদের দাবী এরা মানুষের ক্ষতি করে,এরা নাকি মানুষ গুম ও করে! ২/র্য্যাপ্টিলিয়ানস এলিয়েন।(দেখতে অনেকটা ধাতব বাক্সের মতো অথবা মাথাটা রোবটের মতো।বিজ্ঞানীদের দাবী এরাও মানুষকে গুম করে ৩/হ্যিউম্যান টাইপ।(দেখতে ঠিক মানুষের মতো তবে বিজ্ঞানীদের দাবী এরা মানুষের থেকে অনেক ফর্সা হয়ে থাকে এবং এরাই নাকি একমাত্র এলিয়েন যারা মানুষের কোন ক্ষতি করেনা।) জেনে নিলেন তো তো এলিয়েনদের সম্বন্ধে কিছুটা? ছোট বেলায় আমি আবার ঠাকুর মার ঝুলি দেখতে পছন্দ করতাম। শাকচুন্নির একটা গল্প ছিল যেটা দেখে আমি ভয় পেতাম প্রচুর! শাকচুন্নির প্রতি আমার এমন বিশ্বাস জন্মেছিল যেটা ক্লাশ এইট পর্যন্ত কাজ করেছে মাথায়। পরে যখন মাথায় একটু জ্ঞানবুদ্ধি হলো তখন নিজের প্রতি একটু লজ্জা হল আমার হায় হায় কল্পনার গল্পটা কিভাবেইনা আমার মাথায় এঁটে ছিল !এখনো হাসি পায় আমার সে কথা মনে পরলে। এলিয়েন বিশ্বাসটাও তদ্রুপ একবার মাথায় ঢুকে গেলে আর রক্ষে নেই।আপনার হাজার কিলোর মগজটাকে ধোলাই করে ছেড়ে দিবে তাতে কোন ভূল নেই। আর যদি এটাকে মাথা থেকে ঝাটা মেরে ফেলে দিতে পারেন তবে পাবেন রক্ষা। নিজে নিজেকে মুক্ত চিন্তার ধারক বাহক ভাবেন আবার নিজেই মনে মনে বিজ্ঞানীদের তৈরী এলিয়েনের উপর পূর্ণ অন্ধবিশ্বাস রাখেন তো আপনাকে কি আমি মুক্ত চিন্তার ভাবতে পারি? না কখনোই না। বিজ্ঞানীদের দাবী তারা মহাকাশে এলিয়েন জান ইউ এফ ও (UFO)দেখেছেন যাতে তাদের এলিয়েনদের প্রতি পূর্ণ আস্থা এসেছেন! (বিজ্ঞানীদের ছবিগুলোতে UFO দেখতে মেঘের মতো তবে লালচে) চলবে.....
Friday, July 18, 2014
মানবতা যখন মাদকাশক্ত
উপরের ছবিটা দেখে দয়ামায়াহীন লোকের ও একটু হলে হৃদয়টা কেঁপে উঠবে। উপরের শিশুটা ইসরাইলের বিমান হামলায় শহীদ হয়েছে। ঘরের ভেতর বোধ হয় একাই ছিল বেচারি কন্যা শিশুটি আর শেষে পোহাতে হল পৃথিবীর জঘন্যতম মৃত যন্ত্রনা। এই শিশুটির পিতা অথবা মাতা যদি কেউ বেঁচে থাকে তবে তার হৃদয়ের অবস্থা কেমন হবে? তারা কি সহ্য করতে পারবেন তার নিজ শিশু কন্যার এমন দৃশ্য? এমন দৃশ্য যদি ফিলিস্তিনের কোন সেনা ইসরাইলের কোন শিশুকে করত তবে তাদের হাজারটা ঘৃণা জানাতাম আমরা। শিশুরা নিষ্পাপ মাছুম তাদেরকে হত্যা করাটা কোন ধর্ম সাপোর্ট দেয়না।সাপোর্ট দেয়না কোন সুস্থ মষ্তিষ্কের মানুষ। এপর্যন্ত খবর পেলাম প্রায় ২০০এর উপর মানুষ শহীদ হয়েছেন যাদের কিনা অধিকাংশই নারী ও শিশু। আহত হয়েছে দেড় হাজারের উপরে তাদের মধ্যেও অধিকাংশ নারী ও শিশু।আর অপহৃত যা হয়েছে তার ও সিংহ ভাগ শিশু। জাতিসংঘের একটি নথিপত্রে লেখা আছে,শিশু নির্যাতন এবং নারী নির্যাতন উভয়ই বন্ধ করতে হবে। আবার প্রত্যেকটা দেশেই নারী ও শিশু নির্যাতন বন্ধের জন্য সংগ্রাম করে যাচ্ছে। আপনি আমাদের দেশে দেখুন নারী ও শিশু নির্যাতনের এমন কঠিনতর আইন যে সর্বোচ্চ সাজা যাবজ্জীবন কারাদন্ড! আবার জাতীসংঘ থেকে কড়াভাবে বলা হয়েছে,প্রত্যেকটা দেশে নারী ও শিশু নির্যাতন অচীরেই বন্ধ করতে হবে। যেই জাতিসংঘ নারী ও শিশু নির্যাতনের বিপক্ষে এত্ত কথা বলে সেই জাতিসংঘই আজ ফিলিস্তিনের নারী ও শিশু হত্যায় নিরব ভূমিকা পালন করছে। আমি আগেই বলেছিলাম Humanrightএর Humanity হারিয়ে গিয়েছে ,Save The Children এর Humanity হারিয়ে গিয়েছে। Israeli strike 'kills Palestinian!Where is the lost Humanity? প্রত্যেক শিশুই নিষ্পাপ।এবং একেক জন একেকটি ফুল। ফিলিস্তিনের শিশুরা ফিলিস্তিনের ফুল আর ফিলিস্তিনের এই ফুলদের অকালে ঝড়িয়ে দিচ্ছে কিছু হায়েনা। আমরা জানি হিটলার হত্যা করেছিল ৬০লক্ষ ইহুদিকে যার জন্য কিনা তাকে পৃথিবীর সর্ব নিকৃষ্ট মানুষ হিসেবে আখ্যা দেয়া হয়।
Tuesday, July 15, 2014
গাজাকে মুক্ত হস্তে দান করুন Donate For Gaza Strip !!!!
Donate For Gaza Strip ! ফিলিস্তিনের গাজার নির্যাতিত মুসলিমদের সহায়তা করার জন্য কিছু ভাই রাত দিন অন লাইনে পড়ে আছেন। ফেইসবুকে ইভেন্ট খোলা হয়েছে।তাদের এই প্রচেষ্টা নিঃসন্দেহে প্রশংসার দাবিদার। ফিলিস্তিনের মুসিলমদের কঠিন দিনে আমরা বাংলাদেশ থেকে কিছু সহায়তা যদি যথাযথ কর্তৃপক্ষ বরাবর পাঠাতে সক্ষম হই তাহলে এতে ক্ষতির কি আছে ? টাকা পাঠানোর ঠিকানা: গাজাকে মুক্তহস্তে দান করুন। Name of account: MUSLIM AID-DONATION AC Sort code: 30-94-21 Account number: 01436818 Iban (outside UK): GB25 LOYD 3094 2101 436818 অথবা তাদের ওয়েব সাইটে যান এখান থেকে অথবা, এখান থেকে —হে মুসলিম ভাই সকল দয়করে এই নিরীহ মুসলমানদের পাশে দাঁড়ান। কিয়ামতে এর প্রতিদান পাবেন লক্ষ ,লক্ষ,কোটি ,কোটি গুন।
Subscribe to:
Posts (Atom)