Pages

Saturday, July 12, 2014

মাহমুদুর রহমানের কলাম

mamdur-sml.jpg মন্তব্য প্রতিবেদন : গুমরাজ্যে প্রত্যাবর্তন মাহমুদুর রহমান চব্বিশটি দিন লন্ডনে চিকিত্সা শেষে গত শুক্রবার দেশে ফিরেছি। ডান চোয়ালের একটা হাড়ে ক্ষয় দেখা দিয়েছিল, ডাক্তারি পরিভাষায় যার নাম osteoarthritis। আমার শরীরে হাড়ের বিভিন্ন স্থানে সমস্যা রয়েছে। কোমরে osteoporosis, কাঁধে spondilitis এবং চোয়ালে osteoarthritis। ২০১০ এবং ২০১১ সালে দশ মাসের জেল জীবনের কষ্ট ও চিকিত্সার অভাবে এই সমস্যাগুলো জটিলতর হয়েছে। মুক্তি পাওয়ার মাস তিনেক বাদেই লক্ষ্য করলাম মুখের ডান দিক দিয়ে খাদ্য চিবুতে কষ্ট হচ্ছে, আনুষঙ্গিক উপসর্গ হিসেবে ডান কানে তীব্র ব্যথা। ঢাকা, ব্যাংকক, সিঙ্গাপুর ঘোরাঘুরি করে রোগটা ধরা যাচ্ছিল না। শেষ পর্যন্ত লন্ডন যেতেই মনস্থ করলাম। দুর্ভাবনা ছিল শেখ হাসিনার ‘গণতান্ত্রিক’ সরকার যেতে দেয় কীনা। সংশয় নিয়েই ১০ এপ্রিল বিমানবন্দরে পৌঁছে সোজা চলে গে লাম ওসি’র কক্ষে। সঙ্গের কাগজপত্র ভদ্রলোকের হাতে দিয়ে বললাম, ওপর খোঁজখবর নিয়ে সিদ্ধান্ত জানাতে। সস্ত্রীক অপেক্ষা করতে লাগলাম ওসি’র অফিসকক্ষের বাইরে আম যাত্রীদের আসনে বসে। এবার অবশ্য আমার অতিরিক্ত একটা সুবিধা ছিল। যুক্তরাজ্যে যাওয়া এবং সেখান থেকে আমার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন করার ব্যাপারে উচ্চ আদালতের সুস্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে। সম্ভবত সেই কাগজের জোরে আধঘণ্টার মধ্যেই ছাড়পত্র মিলল। অবশ্য এ মাসের ৪ তারিখে ফেরার পথে বিমানবন্দরে নতুন বিড়ম্বনার মুখোমুখি হয়েছিলাম। তবে সে ঘটনা লেখার শেষে বর্ণনা করব। ১৩ তারিখে ডাক্তার পরীক্ষা করে হাড়ের অতিরিক্ত ক্ষয়ের বিষয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করে অধিকতর পরীক্ষার জন্য CT scan করতে পাঠালেন। পরীক্ষায় ধরা পড়ল, হাড় অনেকটাই ক্ষয়ে গেছে। অস্ত্রোপচার ছাড়া উপায় নেই। ২৩ এপ্রিল অস্ত্রোপচারের আগেই লন্ডনে বসে দুর্মুখ রাজনীতিবিদ সুরঞ্জিত বাবুর ঘুষ খাওয়া আর অনুজপ্রতিম রাজনীতিক ইলিয়াস আলীর গুমের দুঃসংবাদ পেলাম। বাংলাদেশের ইতিহাসের সবচেয়ে দুর্নীতিপরায়ণ সরকারের রেলমন্ত্রীর ঘুষ নেয়ার সংবাদে মোটেও অবাক হইনি। বরঞ্চ ঘটনাটি আমার কাছে ক্ষমতাসীনদের সাড়ে তিন বছরব্যাপী দুর্নীতির বিশাল হিমশৈলের সামান্য দৃশ্যমান চূড়ার (tip of the iceberg) মতোই ঠেকেছে। সাতসমুদ্র তেরো নদীর ওপার থেকে আমি কেবল মন্ত্রীর গাড়ি চালক আলী আজমকে সশ্রদ্ধ সালাম জানিয়েছি। সেই গভীর রাতে সে সাহস করে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পিলখানার বিডিআর সদর দফতরের ভেতরে গাড়ি ঢুকিয়ে দিয়ে চোর মন্ত্রীর সহযোগীদেরসহ বমাল ধরা পড়ার ব্যবস্থা করেছে। কোনো সভ্য রাষ্ট্র হলে আলী আজমকে নিয়ে এতদিনে হৈ চৈ পড়ে যেত। রাষ্ট্র ও সমাজ তাকে জাতীয় বীরের মর্যাদায় অভিষিক্ত করত। কিন্তু, আমাদের হতভাগ্য মাতৃভূমি বাংলাদেশের রন্ধ্রে রন্ধ্রে দুর্নীতি, অন্যায়, অবিচার ঘুণপোকার মতো প্রবেশ করেছে। তাই এই রাষ্ট্রে ক্ষমতাধর প্রতিবেশীর চাপে দুর্নীতিবাজ মন্ত্রী বহাল তবিয়তে থাকেন। জনগণের করের টাকায় নির্লজ্জের মতো বেতন-ভাতা গ্রহণ করেন। মন্ত্রীর দুর্নীতিলব্ধ অর্থ দিয়ে তার পুত্র বুক ফুলিয়ে টেলিকম লাইসেন্স ক্রয় করে। আর অসীম সাহসী, দরিদ্র গাড়ি চালক গুম হয়ে যায়। এমন নির্যাতক রাষ্ট্র ব্যবস্থা টিকে থাকতে পারে না। তাই আমি এই ব্যবস্থার অবধারিত ধ্বংস এবং অন্যায় সহ্যকারী, ভীরু জনগণের অনাগত দুঃখ-কষ্টের পানে চেয়ে থাকি। সুরঞ্জিত বাবুদের মতো বহুরূপী, চাপাসর্বস্ব, বিবেক বিবর্জিত রাজনীতিবিদদের নিয়ে লিখে সময় এবং কাগজ নষ্ট করার কোনো অর্থ হয় না। এই অসুস্থ শরীরে আমি প্রধানত ইলিয়াস আলীর গুম এবং গণতন্ত্রের ছদ্মাবরণে শেখ হাসিনার ফ্যাসিস্ট সরকারের অপকর্মের প্রতিবাদ করতেই কষ্ট করে লেখার টেবিলে বসেছি। এপ্রিলের ১০ তারিখে লন্ডন রওনা হয়েছিলাম। তার মাত্র দিন দুয়েক আগেই ইলিয়াস আমার দেশ কার্যালয়ে গল্প করতে এসেছিল। সময়- সুযোগ পেলেই ইলিয়াস আমার কাছে আসত। বিএনপি’র দলীয় রাজনীতি, ভারতীয় আগ্রাসন, টিপাইমুখ বাঁধ ইত্যাদি বিষয় নিয়ে সেদিনও আমরা দীর্ঘক্ষণ আলাপ করেছিলাম। এক সময়ের তুখোড় ছাত্রনেতাটিকে যারা কাছ থেকে চেনেন তাদেরই ওর খানিকটা বেপরোয়া, শিশুসুলভ স্বভাবটিকে জানার কথা। নানা বিষয় নিয়ে হৈচৈ করত, জিয়া পরিবার ব্যতীত দলের অন্যান্য সিনিয়র নেতৃবৃন্দকে বড় একটা তোয়াজ করতে চাইত না। কিন্তু মনটা বড় ভালো, জাতীয়তাবাদী আদর্শের একজন নিখাদ সৈনিক। আমাদের গল্পের মাঝখানে হঠাত্ করে প্রবীণ প্রকৌশলী, পেশাজীবী আন্দোলনে আমার দীর্ঘদিনের সহকর্মী আনহ আখতার হোসেনও যোগ দিয়েছিলেন। ইলিয়াস তার নানারকম বিপদের আশঙ্কার কথা আমাকে বলেছিল। সাম্রাজ্যবাদী ভারত এবং তাদের পদলেহী ক্ষমতাসীন মহল ইলিয়াস আলীর সাংগঠনিক ক্ষমতা এবং বৃহত্তর সিলেট অঞ্চলে তার বিপুল জনপ্রিয়তায় ঈর্ষান্বিত ছিল। সাইফুর রহমানের মতো বিশাল ব্যক্তিত্বের অধিকারী, একজন প্রাজ্ঞ রাজনীতিকের দুর্ভাগ্যজনক মৃত্যুর পর সিলেটের রাজনীতিতে জাতীয়তাবাদী রাজন ীতির যে শূন্যতার সৃষ্টি হয়েছিল, ইলিয়াস তা ধীরে ধীরে পূর্ণ করে আনছিল। বাংলাদেশ সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদ ও সিলেটবাসীর ব্যানারে ভারতীয় ভূমি আগ্রাসনের বিরুদ্ধে সিলেট থেকে জৈন্তাপুর সহস্রাধিক যানবাহন নিয়ে আমরা গত বছর যে বিশাল লংমার্চ করেছিলাম, তার সার্বিক তত্ত্বাবধান করেছিল ইলিয়াস। আজ ওর অন্তর্ধান নিয়ে লিখতে বসে সেদিনের একটা ঘটনার কথা বড় মনে পড়ছে। আমাদের গাড়িবহর সীমান্তের একেবারে পাশ ঘেঁষে জৈন্তাপুরের দিকে এগিয়ে চলেছে, সীমান্তের ওপারে ভারতীয় সীমান্তরক্ষীবাহিনী বিএসএফের ক্যাম্পগুলো পরিষ্কার দেখা যাচ্ছে। গাড়িবহরের একেবারে মাথায় আমি এবং ইলিয়াস হুড খোলা জিপে পাশাপাশি দাঁড়িয়ে বেশ ধীরেই এগোচ্ছি। এমন সময় ইলিয়াস স্বভাবসুলভ ভঙ্গিতে হাসতে হাসতে বলে উঠল— মাহমুদ ভাই, ভারতীয় শাসকশ্রেণীর কাছে আপনি এবং আমি অন্যতম শত্রু। সম্ভবতঃ এই মুহূর্তে ওদের বন্দুকের সীমানার মধ্যে আমরা দু’জনা রয়েছি। এই সুযোগে আমাদের গুলি করে মেরেও তো দিতে পারে। জবাবে আমি বলেছিলাম, এমন প্রকাশ্যে ওরা আমাদের মারবে না। শেখ হাসিনার death squad আমার রিমান্ডকালে ক্যান্টনমেন্ট থানায় গভীর রাতে প্রবেশ করেও আমাকে একেবারে শেষ করে দেয়নি। ওরা নীরব ঘাতক। সুযোগ বুঝে এমনভাবে মারবে যাতে সাপও মরে, লাঠিও না ভাঙে। অর্থাত্ মারবে, তবে প্রমাণ রাখবে না। একই গাড়িতে চলতে চলতে সহযাত্রী ড্যাব নেতা ডা. জাহিদ হোসেন এবং কবি আবদুল হাই শিকদার আমাদের কথা শুনে যথেষ্ট উদ্বেগ সহকারে মন্তব্য করেছিলেন, আপনাদের সাবধানে চলাচল করা দরকার। দেশ ও জাতির শত্রুরা কেমন করে ঢাকার রাজপথ থেকে ইলিয়াসকে উঠিয়ে নিয়ে গে ছে, জানি না। ও এখন কোথায়, কী অবস্থায় আছে তাও সম্ভবত স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী এবং বিশেষ বাহিনীতে তার বিশ্বস্ত গুটিকয়েক ব্যক্তি ছাড়া আর কেউ জানে না। তবে ওপর থেকে অবশ্যই শেষ বিচারের মালিক মহান আল্লাহ্ সবকিছু দেখছেন। ইলিয়াসের মা, স্ত্রী, পুত্র-কন্যাসহ আপনজন এবং আমাদের মতো শুভানুধ্যায়ীরা আজও তার পথচেয়ে আছে। আল্লাহ্র কাছে প্রার্থনা করি, এই সরকারের সুমতি হোক, ইলিয়াসসহ সব গুম করা ব্যক্তিকে আপনজনের কাছে সত্বর জীবিত ফিরিয়ে দিক। বাংলাদেশের ইতিহাসের সবচেয়ে দুর্বিনীত শাসকশ্রেণী বর্তমানে দেশটি শাসন করছে। এই সরকারের কর্তাব্যক্তিদের মধ্যে লেশমাত্র বিবেক, নীতি অথবা লজ্জাবোধ আর অবশিষ্ট নেই। ইলিয়াস আলীকে গুম করার পর থেকে স্বয়ং প্রধানমন্ত্রীসহ নীতিনির্ধারকবৃন্দ যে ধরনের উদ্ধত পরস্পরবিরোধী বক্তব্য দিয়েছেন, তার মধ্য থেকেই এদের সার্বিক দেউলিয়াপনা প্রকাশিত হয়েছে। আওয়ামীপন্থী বুদ্ধিজীবী, সংস্কৃতিসেবীরা দেশের ভয়ঙ্কর দুঃসময়ে নিম্নশ্রেণীর চাটুকারিতার স্বাক্ষর রেখে প্রধানমন্ত্রীকে তথাকথিত সমুদ্র বিজয়ের জন্য গণসংবর্ধনা দিয়ে টাকা ও রুচির শ্রাদ্ধ করেছেন। সেই অনুষ্ঠানে সৈয়দ শামসুল হক মানপত্র পাঠ করেছেন। এই ভদ্রলোকের কবিতা যে অতি উচ্চমানের, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। জেলে বন্দী থাকা অবস্থায় তার লেখা ‘ঢাকায় প্রথম বসতি’ কবিতাটা যে কতবার পড়েছি, তার ইয়ত্তা নেই। আমি পুরনো ঢাকায় বড় হয়েছি। এই কবিতায় চেনা সব জায়গার অসাধারণ কাব্যিক বর্ণনা নস্টালজিয়ায় আক্রান্ত মনটাকে বড় উদাস করে দিত। চোখে পানি চলে আসত। তবে উন্নত সাহিত্য প্রতিভার অধিকারী সৈয়দ হকের ব্যক্তি চরিত্র কতখানি নিম্নমানের, সেটা জানার জন্য চিন্তা-চেতনায় তারই স্বগোত্রীয়, দীর্ঘদিন ধরে ভারতমাতার কোলে ঠাঁই নেয়া তসলিমা নাসরিনের বই পাঠ করলেই চলবে। কাজেই আবদুল হাই শিকদারের ভাষায় তার কদমবুসি আচরণে বিস্মিত হওয়ার সুযোগ নেই। তবে শেখ হাসিনার সেই সংবর্ধনায় অশীতিপর শিক্ষাবিদ জিল্লুর রহমান সিদ্দিকী এবং প্রবীণ দক্ষ চিত্রকর কাইয়ুম চৌধুরীর মতো ব্যক্তিদের নিম্নরুচির চাটুকারিতা আমাদের প্রচণ্ড রকম বেদনাহত করেছে। সেই ছাত্রজীবন থেকে এদের শিক্ষা ও সংস্কৃতির বড়াই শুনতে শুনতে আমরাই জীবনের পড়ন্ত বেলায় পৌঁছে গেছি। বুঝতে পারি না এই ব্যক্তিদের আর কী চাওয়া-পাওয়ার থাকতে পারে যে এতটা নিচে নামত ে হবে। সারাদেশ যখন গুম-খুনের আতঙ্কে ম্রিয়মাণ হয়ে রয়েছে, তখন তাদের আয়োজিত সংবর্ধনায় শাসকদের প্রতি তোষামোদি বাক্য শুনে বিবেকসম্পন্ন প্রতিটি নাগরিকের মনে ঘৃণাপ্রসূত বমনেচ্ছার উদ্রেক হয়েছে। সেই অনুষ্ঠানে তারা ভুলেও ইলিয়াসের নামটাও উচ্চারণ করেননি। বিদ্বানের চাটুকারিতা প্রসঙ্গে আমাদের মহানবীর একটি সুবিখ্যাত হাদিস রয়েছে, যেটি পরবর্তীকালে প্রখ্যাত ইরানি সুফি জালালউদ্দিন রুমি তার লেখায় ব্যাখ্যা করেছেন। হাদিসটি আনোয়ার হোসেইন মঞ্জু অনূদিত মাওলানা জালালউদ্দিন রুমী’র সংলাপ থেকে উদ্ধৃত করছি : রুমী উল্লেখ করেছেন, ‘‘মহানবী মুহাম্মদ (সা.) একবার বলেছেন, ওইসব বিজ্ঞ ব্যক্তিরা সবচেয়ে অধঃপতিত, যারা বাদশাহদের সাথে সাক্ষাত্ করতে যায় আর সর্বোত্তম বাদশাহ তারাই, যারা বিজ্ঞজনের সাথে সাক্ষাত্ করে। জ্ঞানী বাদশাহ তিনিই, যিনি দরিদ্রের দ্বারে গিয়ে দাঁড়ান, আর অধঃপতিত দরিদ্র তারাই যারা বাদশাহর দরজায় দাঁড়িয়ে থাকে।” মেঘে মেঘে তো বেলা কম হলো না। এবার ইহজাগতিকতা বাদ রেখে একটু পরকালের কথা ভাবলে হতো না! অবশ্য এ দেশের আওয়ামীপন্থী বুদ্ধিজীবীদের মধ্যে ক’জন প্রকৃতই পরকালে বিশ্বাস রাখেন, সেটা নিয়ে আমার মনে অন্তত যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে। যারা ইহজগতকেই একমাত্র মোক্ষ বিবেচনা করেন, তারা জীবনের শেষদিন পর্যন্ত উচ্ছিষ্ট খোঁজার কাজে ব্যাপৃত থাকবেন এতে আর আশ্চর্য কী? ক্ষোভে-দুঃখে বিষয়ের খানিক পরিবর্তন হয়ে যাওয়ায় পাঠকের কাছে ক্ষমা চেয়ে রাখছি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রচণ্ড অহমিকা ও বলদর্পী ফ্যাসিবাদী আচরণের কথা লিখতে গিয়ে বশংবদ বুদ্ধিজীবী প্রসঙ্গে চলে গেছিলাম। ২০০৮ সালে শেখ হাসিনা এবং তার মহাজোট মার্কিন ও ভারতের আশীর্বাদপুষ্ট হয়েই ক্ষমতা লাভ করেছিলেন। কী কারণে এই আশীর্বাদ তার পায়ের তলায় তখন গড়াগড়ি খেয়েছিল, সে সম্পর্কে গত সাড়ে তিন বছরের লেখালেখিতে যথাসম্ভব বিচার- বিশ্লেষণ করার চেষ্টা করেছি। আজ আর পুরনো কাসুন্দি না ঘেঁটে বর্তমান পরিস্থিতির ওপরই কেবল দৃষ্টি নিবদ্ধ রাখছি। কাছের ও দূরের সাম্রাজ্যবাদের আশকারায় ক্ষমতাসীন মহল তাদের এবারের মেয়াদে একদিকে যেমন সুশাসন নির্বাসনে পাঠিয়ে দুর্নীতির মহোত্সব বসিয়েছে, অন্যদিকে গণতন্ত্রকে কাঁচকলা দেখিয় ে সকল প্রকার ভিন্নমত দমনের উদ্দেশ্যে সরাসরি ফ্যাসিস্ট শাসন ব্যবস্থা কায়েম করেছে। সংবাদ মাধ্যমের স্বাধীনতা হরণ করা হয়েছে, বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের নির্বিচারে হত্যা-গুম চলছে, এমনকি পশ্চিমাদের অতি কাছের সুশীলদের (?) পর্যন্ত এরা ছেড়ে কথা কয়নি। বাংলাদেশের একমাত্র নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক ড. ইউনূস গ্রেফতার ও রিমান্ড থেকে বেঁচেছেন বটে, কিন্তু তাকে যে প্রক্রিয়ায় ও পরিমাণে হেনস্থা করা হয়েছে, তা নিয়ে রীতিমত একখানা মহাভারত রচনা করা যায়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতিতে অতি প্রভাবশালী ক্লি নটন পরিবারের ব্যক্তিগত বন্ধুকে চূড়ান্ত অপমান করার স্পর্ধা গণতন্ত্রের কথিত মানসকন্যা শেখ হাসিনাকে কাকতালীয়ভাবে মার্ক িনিরাই সরবরাহ করেছে। বাংলাদেশে এক বায়বীয় ইসলামী জঙ্গি জুজুর ভয় দেখিয়ে শেখ হাসিনা ভেবেছিলেন, তার তাবত্ অপকর্ম তিনি জায়েজ করতে সক্ষম হবেন। বছর তিনেক পর্যন্ত তার কৌশল যথেষ্ট কার্যকর প্রমাণিত হওয়ার পর, হালে মনে হচ্ছে তিনি লক্ষণরেখা অব শেষে অতিক্রম করেই ফেলেছেন। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও ভারতীয় অর্থমন্ত্রীর অতি সাম্প্রতিক যৌথ সফর তার জন্য অশনি সঙ্কেতই বহন করে এনেছে। বাংলাদেশে সাড়ে তিন বছরের স্বৈরশাসন বিনাবাক্যে সহ্য করার পর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র শেষ পর্যন্ত গণতন্ত্র, দুর্নীতি, সুশাসন, মানবাধিকার বিষয়ে সোচ্চার হয়েছে। একই সময়ে প্রণব মুখার্জির বিএনপি চেয়ারপারসনের সঙ্গে সাক্ষাত্ এবং সেই সাক্ষাতে বাংলাদেশের জনগণের সঙ্গে ভারতের বন্ধুত্ব ও আগামী নির্বাচন বিষয়ে তার বক্তব্য অত্যন্ত তাত্পর্যপূর্ণ। ২০০৮ সালের নির্বাচনের পর ভারতের অর্থমন্ত্রীর এটা তৃতীয় বাংলাদেশ সফর। আগের দু’বারে তিনি বিরোধী দলীয় নেত্রীর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাতেরও সময় করে উঠতে পারেননি। এবার তিনি কেবল সাক্ষাত্ই করেননি, অনেকটা বিএনপির রাজনৈতিক অবস্থানের প্রতিফলন ঘটিয়ে মন্তব্য করেছেন যে, ভারত বাংলাদেশে কোনোরকম একতরফা নির্বাচন চায় না। তাছাড়া, প্রথম বারের মতো তিনি এ দেশের কোনো একটি বিশেষ দলের পরিবর্তে জনগণের সঙ্গে বন্ধুত্বের আকাঙ্ক্ষা ব্যক্ত করেছেন। বাংলাদেশের বিষয়ে ভারতের শাসকশ্রেণীর অবস্থানের প্রকৃতই যদি পরিবর্তন ঘটে থাকে, তাহলে উপমহাদেশে পারস্পরিক বিশ্বাস ও শান্তি স্থাপনের সুযোগ সৃষ্টি হবে। তবে বাংলাদেশের জাতীয় পত্রিকাসমূহের সম্পাদকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে ভারতীয় হাইকমিশন আমার দেশসহ ছয়টি বিশেষ পত্রিকার সম্পাদককে আমন্ত্রণ তালিকার বাইরে রেখে তাদের আধিপত্যবাদী, অসহিষ্ণু চরিত্রকেই পুনর্বার উন্মোচিত করেছে। হিলারি ক্লিনটনের সঙ্গে দীপু মনি এবং শেখ হাসিনার বৈঠকের সময়ও আমার দেশ পত্রিকার সাংবাদিককে খবর সংগ্রহের জন্য প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে ঢুকতে দেয়া হয়নি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আশা করি, এটুকু মানবেন যে, এই মুহূর্তে বাংলাদেশে সর্বাধিক প্রচারিত সংবাদপত্র প্রথম আলো হলেও সর্বাধিক আলোচিত কিন্তু আমার দেশই। যাই হোক, প্রণব মুখার্জীর কথা ও কাজে মিল খুঁজে পাওয়ার জন্য আমাদের বেশকিছু কাল আরও অপেক্ষা করতে হবে বলেই মনে হচ্ছে। তারপরও ভারতীয় অর্থমন্ত্রীর বক্তব্যের নতুন সুর এ দেশের জনগণকে কিছুটা হলেও আশান্বিত করেছে। সব মিলে বাংলাদেশের ক্ষমতাসীন মহলের জন্য হিলারি ক্লিনটন এবং প্রণব মুখার্জীর সফর যে আনন্দদায়ক হয়নি, সেটি বাগাড়ম্বর প্রিয় মহাজোট মন্ত্রীদের আপাত নীরবতা থেকে কিছুটা বোধগম্য হচ্ছে। ইলিয়াস আলীকে গুম এবং বিরোধীদলের প্রায় তিন ডজন শীর্ষ নেতৃবৃন্দের বিরুদ্ধে বানোয়াট মামলা দায়ের করে শেখ হাসিনার সরকার ভিন্ন মতকে আতঙ্কগ্রস্ত করে কোণঠাসা করার যে আয়োজন করেছিল, সেটাও বুমেরাং হয়ে তাদেরই আঘাত করেছে। হিলারি ক্লিনটন গুমের পর নিহত আশুলিয়া অঞ্চলের শ্রমিক নেতা আমিনুল ইসলাম এবং ইলিয়াস আলীর নাম তার বিভিন্ন বক্তব্যে বারংবার উল্লেখ করে সম্ভবত সরকারকে এক প্রকার সতর্ক বার্তা দিতে চেয়েছেন। গণতন্ত্রের নামে এভাবে গুম-খুনকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আর প্রশ্রয় দেবে না বলেই মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্যে দেশবাসীর কাছে প্রতীয়মান হয়েছে। এমতাবস্থায়, শেখ হাসিনার উচিত হবে আর সময় ক্ষেপণ না করে শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তা ন্তরের উপায় খুঁজে বের করার জন্য বিরোধী দলের সঙ্গে আন্তরিক সংলাপে বসা। প্রধানমন্ত্রীর তিন দশকের রাজনীতি এবং দুই দফায় সাড়ে আট বছরের শাসন প্রক্রিয়া পর্যবেক্ষণের পর লিখতে বসে শেক্সিপয়রের অসাধারণ এক উক্তির কথা এই মুহূর্তে মনে পড়ছে— “Vengeance is in my heart, death in my hand, blood and revenge are hammering in my head”. শেক্সিপয়র বর্ণিত সেই অসুস্থ রাজনীতি অব্যাহত রাখার উদগ্র আকাঙ্ক্ষায় ক্ষমতায় থেকে নির্বাচন করে আবারও পাঁচ বছরের জন্য ক্ষমতায় আসীন হওয়ার ইচ্ছা পূরণ বর্তমান ভূ- রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে সম্ভব হবে না বলেই প্রতীয়মান হচ্ছে। ২০০৭ সালে বিএনপির পক্ষে একতরফা নির্বাচন করা সম্ভব হয়নি। এবার পেশিশক্তি ও মার্কিন- ভারত একতরফা সমর্থনের জোরে শেখ হাসিনা সেই গর্হিত কাজটি করে ফেলতে পারবেন, এমন বিকৃত চিন্তা দেশে অবধারিত রক্তক্ষয়ী বিবাদের সূচনা করবে। সেই ভয়ঙ্কর পরিস্থিতি কারও জন্যই সুখকর হবে না। প্রতিহিংসা কেবল প্রতিহিংসারই জন্ম দেবে। পশ্চিমা বিশ্বের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সুশীল (?) সমাজের প্রতিনিধিরা একবাক্যে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা পুনঃপ্রতিষ্ঠার সুপারিশ করেছেন। ভারতীয় অর্থমন্ত্রীও প্রকারান্তরে একই বারতা দিয়ে গেলেন। দেশের বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণ অনেক আগেই তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থার পক্ষে রায় দিয়েছেন। আওয়ামী লীগের দুর্নীতিবাজ মন্ত্রী, এমপিরা অবশ্য জনরোষের ভয়ে এখনও তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতির বিরোধিতা করে চলেছেন। এবার অহমিকা ত্যাগ করে শেখ হাসিনার বাস্তবতা উপলব্ধির পালা। অন্যথায় দেশে মহাবিপর্যয় সৃষ্টি করার সকল দায় তাকেই নিতে হবে। লেখার শুরুতে ঢাকা বিমানবন্দরে বিড়ম্বনার কথা উল্লেখ করেছিলাম। সেই ঘটনা বিবৃত করেই আজকের মন্তব্য প্রতিবেদনে সমাপ্তি টানব। ৪ তারিখ সকালে এমিরেটস এয়ারলাইন্সের বিমানে দেশে ফিরে ইমিগ্রেশনের দীর্ঘ লাইনে অপেক্ষা করছি, এমন সময় এসবির একজন কর্মকর্তা এসে আমার পাসপোর্ট নিয়ে আগমন হলের এক কোণে বসতে দিলেন। শুরু হলো প্রতীক্ষা। একে একে সব যাত্রী চলে যাচ্ছে। আমার স্ত্রীও ইমিগ্রেশনের বাধা পার হয়ে দৃষ্টির অন্তরালে চলে গেল। আধ ঘণ্টাখানেক পরে খবর পেলাম তিনি লাগেজ সংগ্রহ করে আমার জন্য অপেক্ষা করছেন। কানাঘুষায় শুনলাম আমার নামে নতুন মামলা হয়েছে কিনা, কিংবা বিমানবন্দর থেকে গ্রেফতার করা হবে কিনা, এসব নিয়ে বিভিন্ন এজেন্সিতে খোঁজ-খবর নেয়া চলছে। একজন কর্মকর্তাকে ডেকে বললাম, গ্রেফতারের ভয় পেলে তো বিদেশেই থেকে যেতে পারতাম! বেচারা নিম্নস্তরের কর্মকর্তা। সিদ্ধান্ত দেয়ার ক্ষমতা রাখে না। শেষ পর্যন্ত ঘণ্টাখানেক বাদে স্বদেশে ঢোকার ছাড়পত্র মিলল। এতদিন সরকারের আমাকে বাইরে যেতে দিতে আপত্ত ি ছিল। এবার মনে হলো ক্ষমতাসীন মহল আমাকে দেশে ফিরতে দিতে অনিচ্ছু ক। পরবর্তী অভিজ্ঞতার অপেক্ষায় রইলাম। ই মেইল : admahmudrahman@gmail.com

Thursday, July 10, 2014

নাস্তিকদের প্রশ্নের জবাব

অনেক নাস্তিক আছে যারা মিশনারী ঘেটে হাদীস বের করে আপনাকে কুপোকাত করতে চাইবে!আসুন শিখুন তাদের ঐ প্রশ্নগুলোর উত্তর কিভাবে দিবেন না জানলে শিখে যান। নাস্তিকরা প্রশ্ন করবে, •আপনি (for women) কি নিজ বাড়িতে আপনার স্বামীর সঙ্গে তার দাসীদের (sex slaves) যৌন সম্পর্ককে মেনে নেবেন ? কেন নয় যখন তার অনুমোদন এসেছে আল্লাহর কাছ থেকে। →উত্তরঃ-রাসুলুল্লাহ সঃ দাসীদের সাথে পরকিয়া করত এমন কিছু আমি কখনো শুনিনি।তার চরিত্র ছিলো ফুলের মতো।তিনি কখনো বেপর্দা বেগানাদের সাথে দেখা করতেন না। তবে তিনি দাসী রাখতেন যা কিনা উম্মুল মুমেনিনদের সেবা করত।পরে তিনি ঐ দাসীদের আযাদ করে দিতেন। •ইসলাম অনুযায়ী নারীদের জন্যে বহু বিবাহ নিষিদ্ধ, বিবাহ পুর্ব বা বিবাহ বহির্ভুত যৌন সম্পর্ক নিষিদ্ধ, স্বামীর গায়ে হাত তোলা নিষিদ্ধ, যদিও এর সব গুলোই একজন পুরুষ পারবে। →উত্তরঃ-আচ্ছা একটা নারীর যদি ৫টা বিয়ে হয় তাহলে সে নারীকে সমাজের লোকজন কেমন চোখে দেখে? তাকে সমাজ থেকে তাকে বেশ্যা বলা হবে। এমন বহু তথ্য আছে যে ,বহু বিয়ে হওয়া নারী কোন স্বামীর সঙ্গমে খুশি হতে না পেরে পতিতালয়ে স্থান নিয়েছে। ইসলামে নারীর বহু বিবাহ এবং তালাক নিষিদ্ধ এ হাদীসটা আপনি কোথায় পেয়েছেন?যদি নারী বিধবা হয় অথবা স্বামী যদি চরিত্রহীন বাজে হয় তাইলে তারে তালাক দেওয়া যায়।আর শুধু শুধু তালাক দেওয়া নারী পুরুষ উভয়ের জন্যই নিষিদ্ধ। আপনি বলেছেন স্বামী স্ত্রীর গায়ে হাত তুলতে পারবে স্ত্রী কেন পারবেনা?আচ্ছা আপনার জীবনে এমন ঘটনা ঘটেছে অবশ্যই যে আপনার পিতা আপনার আম্মাকে কোন একটা ভুলের মেরেছে তখন কিন্তু আপনার তেমন খারাপ লাগেনাই। এরপর আপনার পিতাও অমন একটা অপরাধ করল আপনার আম্মার সামনে তখন আপনার আম্মা আপনার আব্বাকে উঠেই জুতা খুলে পাঁচ ছয়টা তার গালেই মেরে দিলেন তখন আপনি কেন পুরো এলাকাবাসী যদি জানতে পারে যে আপনার আম্মা আপনার আব্বাকে জুতাপেটা করেছে তখন আপনি সহ এলাকাবাসী আপনার আম্মার মুখে থুথু ছিটাবে কিনা? •নারীর বিবাহ পুর্ব বা বিবাহ বহির্ভুত অন্য কারো সাথে যৌন সম্পর্ক নিষিদ্ধ কিন্তু পুরুষ পারে। →উত্তরঃ-এ সম্পর্ক নারী পুরুষ উভয়ের জন্যই নিষিদ্ধ। •একজন পুরুষ সম্পত্তির ক্ষেত্রে নারীর দিগুন পাবে! →উত্তরঃ-এটা শুধু পিতার সম্পত্তি থেকে।এটা আবার তাদের পুষিয়ে দেয়া হয়েছে সন্তান এবং স্বামীর সম্পত্তি থেকে।আর এসব হিসেব করলে দেখা যায় নারী পুরুষের সমান সম্পত্তি পায়।আপনি হিন্দু ধর্মে দেখবেন নারীরা কিন্তু পিতার সম্পত্তি থেকে ভাগ পায়না। •২১ তালাকের অধিকার রয়েছে শুধু পুরুষেরই (Sahih Bukhari 8:4871-82 Mishkat al-Masabih, Book 1, duties of parents, Hadith No. 15) →উঃ জাল হাদীস। স্বামীর অনুমতি ব্যাতিত অন্য পুরুষের কাছাকাছি হওয়া নিষিদ্ধ: উঃএতে নারীর অধিকার ক্ষুন্ন হয়না বরংচ তার ইজ্জত বাড়ে।আর আপনি তো দেখছি পরকীয়ার সাপোর্ট করছেন! •মৃত্যুর পর তাদের অধিকাংশের জন্যে রয়েছে দোজখের আগুন! →উত্তরঃএকথা শুধু সবার বেলায় বলা হয়েছে।আল্লাহর আদেশ ভঙ্গকারীদের বলা হয়েছে যেমন আপনি । আর আপনি যে হাদীসগুলো দিয়েছেন তার অধিকাংশরই মিশনারীর মনগড়া কথাবার্তা ওগুলা যুক্তি তর্কে টিকেনা।

ডাঃ জাকির নায়েকের যুক্তিতর্ক ও আলোচনা Download করুন

আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়াবারাকাতুহু।প্রিয় পাঠক অনেকে হয়ত অধির আগ্রহে পিস টিভির সামনে বসে থাকেন ড.জাকির নায়েকের ইসলামী আলোচনা যুক্তিতর্ক ও বয়ান শুনার জন্য।আর টেলিভিশনের সামনে বসে থাকতে হবেনা নিজের প্রিয় মোবাইলেই শুনবেন তার বয়ান!এবার আমি আপনাদের জন্য নিয়ে এসেছি ড. জাকির নায়েকের ইসলামি আলোচনা। Mp3 এবং ইউটিউবে দেখুন এখান থেকে। ••••• DOWNLOAD ••••• ভিডিওঃটেরোরিজম-জিহাদ

Wednesday, July 9, 2014

আসুন দেখি নারীর সম্মান কোন ধর্মে বেশি।

ইসলাম ধর্মে নারীর অধিকার: নারীদের প্রতি জুলুম ও অপমান ইসলাম বরদাস্ত করতে পারেনি। ইসলাম তাই মেয়েদের কে বিভিন্ন ভাবে সম্মান ও মর্যাদা দান করেছে। যেমন ১. কন্যা হিসাবে মর্যাদা ২. বোন হিসাবে মর্যাদা ৩. মা হিসাবে মর্যাদা ৪. স্ত্রী হিসাবে মর্যাদা । ইসলাম ধর্মে নারীরা পর্দা রক্ষা করে ব্যাবসা থেকে ভ্রমন পর্যন্ত করতে পারবে।নারীর আছে তালাকের অধিকার,নারীর আছে কথা বলার অধিকার,নারীর আছে সম্পত্তি লাভের অধিকার।নারীরা পারবে পর্দা রক্ষা করে পুরুষদের সাথে জিহাদেও যেতে! আপনি জানেন কি ইসলাম ধর্মে স্ত্রীকে অহেতুক মারার জন্য শাস্তির বিধান আছে?আপনি জানেন কি ইসলাম ধর্মে নারীর পায়ের নিচে করে দিয়েছে সন্তানের বেহেশত? ইসলাম ধর্মে নারী পায় পিতার সম্পত্তি ,সাথে স্বামীর সম্পত্তি।আপনি জানেন ইসলাম ধর্মে পুরুষ নয় নারীকে যৌতুক দেয়া হয় ?ইসলাম ধর্মে নারীকে দেয়া হয় মোহরানা।আর আল্লাহ পাক বলেছেন,যে ব্যাক্তি তার স্ত্রীর মোহরানার টাকা না দিয়ে স্ত্রীর সাথে মিলিত হয়,আর ঐ স্ত্রী যদি মোহরানার টাকার দাবী না ছাড়ে তাহলে কেয়ামতের দিন ঐ স্বামীকে জেনাকারীর কাতারে দাঁড়াতে হবে!ইসলাম কন্যা সন্তান কে কতটা প্রাধান্য দেয় জানেন কি?রাসুলে আকরাম সঃ বলেন,যে ব্যাক্তির ৩টি কন্যা সন্তান হবে ঐ ব্যাক্তি জান্নাতি!সুবাহানআল্লাহি বিহামদিহি!নারীর অধিকার যতটা ইসলাম দিয়েছে অন্য কোন ধর্ম এর ১০০ভাগের একভাগ ও দেয়নি!ইসলাম বলে নারীদের সম্মান দিতে,তাদের মতামত এবং ইচ্ছাকে প্রাধান্য দিতে যা অন্য কোন ধর্ম বলেনা! ইয়াহুদী ধর্মে নারীর অধিকার: যে নাপাক থেকে পাক হতে পারে? যে নারী থেকে জন্ম নিয়েছে সে কিভাবে সত্যবাদী হতে পারে? অর্থাৎ নারী নাপাক, নারী সত্তার মধ্যে সত্যবাদীতা নেই। এ কারনে তার থেকে যার জন্ম সে সত্যবাদীতা শুন্য। মানুষ যেহেতু নারী থেকে জন্ম তাই সে পবিত্র হতে পারেনা। কেননা নারীর মাথা থেকে পা পর্যন্ত সব নাপাক। ডঃ গেসটাউলীবান বলেন কিতাবে মোকাদ্দাস গ্রন্থে রয়েছে, নারী জাতি মৃত্যু হতেও অধিক তিক্ত। প্রাচীন যুগের ওয়াজের অধ্যায়ে রয়েছে যে ব্যক্তি সৃষ্টিকর্তার প্রিয় সে যেন নারী থেকে নিজেকে দুরে রাখে। আমি সহস্র মানুষের মাঝে একজন খোদার প্রিয় পেয়েছি কিন্তু সারা বিশ্বের নারী জাতির মধ্যে একজনকেও সৃষ্টিকর্তার প্রিয় পাইনি। হিন্দু ধর্মঃ এদেশেরই সখ্যালঘু অপর একটি ধর্ম, হিন্দু ধর্ম। যেখানে সেদিন পর্যন্ত নারীকে বিবাহের পর স্বামী হাজার অত্যাচার করলেও বিবাহ বিচ্ছেদের কোন উপায় ছিলনা। আজীবন স্বামীর চরনের দাসী হিসেবে বিবেচনা করা হত। তাছাড়া উত্তরাধিকার লাভের কোন অধিকার নারীর ছিলনা, স্বামীর মৃত্যুর পর স্ত্রীর স্বতীত্ব প্রমানের জন্য স্বামীর চিতায় আত্মদান ছিল বাধ্যতামুলক। বর্তমান দু’ একদিনের বিবাহ কোন নারী যদি বিধবা হয় তাহলে তার আর সারা জীবনে পুর্ণ বিবাহের অধিকার নেই। বিবাহের সময় বাবা, ভাই থেকে সে সম্পদ নিয়ে শুশুর বাড়ীতে উঠবে, তারপর আর বাবা-ভাইদেরকে সম্পদের কথা বলতেও পারবেনা। হিন্দু ধর্মে নারীদের কোন অধিকার নেই। পুরুষের জন্য একই সময়ে দশজন স্ত্রী রাখার অনুমতি আছে। তালাকের সাথে সম্পর্ক নেই, যে কারনে নারীর ক্ষতিই বেশী, কারণ নারীর ভাল না লাগলে বা স্বামীর অত্যাচারে সে বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটাতে পারেনা। যত কষ্ট হোক, শত অত্যাচার করা হোক, স্বামীর কাছেই থাকতে হবে। সমস্ত ক্ষমতা স্বামীর, নারী দিন রাত্রীর কোন সময় স্বাধীন থাকতে পারবেনা। হিন্দু ধর্ম মতে তাকদীর, তুফান, মৃত্যু, জাহান্নাম বিষ ও বিষাক্ত সাপ এত ক্ষতিকর নয় যত ক্ষতিকর নারী। খৃষ্টান ধর্মঃ খৃষ্ট ধর্মের মতে নারী পুরুষ কেউ পবিত্র না, বিশেষ করে নারী জাতি। কারণ আদম (আঃ) হাওয়া (আঃ) উভয়ে নিষিদ্ধ খাবার খেয়েছিল, আদম আঃ পাপের দাগ মুছার জন্য একজন খোদার প্রিয় ব্যক্তির প্রয়োজন ছিল। যিশু এসে নিজে শুলিতে চড়ে সে পাপ হতে নিস্কৃতি পেলেও নারীদের ভিতর কেউ এমন হয়নি বিধায় নারীর অস্পৃশ্য/ পাপী। তাছাড়া খৃষ্টীয় ধর্মে মেয়ে সন্তান জন্ম দেওয়ার কারনে অনেক নির্দোষ সুন্দরী নারীকে জীবন্ত আগুনে জালানো বা ফাসিঁতে ঝুলানো হয়েছে, আবার খৃষ্ট ধর্মে তালাক প্রথা নেই, যে কারনে হিন্দু নারীদের মত খৃষ্ট ধর্মে নারীরা নির্যাতন ভোগ করে। সে কষ্টের শেষ নেই। পশ্চিমা খৃষ্টীয় সভ্যতায় প্রকৃত পক্ষে মানব মনের উপর কোন দাগ কাটতে পারেনি। কারণ তা সার্থপরতা ও ভোগান্তির উপর প্রতিষ্ঠিত। ইসায়ী জগতের এক ধর্ম সাধক বলেন, নারী ছলনার কন্যা। তা থেকে দুরে থাক। নারী শয়তানের শক্তি। অজগর সাপের মত রক্ত পিপাসু। তার মধ্যে সাপের বিষ নিহিত রয়েছে। সমস্ত ত্রুটির উৎস শয়তানের বাদ্যযন্ত্র, শয়তানের সাহায্য কারিনী। যাকে বলে তুমি কে? আমার কাছে তোমর কি প্রয়োজন? গ্রেট পোলো একজন খৃষ্টীয় পুর্ণবান নেতা বলে খ্যাত। তিনি বলেন, পুরুষ নারীর জন্য সৃষ্টি হয়নি, নারীই পুরুষের জন্য সৃষ্টি হয়েছে, নারীর কোন অধিকার নেই, কুমারী মেয়েদের সম্পত্তিও বিয়ের পর স্বামীর বলে গন্য হতো। এমনকি স্ত্রীর নিজ নামটি পর্যন্ত স্বামীর নামের সাথে পরিচিত হতে হয়। জাহেলিয়্যাতের যুগঃ জাহেলী যুগে মেয়ে জন্ম নিলে জীবন্ত অবস্থায় তাকে মাটি চাপা দেয়া হত, নদীতে ভাসিয়ে দেয়া হত। পাহাড় থেকে নিক্ষেপ করা হত। পাথর মেরে রক্তাক্ত করে মেরে ফেলা হত। মেয়েদের দাসী হিসাবে ক্রয় বিক্রয় করা হত। মেয়ে জন্ম হওয়াতে অসম্মান বোধ করত। ভাবে সম্মান ও মর্যাদা দান করেছে পরে রাসুল সঃ এই কালযুগের পতন ঘটায়। প্রিয় বুদ্ধিমান পাঠক এবার আপনারাই বিবেচনা করে বলুনতো নারী অধিকার কোন ধর্মে বেশি? আমি প্রথমেই বলে রাখছি ইসলাম ধর্মে।কেননা ইসলাম ধর্মের মত এতটা সম্মান,মর্যাদা,অধিকার পৃথিবীর অন্য কোন ধর্মে দেয় নাই।ওহে বিধর্মী ওহে নাস্তিক এরপর ও কি বলবে ইসলাম নারীদের ঠকিয়েছে?এরপর ও কি বলবে ইসলামে নারীদের সম্মান নাই? হে মা বোনেরা আপনারা কি এর পর ও বলবেন ইসলাম আমাদের পূর্ণ মর্যাদা দেয় নাই? হে মা বোনেরা স্বীকার করে নাও যে, ইসলামই সেই শ্রেষ্ঠ ধর্ম যারা তোমার পদতলে জান্নাত দিয়েছে!

মুক্তমনা এবং একজন ধূর্ত হেঁদু অভিজিত্

মুক্তমনা ব্লগের মডারেট অভিজিত্ রায় তার একটা ব্লগে লিখে বুঝাতে চেয়েছেনঃ-ব্লগার থাবা বাবা (নাস্তিক কুলাঙ্গার রাজীব/কদবেল হায়দার) ধর্মকে নিয়ে যে বক্তব্য পেশ করত এটা কোন খারাপ কাজ নয়!বরংচ এটা জ্ঞানমূলক ছিল। আপনারা লক্ষ্য করলে দেখতে পারবেন এই রাজীব শুধু ইসলামকেই কটাক্ষ করেছে।তিনি অন্য কোন ধর্মকে কটাক্ষ করেনি!রাজীব তার একটি ব্লগে লিখেছিলেন মা-ছেল,কন্যা-পিতা সেক্স করা কোন দোষের কিছু না!নাউযুবিল্লাহ।তিনি তার ব্লগ খানায় একটি ফটো দিয়েছিলেন যার উপর লেখা ছিলোঃ-I Aam Pregnent With My Dad's।রাজীবের সেই লেখা খানা নিয়ে লিখেছেন ফারাবী ভাই তার এই ব্লগে চাইলেই পড়তে পারেন।শেষের দিকে এই ব্লগটা পাবেন থাবা বাবা শিরোনামেঃ- http://www.farabiblo g.com যেই নাস্তিক কুলাঙ্গারকে নিয়ে অভিজিত্ এত মেতেছেন সেই থাবা বাবা ছিলেন ফ্রি সেক্সের পাগল!আর তার যারা গোলামি করে অবশ্যই তারাও ফ্রি সেক্সের গোলাম।অভিজিত্ রায়ের বিরুদ্ধে যারা লিখেন অভিজিত্ তাদের ডায়রেক্ট জামাত শীবির আক্ষ্যা দেয়!তাই অনেকে আছেন তার কুকীর্তীর বিরুদ্ধে লিখতে চায়না!এই অভিজিত্ হাদীসকে বিকৃতরুপে ভুল হাদীস প্রচার করেন!এটা আগেই ফারাবী ভাই তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছেন।অভিজিত্ লিখেছেন রাসূল সঃ নাকি সুন্দরী দেখলেই তাকে জীবনসঙ্গী করেছেন!নাউযুবিল্লাহ।মুক্তমনা যখন তার সাইটের নাম অবশ্যই সেখানে যার স্বাধীনমত সে লিখবে,কিন্তু এই কুলাঙ্গার অভিজিত্ শুধুমাত্র নাস্তিকদের পোষ্টই প্রথম পাতায় রাখেন।আর নাস্তিকদের কেউ ব্যাঙ্গ করলে সেই ব্লগ একাউন্ট খানাই বাদ করে দেয় এই অভিজিত্! অভিজিত্ যুদ্ধাপরাধীর ফাঁসি চায় ভাল কথা তাই বলে ইসলামকে কটাক্ষ করে?হাদীসকে বিকৃত করে?হাদীসের ভূল অনুবাদ করে কি যুদ্ধাপরাধীর ফাঁসি চান এই অভিজিত্?আপনারা লক্ষ্য করলে দেখবেন,হিন্দুদের নিয়ে কোন পোষ্ট যদি কেউ মুক্তমনায় প্রকাশ করে সেই পোষ্টখানা অভিজিত্ গোপনে মুক্তমনার প্রথম পাতা থেকে সড়িয়ে দেয়।কোন এক ব্লগার লিখেছেন জমজমের পানিতে শুক্রকিট,কুরআনের মিরাকল ইত্যাদি সকল প্রকার পোষ্ট কিন্তু অভিজিত্ তার ব্লগে প্রথম পাতাই স্থান দিয়েছে!একধারে তিনি গান গেয়ে যান তিনি মুক্তমনা(নাস্তিক)অন্য একধারে তিনি তার হিন্দুত্ব চালিয়ে যান! অভিজিত্ রায় ফারাবী ভাইকেও জামাত শিবির ট্যাগ দিয়েছেন শুধুমাত্র তার বিপক্ষে লেখায়!তার মুক্তমনায় প্রতিদিন যেই আকারে ধর্মকে অবমাননা করা হয়,এই রকমের ইসলামকে অবমাননা বাংলাদেশের অন্য কোন সাইটে করা হয়না! *তাই মাননীয় সরকারের কাছে বিশেষ অনুরোধ যতদ্রুত সম্ভব এই মুক্তমনা প্লাটফর্মটি বন্ধ করে দেয়া হোক।।।। •নাস্তিদের ফ্রি সেক্স নিয়ে কিছু কথা এখানে পাবেন

Monday, July 7, 2014

কোন মুসলিম কি হিন্দু ধর্মের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে হিন্দু ধর্ম গ্রহণ পারে?

ছবি আসলে হিন্দু ধর্ম কি কোন ধর্ম? না হিন্দু ধর্ম কোন ধর্মের ভিতরই পরে না এরা বিশেষ একটি উগ্র উপজাত! এদের প্রাচীন নাম আর্য্য। আর্য্যরা ছিল মূর্তি পূজারী।কথিত আছে যে এরা শয়তানের ধোঁকায় পরে দুষ্টু জ্বীন পূজা করা শুরু করে যা কিনা প্যাগানরাও করত!এর পরে তারা শুরু করে ঐ দুষ্টু জ্বীনদের প্রতিচ্ছবি পূজা অর্থাত্‍ তাদের মূর্তি বানিয়ে পূজা করা শুরু করে যা কিনা তাদের পূজার হাজার হাজার বছর আগে মারা গেছে। শিব,লক্ষী,গনেশ এদের মূর্তির পিছনে লুকিয়ে আছে একেকটা মৃত জ্বীন যা কিনা হাজার হাজার বছর আগে মারা গেছে [তথ্য সূত্র]।হিন্দুদের মৃত জ্বীন পূজারী বল্লে আপনি ভুল করবেননা। এখন কথা হল এই মৃত জ্বীনদের পূজা যারা করে তাদের ধর্মের প্রতি কি যেনে শুনে কোন মুসলমানরা আকৃষ্ট হতে পারে? অবশ্যই না। কিন্তু ফেসবুকে একটি হিন্দুত্ববাদী পেজ দাবী করেছে নাজমুল নামের একটি মুসলিম ছেলে নাকি এই মৃত জ্বীন পূজারী ধর্মের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে হিন্দু ধর্ম গ্রহণ করেছে।এবং তার নাম রেখেছে 'পিন্টু রায়' [তথ্য সূত্র:জাগো বাংলার হিন্দু]। তাদের দাবী যে ,হিন্দু ধর্ম এমনই একটি ধর্ম যার ধর্মগ্রন্থ পড়লে যে কেউ আকৃষ্ট হবে তাদের ধর্মের প্রতি। হিন্দু ধর্ম যে কতটা মিথ্যা এবং বোকাদের তা আমি আলোচনা করেছি এই পাঁচটি পর্বেঃ •হেঁদু সমাচার ১ম পত্রহেঁদু সমাচার ২য় পত্রহেঁদু সমাচার ৩য় পত্রহেঁদু সমাচার ৪র্থ পত্রহেঁদু সমাচার শেষ পত্র। যারা প্রচার করেছে মুসলিম ছেলে হিন্দু হয়েছে আমি তাদের চ্যালেঞ্ছ ছুড়ে দিয়েছিলাম , তারা যে নিউজ দিয়েছে সে নিউজটা ১০০% ভূয়া। প্রমাণ:— •তারা যে খবরটা দিয়েছে খবরটা কোথা থেকে তারা পেয়েছে অর্থাত্‍ কোন তথ্যসূত্র/নিউজ লিঙ্ক নেই। •ঘটনাটা কোথায় ঘটেছে স্থান কোথায় তা দেয়া নাই। •নাজমুল ছেলেটা হিন্দু ধর্ম গ্রহণ করার পর তার নাম হয়েছে নাকি পিন্টু রায়।আচ্ছা ভাই [রায়]তো একটা বংশের নাম।হিন্দু ধর্ম গ্রহণ করলেই তো আর রায় হওয়া যায়না।তো ছেলেটা তো আগে কখনো হিন্দু ছিলনা তাইলে সে রায় উপাধিটা কোথায় পেলো? নাকি হিন্দু হওয়ার পরই বংশ উপাধি রায় হয়ে যায়? পাঠক আপনারাই বলেন যে নিউজের কোন তথ্যসূত্র নাই সেই খবরটা সত্য হয় কেমনে? অনেক হিন্দু মুসলিম হয় কিন্তু কোন মুসলিম হিন্দু হয়না। মুসলিম থেকে অনেকে ধর্মহীন হয় কিন্তু হিন্দু,বৌদ্ধ ,খ্রীষ্টান কিংবা ইহুদি হয়েছে কিনা তা আমার জানা নাই। হিন্দু থেকে মুসলমান হয়েছে এমন বহু তথ্য আমার কাছে আছে। এখানে একটা ঘটনা তুলে দিলামঃ ২০০৭ এ কোলকাতায় শিবছাগুদের হুটোপুটিতে মাওলানা আব্দুল খালেককে ভারতের কারাগারে বন্দি করা হল ইসলামের পক্ষে এবং হিন্দুধর্মের বিপক্ষে বলায়! পানির তৃষ্ঞায় মাওলানা পানি পানি করলেও ভারতী কুত্তাগুলো ১ফোঁটা পানি মাওলানাকে দেয়না! অনেকক্ষন পর ১গ্লাস ঠান্ডা পানি তাকে দেখিয়ে পানির গ্লাশটা মাটিতে ছেড়ে দেয়।পানি খাওয়া তার আর হয়না। ক্ষুধা নিবারনের জন্য ১পিস রুটি জেলের মধ্যে ধুলির উপর নিক্ষেপ করা হয়। তাকে আদালতে আনা হলে তাকে প্রমাণ করতে বলা হয় যে বেদের মধ্যে কোথায় আছে ইসলামের কথা? মাওলানা আঃ খালেক বল্লেন জনাব,বেদে আছেঃ একং ব্রহ্মং স্রষ্ঠং নে নাস্সিং কে কিংটং। অর্থাত্,ঐ সৃষ্টি কর্তাকে সেজদা কর যার কোন শরীক নেই,যাকে দুনিয়ার চক্ষু দিয়ে দেখা চাইলে অন্ধ হয়ে যায়। তখন মাওলানা বল্ল জনাব,আপনারা তো দূর্গাকে দেখে দেখে,কালিকে দেখে দেখে পূজা দেন!লক্ষিকে দেখে দেখে পূজা দেন!কোন দিন কি আপনাদের ভগবানকে দেখতে গিয়ে চোখ অন্ধ হয়েছে? তারা বল্লেন,না তাতো হয়নি!তখন মাওলানা বল্লেন জনাব,তাহলেতো এ দলিল তো আপনাদের ভগবানের না!এই দলিল তো মুসলিমদের দলিল। তখন বিচারক বল্ল আঃ খালেক তাহলে আপনাদের দলিলের প্রমাণ কি?আঃ খালেক বিবৃতি দিতে লাগলেনঃমূসা আঃ বল্লেনঃ রব্বি আরনি,খোদা তোমায় দেখতে চাই! আল্লাহ বলছেন,লান তারানি,সম্ভব না! মূসা নবী শোনেনা।আল্লাহ তাকে দাওয়াত দিলেন তূর পাহাড়ে। আল্লাহ তাকে দেখা দেয়ার জন্য প্রথম পর্দা খুললে মূসা নবী বেহুশ হয়ে পরে যায় তূর পাহাড় ছাড়খাড় হয়ে যায়! তাহলে এতেই কি প্রমাণ হয়না ঐ তত্ত্ব মুসলিমদের? এই তত্ত্ব যখন দেয়াহয় ঐ মহলের বিচারক সহ ৩৭জন ইসলাম গ্রহণ করেন![তথ্য সূত্র] আমি যতটা খবর জানি এবং দেখেছি তার মধ্যে আজকের এই মুসলিম ছেলে হিন্দু হয়েছে খবরটা আজগুবি।তারা মিথ্যা দিয়ে ধর্মকে বড় বানাচ্ছে।আর বানাবেই বা না কেন,তাদের ধর্মই তো মিথ্যার উপর প্রতিষ্ঠিত। মিথ্যা খবর প্রচার করে কি হিন্দু ধর্মকে ইসলাম ধর্মের উপরে কখনোই মালাউনরা।ইসলামের সফলতা দেখে মালাউনরা শুধু ঈর্ষার আগুনেই পুড়ে যাবে,কখনো ইসলামের চেয়ে শ্রেষ্ঠ হতে পারবেনা। আমি সকল হিন্দুদের বলছি,হে ভাই আর কতদিন প্যাগানদের মতো মাটি মূর্তির পূজা করবে যার সৃষ্টি কর্তা তুমি? হে ভাই ফিরে আসো,তোমার জন্য এখনো অপেক্ষা করছে ইসলাম।হাত মিলাও সেই মুসলিমের সাথে যাদের সৃষ্টিকর্তা ১ ও অদ্বিতীয় যার কোন শরীক নাই। পড়,লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহম্মাদুর রসুলুল্লাহ(সঃ)। একবার কালিমা পড়ে দেখ,তুমি পাবে মুক্তি,তোমার জন্য অপেক্ষা করছে চীর শান্তিময় স্থান জান্নাত!

Sunday, July 6, 2014

মাহমুদুর রহমানের কলাম:গনতান্ত্রিক শাসনের বিকল্প নেই

mamdur-sml.jpg মন্তব্য প্রতিবেদন : গণতান্ত্রিক শাসনের বিকল্প নেই মাহমুদুর রহমান বিরোধীদলীয় নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া অক্টোবরে আমাদের দুই প্রবল ক্ষমতাধর প্রতিবেশী রাষ্ট্র সফর করে দেশে ফিরেছেন। অন্য বিষয়াদির মতোই বিদেশ ভ্রমণের ক্ষেত্রেও বাংলাদেশের দুই প্রধান নেত্রীর চরিত্রে লক্ষণীয় ভিন্নতা রয়েছে। আওয়ামী লীগ সভানেত্রী বরাবরই বিদেশে বেড়াতে বিশেষ পছন্দ করেন। তার সকল নিকট-জনেরাও সপরিবারে প্রবাসী। প্রধানমন্ত্রীর পরিবারে দুর্নীতির ব্যাপকতা নিয়ে চারদিকে গুঞ্জন ওঠার প্রেক্ষিতে কয়েক মাস আগে স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার পরিবারের সংজ্ঞা দেশবাসীকে জানিয়েছিলেন। সেই সংজ্ঞায় তিনি ছাড়া তার ছোট বোন শেখ রেহানা এবং উভয়ের পুত্র- কন্যাগণকেবল প্রধান-মন্ত্রীর পরিবারভুক্ত। পুত্রবধূ অথবা কন্যা- জামাতা এবং পৌত্র-পৌত্রীদের এই সংজ্ঞায় স্থান কোথায়, সে বিষয়ে শেখ হাসিনা অবশ্য কিছু বলেননি। যাই হোক, এরা সবাই আমেরিকা, কানাডা ও ব্রিটেনের বাসিন্দা। পদ্মা সেতু দুর্নীতির দেশে-বিদেশে তদন্তের প্রেক্ষিতে তিন দেশের মধ্যে সম্প্রতি কানাডা নিয়েই মিডিয়া ও জনগণের ঔত্সুক্য বিশেষভাবে বেড়েছে। সুতরাং, আমাদের প্রধানমন্ত্রীর বিদেশ ভ্রমণপ্রীতির পেছনে ন্যায্য কারণ রয়েছে। অপরদিকে আগের ইতিহাসে দেখা গেছে, বেগম খালেদা জিয়া স্বদেশে থাকতেই স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন। পাঁচ বছরের সরকারি দায়িত্ব পালনকালে ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতাতেও দেখেছি, তিনি নিজে যেমন বিদেশে যেতে চান না, একইভাবে মন্ত্রী-আমলাদের অপ্রয়োজনীয় বিদেশ ভ্রমণের প্রবণতাকেও যথেষ্ট অপছন্দ করেন। রাজনৈতিক এবং স্বাস্থ্যগত কারণে বিরোধীদলীয় নেত্রীর দুই পুত্র বিগত চার বছরেরও অধিককাল বিদেশে থাকলেও তিনি কিন্তু পরিবার থেকে দূরে থাকার যাতনা সয়ে অধিকাংশ সময় বাংলাদেশেই কাটিয়েছেন। বেগম খালেদা জিয়া দশ বছর বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছেন। শেখ হাসিনা ইতোমধ্যে প্রায় নয় বছর পার করেছেন এবং এবারের মেয়াদ পূর্ণ করে তিনিও বেগম খালেদা জিয়ার ১০ বছরের রেকর্ড ধরে ফেলবেন বলেই সকলের ধারণা। মাঝখানের দুই বছরের মইনউদ্দিন-ফখরুদ্দীনের সরকারের সময়টুকু বাদ দিলে দুই নেত্রী দুই দশক ধরে পালাক্রমে সরকারপ্রধান এবং বিরোধীদলীয় প্রধান হয়েছেন। এই সময়ের বিদেশ ভ্রমণের তালিকা প্রণয়ন করলে একজনের বিদেশ ভ্রমণপ্রীতি এবং অপরজনের বিদেশ যেতে অনীহার চিত্রটি জনগণের কাছে পরিষ্কারভাবেই ফুটে উঠবে। ক্ষমতাবানদের বেড়ানোর গল্প রেখে এবার রাজনীতির গুরু-গম্ভীর আলোচনায় আসি। বাংলাদেশে সাধারণ নির্বাচন হতে সংবিধান অনুসারে এখনও এক বছরেরও কিছু অধিক সময় বাকি আছে। জনগণ গভীর আশঙ্কা নিয়ে আগামী নির্বাচনের দিকে তাকিয়ে আছে। দেশব্যাপী এই উদ্বেগজনক পরিস্থিতি সৃষ্টির তাবত্ ‘কৃতিত্ব’ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং সাবেক প্রধান বিচারপতি এবিএম খায়রুল হক ভাগাভাগি করে নিতে পারেন। উভয়ে মিলে সংবিধান থেকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারপ্রথা বাতিল না করলে এই অনভিপ্রেত অস্বস্তির সৃষ্টি হতো না। তবে ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিল না হলেও পরবর্তী তত্ত্বাবধায়ক সরকারপ্রধান কে হচ্ছেন, সেটা নিয়ে সরকার ও বিরোধীদের মধ্যে ২০০৬ সালের মতো একটা টানাপড়েন যে থাকতো, সেটা অস্বীকার করা যাবে না। কারণ অপরিবর্তিত সংবিধান অনুযায়ী বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্বাপেক্ষা বিতর্কিত প্রধান বিচারপতি খায়রুল হকই আজ সেই পদের দাবিদার হতেন। ২০০৬ সালে বিচারপতি কেএম হাসানকে সত্তরের দশকে তার সঙ্গে বিএনপির কথিত সাংগঠনিক সম্পর্ক এবং কর্নেল রশীদের সঙ্গে আত্মীয়তার কারণে আওয়ামী লীগ গ্রহণ করেনি। তদুপরি ২০০৫ সালে চারদলীয় জোট সরকার কর্তৃক বিচারপতিদের অবসর গ্রহণের বয়স ২ (দুই) বছর বৃদ্ধি করার বিষয়টিকে তত্কালীন বিরোধী দল সন্দেহের দৃষ্টিতেই দেখেছে। কিন্তু একজন বিচারপতি হিসেবে কেএম হাসান প্রজ্ঞা, নিরপেক্ষতা, সততা এবং আইনের গভীর জ্ঞানের স্বাক্ষর রেখেছেন। তার প্রাতিষ্ঠানিক এবং ব্যক্তিগত আচরণ সর্বদাই বিচারপতিসুলভ ছিল। দীর্ঘ জজিয়তি জীবনে তিনি যে সকল রায় লিখেছেন, সেগুলো নিয়ে কখনোই কোনো প্রশ্ন উত্থাপিত হয়নি। অপরদিকে বিচারপতি খায়রুল হক আদালতপাড়ায় একজন চরম দলবাজ বিচারপতি হিসেবেই পরিচিতি পেয়েছেন। বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা মরহুম প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের প্রতি তার ব্যক্তিগত বিদ্বেষের বিষয়টি সম্পর্কেও দেশবাসী অবহিত। কাজেই বিচারপতি খায়রুল হককে তত্ত্বাবধায়ক সরকারপ্রধান হিসেবে মেনে নেয়া বিএনপি’র পক্ষে সঙ্গত কারণেই সম্ভব হতো না। মনে রাখা দরকার, এই ধরনের জটিলতা থেকে উত্তরণের পন্থা ত্রয়োদশ সংশোধনীতেই দেয়া ছিল। নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন পদ্ধতি সংক্রান্ত অনুচ্ছেদ, ৫৮গ (৫)-এ বলা ছিল— “যদি আপীল বিভাগের কোনো অবসরপ্রাপ্ত বিচারককে পাওয়া না যায় অথবা তিনি প্রধান উপদেষ্টার পদ গ্রহণে অসম্মত হন, তাহা হইলে, রাষ্ট্রপতি, যতদূর সম্ভব, প্রধান রাজনৈতিক দলসমূহের সঙ্গে আলোচনাক্রমে, বাংলাদেশের যে সকল নাগরিক এই অনুচ্ছেদের অধীনে উপদেষ্টা হইবার যোগ্য তাহাদের মধ্য হইতে প্রধান উপদেষ্টা নিয়োগ করিবেন।” এক-এগারোর সরকার গঠনের সময় তত্কালীন রাষ্ট্রপতি প্রফেসর ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদ কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা ছাড়াই শুধু সামরিক জান্তার নির্দেশে ড. ফখরুদ্দীন আহমদকে প্রধান উপদেষ্টা পদে নিয়োগ দিয়েছিলেন। তার এই পদক্ষেপ সরাসরি সংবিধানের লঙ্ঘন হলেও সে সময় সুশীল (?) সমাজভুক্ত আইনজীবীকুল এবং শেখ হাসিনাসহ মহাজোট নেতৃবৃন্দের মধ্যে কেউ কোনো আপত্তি উত্থাপন করেননি। যাই হোক, দেশের বর্তমান বিবদমান পরিস্থিতিতে উদ্ধৃত অনুচ্ছেদটি রাজনৈতিক সংঘাত থেকে হয়তো জনগণকে মুক্তি দিতে পারত। কিন্তু একতরফাভাবে প্রায় অকার্যকর, একদলীয় সংসদে ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিল করে পঞ্চদশ সংশোধনী গৃহীত হওয়ার ফলে আলাপ- আলোচনার মাধ্যমে সকলের কাছে গ্রহণযোগ্য একজন ব্যক্তিকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারপ্রধান পদে নিযুক্তির সুযোগ রহিত করা হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে আগামী বছর একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি গ্রহণের পরিবর্তে প্রধান দুই দল এখন আন্তর্জাতিক সম্পর্ক উন্নয়ন ছাড়াও দেশের অভ্যন্তরে আন্দোলন পরিচালনা এবং আন্দোলন প্রতিহত করার কৌশল নির্ধারণে ব্যস্ত। বিগত চার বছরে বিএনপি বিভিন্ন ইস্যুতে থেমে থেমে আন্দোলনের হুঙ্কার দিলেও তেমন কোনো সর্বাত্মক আন্দোলন গড়ে তোলেনি। বরং আওয়ামী লীগের কট্টর সমর্থকও হয়তো স্বীকার করবেন যে, ১৯৯১- পরবর্তী বাংলাদেশের বিগত চারটি গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত সংসদীয় পদ্ধতির সরকারের মেয়াদকালে রাজপথের আন্দোলনের বিবেচনায় এবারই কোনো সরকার তুলনামূলকভাবে অপেক্ষাকৃত শান্তিতে রাষ্ট্র পরিচালনা করে চলেছে। এখন পর্যন্ত জনগণের দৈনন্দিন জীবনযাপন হরণকারী রাজনৈতিক কর্মসূচি হরতাল দেয়াতে বিএনপি’র নীতিনির্ধারকদের মধ্যে পরিষ্কার অনীহা লক্ষ্য করা গেছে। বিএনপিবিরোধীরা বিষয়টিকে নেতিবাচকভাবে উপস্থাপন করে অবশ্যই দাবি করতে পারেন যে, বিরোধী দলের সাংগঠনিক দুর্বলতা এবং সরকারের কঠোর পুলিশি ব্যবস্থার কারণেই দেশের রাজনীতি শান্তিপূর্ণ থেকেছে। যে কারণেই দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে এই উত্তরণ ঘটে থাকুক না কেন, বাস্তবতা হলো মহাজোট সরকার সুশাসন প্রতিষ্ঠার জন্য দীর্ঘ চার বছর সময় পেয়েও চরম দলীয়করণ, নজিরবিহীন দুর্নীতি ও তীব্র প্রতিহিংসাপরায়ণতার কারণে দেশ পরিচালনায় সর্বক্ষেত্রে ব্যর্থ হয়েছে। সরকারের বিদেশি মুরব্বি গোষ্ঠীও বাংলাদেশে জনমতের পরিবর্তন সঠিকভাবে আন্দাজ করতে পেরে তাদের কৌশলেও পরিবর্তন এনেছে। তাদের সেই পরিবর্তনে এদেশের শাসকগোষ্ঠীও যে বিচলিত হয়ে পড়ছে, সেটাও বেগম জিয়ার সাম্প্রতিক ভারত সফর নিয়ে নেতৃবৃন্দের অকূটনৈতিক মন্তব্যের মাধ্যমে প্রমাণিত হয়েছে। এ অবস্থায় নির্বাচনে পরাজয়- পরবর্তী অবধারিত জনরোষ থেকে রক্ষা পেতেই ক্ষমতাসীন মহল ক্ষমতা চিরস্থায়ী করার আয়োজন করছে। ইতিহাস থেকে শিক্ষা গ্রহণ করলে এই সর্বনাশা খেলা থেকে তাদের অবশ্যই নিবৃত্ত হওয়া উচিত। ১৯৭৫ সালে সংবিধান সংশোধনের ফলাফল হৃদয়বিদারক হয়েছিল। জেনারেল এরশাদ ১৯৮৬ এবং ১৯৮৮ সালে দুই দফায় একতরফা নির্বাচন করলেও কোনো বারই সংসদের মেয়াদ দুই বছরের বেশি টেকাতে পারেননি। শেষ পর্যন্ত তাকে গণধিকৃত হয়ে গণঅভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত হতে হয়েছে। ১৯৯৬ সালে বিএনপি ১৫ ফেব্রুয়ারির নির্বাচন সংবিধানে তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি সংযুক্তির জন্যই করতে বাধ্য হয়েছিল। সেই স্বল্পকালীন সংসদের মেয়াদও তাই ত্রয়োদশ সংশোধনী গ্রহণের সঙ্গেই সমাপ্ত হয়েছিল। ২০০৭ সালের ২২ জানুয়ারি একতরফা নির্বাচন প্রচেষ্টার বিপজ্জনক পথ ধরেই জেনারেল মইন-মাসুদ গং ক্ষমতা দখল করেছিল। রাষ্ট্রক্ষমতা হাতে পেয়ে তারাও আজকের মহাজোটের মতোই নব্বই দিনের মেয়াদের কথা ভুলে ক্ষমতা চিরস্থায়ী করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছিল। তথাকথিত ‘মাইনাস টু’ সেই ষড়যন্ত্রেরই অংশ ছিল। বাংলাদেশের সুশীল (?) সমাজ তত্কালীন অসাংবিধানিক সরকারকে শুধু সমর্থনই জানায়নি, ‘মাইনাস টু’ বাস্তবায়নে সরাসরি অংশগ্রহণ করেছিল। সে সময় ‘বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র পরিচালনা : প্রচারণা ও বাস্তবতা’ শিরোনামে একটি কলাম লিখেছিলাম। ২০০৮ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি তারিখে প্রকাশিত কলামের এক জায়গায় শেখ হাসিনা এবং বেগম খালেদা জিয়া সম্পর্কে লিখেছিলাম— “বাস্তবতা হলো, এই দুই নেত্রী মিলে দীর্ঘ ১৫ বছর নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রীরূপে বাংলাদেশ পরিচালনা করেছেন এবং কারাবন্দী অবস্থাতেও এই দু’জনই বাংলাদেশের দুই প্রতিদ্বন্দ্বী ধারার রাজনীতির অবিসংবাদিত নেত্রীর স্থানটি ধরে রেখেছেন। বর্তমান নীতিনির্ধারকদের মধ্যে কেউ হয়তো এমন ধারণা পোষণ করেন যে, জননন্দিত নেতা চাইলেই পাওয়া যায় অথবা হওয়া যায়। কিন্তু বিষয়টি এতটা সহজ হলে তথাকথিত মাইনাস টু কৌশল এতদিনে বাস্তবায়ন হয়ে যেত।” ২০০৮ সালের মাঝামাঝি দুই নেত্রী সংসদ এলাকার সাবজেল থেকে মুক্তি পেয়েছিলেন। তবে দুই মুক্তিতে অনেক ফারাক ছিল। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তত্কালীন সামরিক জান্তার সঙ্গে আঁতাত করে ক্ষমতায় প্রত্যাবর্তনের বন্দোবস্ত সমাপ্তি সাপেক্ষেই জেলের বাইরে পা রেখেছিলেন। বাংলাদেশের জনগণের স্বার্থবিরুদ্ধ সেই অশুভ আঁতাত নিয়ে তখন লিখেছিলাম, ‘আঁতাতকারীরা ক্ষমতার পিঠা ভাগে মত্ত।’ ওই বছর জুলাইয়ের ১৭ তারিখে নয়া দিগন্তে প্রকাশিত সেই লেখায় আমার মন্তব্য ছিল— “বর্তমান ক্ষমতাসীনদের সাথে আওয়ামী লীগ এবং তাদের সমমনা রাজনৈতিক দলগুলোর মাখামাখি এখন চূড়ান্ত পর্যায়ে। শেখ হাসিনা কারামুক্ত হয়ে দেশ ছেড়ে এখন বিশ্বভ্রমণ করে বেড়াচ্ছেন এবং সরকারের সাথে আওয়ামী লীগের একপ্রস্থ সংলাপ নাটকও সম্পন্ন হয়েছে। সর্বশেষ আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে এক-এগারোর অন্যতম রূপকার ও প্রচ্ছন্নের ক্ষমতাধর ব্যক্তিটির প্রশংসায় ফুলঝুরি ছোটাচ্ছেন। অপরদিকে এই সময়ের মধ্যে জাতীয়তাবাদী এবং ইসলামী মূল্যবোধে বিশ্বাসী রাজনৈতিক দলগুলোর বিরুদ্ধে ক্ষমতাসীনদের নিপীড়ন তীব্রতর হয়েছে।” সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও অন্যান্য মন্ত্রীর জাতিকে এক- এগারোর ভয় দেখানোর প্রেক্ষিতেই পাঠকদের পুরনো কথাগুলো মনে করিয়ে দেয়ার প্রয়োজন বোধ করলাম। তাদের স্মরণে রাখা আবশ্যক, এক- এগারো আওয়ামী লীগ ও সুশীল (?) গোষ্ঠীর যৌথ প্রকল্প ছিল এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার সেই এক-এগারোর আঁতাতেরই ফসল। এটাই প্রকৃত ইতিহাস। সুতরাং, এক- এগারো সম্পর্কে সমালোচনার নৈতিক অধিকার বাংলাদেশের আর যে নাগরিকই হোক, অন্তত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রাখেন না। ফখরুদ্দীন আহমদের শপথ গ্রহণের দিনে বঙ্গভবনে দলবলসহ তার সহর্ষ উপস্থিতি এবং সেই সরকারের ‘সকল কর্মকাণ্ডের’ আগাম বৈধতা প্রদানের ঘোষণার কথা ভুলো বাঙালি মুসলমান বোধহয় এখনও পুরোপুরি ভুলে যায়নি। তাছাড়া সেই ক্যু দেতা’র অন্যতম নায়ক লে. জে. (অব.) মাসুদউদ্দিন চৌধুরী চাকরিতে একের পর এক মেয়াদ বৃদ্ধির রেকর্ড সৃষ্টি করে আজ পর্যন্ত অস্ট্রেলিয়ায় বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতের দায়িত্ব পালন করে চলেছেন। তাকে এই নজিরবিহীন পুরস্কার প্রদানের পেছনে যে শেখ হাসিনার কৃতজ্ঞতার ঋণ শোধের ব্যাপারটি ক্রিয়াশীল রয়েছে, সেটি দেশের সকল সচেতন নাগরিকই বুঝতে পারেন। এক-এগারোর সরকার দ্বারা শারীরিকভাবে নির্যাতিত বর্তমান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মহীউদ্দীন খান আলমগীর মইন-মাসুদকে লক্ষ্য করে যতই হুংকার ছাড়ুন না কেন, তার যে দুই সাবেক জেনারেলের কেশাগ্র স্পর্শ করারও ক্ষমতা নেই, এটা সম্ভবত তিনিও জানেন। তবু চেঁচামেচি করে গায়ের ঝাল যদি কিছুটা কমানো যায় আর কী! বেগম খালেদা জিয়ার সদ্যসমাপ্ত ভারত সফরের প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশে সহসাই জোর নির্বাচনী হাওয়া বইতে শুরু করবে বলেই মনে হচ্ছে। সংবিধানের বর্তমান অবস্থায় দশম সংসদ নির্বাচন আগামী বছর অক্টোবরের ২৫ থেকে ২০১৪ সালের জানুয়ারির ২৪- এর মধ্যবর্তী যে কোনো দিনে অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। সাবেক প্রধান বিচারপতি ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিল সংক্রান্ত পূর্ণাঙ্গ রায়ে আবার কমপক্ষে ৪২ দিনের নির্বাচন প্রস্তুতির একটা নির্দেশনা দিয়েছেন। রায়ের ওই অংশটি বিবেচনায় নিলে ২০১৩ সালের ডিসেম্বরে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার জোরালো সম্ভাবনা রয়েছে। ২০০৮ সালেও ওই মাসেই নবম জাতীয় সংসদের নির্বাচন হয়েছিল। মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ের মাসে নির্বাচন হলে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের মধ্যে খানিকটা অতিরিক্ত উদ্দীপনা বিরাজ করে। দীর্ঘ তিরিশ বছরের অভিজ্ঞতাসমৃদ্ধ রাজনীতিবিদ শেখ হাসিনাও নির্বাচনের তারিখ নির্ধারণে মনস্তাত্ত্বিকভাবে এগিয়ে থাকার এই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি নিশ্চয়ই বিবেচনায় নেবেন। সব মিলে বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থা অব্যাহত থাকার বিষয়টি এখন সর্বতোভাবে শেখ হাসিনার ওপরই নির্ভর করছে। গণআকাঙ্ক্ষা মান্য করে তিনি একটি নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের ব্যবস্থা গ্রহণ করলে জনগণের ভোটের অধিকার রক্ষার পাশাপাশি দেশও এক অবশ্যম্ভাবী বিপর্যয় থেকে রক্ষা পাবে। ১৯৯৬ সালের বিএনপির মতো বর্তমান সংসদে মহাজোটের সংসদ সদস্যের সংখ্যা নিয়ে কোনো সমস্যা নেই। সে সময় সংসদে বিএনপির দুই- তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা না থাকার কারণেই বেগম খালেদা জিয়াকে ১৫ ফেব্রুয়ারির অজনপ্রিয় নির্বাচনের ঝুঁকি নিতে হয়েছিল। বর্তমান অবস্থায় শেষ হাসিনার ইচ্ছানুযায়ী সংবিধানে যে কোনো সংশোধনী আনার মতো সংখ্যাগরিষ্ঠতা তার দলের রয়েছে। তার সরকারের মেয়াদের শেষদিন পর্যন্ত তিনি আইনগতভাবে বৈধ এবং নৈতিকভাবে জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্য একটি সরকারের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে বিবেচিত হবেন। কিন্তু মেয়াদ শেষে ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে শেখ হাসিনা যদি দশম সংসদের একতরফা নির্বাচন সম্পন্ন করতেও পারেন, তাহলেও তাকে আর বৈধ প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দেশে- বিদেশে কেউ মেনে নেবে না। সেক্ষেত্রে কেবল পেশিশক্তির ওপর নির্ভর করেই তাকে রাষ্ট্র পরিচালনা করতে হবে। আগেই উল্লেখ করেছি, বাংলাদেশের ৪১ বছরের ইতিহাসে সকল অত্যাচারী শাসকের ভয়ানক পরিণতি ঘটেছে। তাছাড়া আন্তর্জাতিকভাবেও বর্তমান সরকার ক্রমেই বন্ধুহীন হয়ে পড়ছে। শেষ ভরসা ভারতীয় দুর্গতেও বেগম খালেদা জিয়া জোরেশোরে হানা দিয়েছেন। সুতরাং কেবল এক ইসলামী জঙ্গি জুজুর ভয় দেখিয়ে ২০০৮-এর মতো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ভারতকে একসঙ্গে পাশে পাওয়ার সম্ভাবনা ক্রমেই ফিকে হয়ে আসছে। এমতাবস্থায় ক্ষমতাসীন মহলের যে কোনো মূল্যে ২০২১ পর্যন্ত ক্ষমতায় টিকে থাকার ফ্যাসিবাদী চিন্তাই বরং আবারও অসাংবিধানিক শক্তির ক্ষমতা দখলের সুযোগ সৃষ্টি করবে। ২০০৭ সালের অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে, সমগ্র জাতিকেই শেষ পর্যন্ত এ ধরনের বোধবুদ্ধিহীন দুঃসাহসিকতার মূল্য চুকাতে হয়। মইন- মাসুদ গংয়ের তুঘলকি রাজত্ব- পরবর্তী পাঁচ বছরে সেনাবাহিনী এবং বিডিআর (বর্তমানে বিজিবি) থেকে শুরু করে বাংলাদেশের প্রায় সকল প্রতিষ্ঠান ধ্বংসপ্রাপ্ত অথবা দুর্বল হয়েছে। দলগুলোর সংকীর্ণ ক্ষমতার রাজনীতি চর্চা বাংলাদেশকে আগের যে কোনো সময়ের তুলনায় অধিকতর পরমুখাপেক্ষী করে তুলেছে। এ অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য দেশের স্বার্থে স্বাধীনতাকামী জনগণের ঐক্য প্রয়োজন। গণতন্ত্রের অনেক দুর্বলতা সত্ত্বেও দেশের স্বাধীনতা রক্ষার্থে অন্তত জাতীয় ইস্যুতে নাগরিকদের ঐক্যবদ্ধ করতে হলে ধারাবাহিক গণতান্ত্রিক শাসন অপরিহার্য। আশা করি, শেখ হাসিনা উপলব্ধি করবেন, অসাংবিধানিক সরকারের আগমনী পথ প্রশস্ত করার চাইতে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনে পরাজিত হয়ে বিরোধী নেত্রীর ভূমিকা গ্রহণ করাও অধিকতর নিরাপদ ও সম্মানজনক। ২০০৮ সালে শোচনীয়ভাবে পরাজিত হওয়ার পর মাত্র চার বছরের ব্যবধানে জনসমর্থনের বিচারে বেগম খালেদা জিয়ার অবিশ্বাস্য ঘুরে দাঁড়ানো থেকে তিনি অনুপ্রেরণা লাভ করতে পারেন। ইমেইল : admahmudrahman@gmail.com