Pages

Thursday, November 13, 2014

কামদেবের কামাত্তা-১

রাস্তার পাশে প্রকান্ড মন্দির,প্রত্যহই পূজা পার্বন চলে ,এই মন্দির বেশ পুরানো ,সেই মুঘল আমলের ও কয়েকশত বছর আগের মন্দির এটা !যখন বাদশাহ আকবর তার দিন ই ইলাহি চালু করেছিল তখন এ মন্দিরে যেন ভাটা পরে গিয়েছিল,পুরোহিতরা জানের ভয়ে নরাধম আকবরের বশ্যতা স্বীকার করে তার বানানো উপসানালয়ে গিয়ে উপাসনা শুরু করে দেয় ! সনাতন তখন ডুবে যায় যায় ,তখনই এক ব্রাহ্মন পরিবার তার ধর্ম প্রচারে নেমে যায় ,আর আস্তে আস্তে আগের সনাতনিরাও তার দেখাদেখি কিছুটা বিদ্রোহী হয়ে ওঠে ,আবার শুরু হয় মন্দিরে ভগবান সেবা ।আমাদের নরেন সেই বিদ্রোহী ব্রাহ্মনেরই বংশধর নরেন সেই মন্দিরেরই পুরোহিত ।নরেনের পিতা নেই ,পিতা একসময় এই মন্দিরেরই পুরোত ছিলেন ,পিতার কাছে থেকে নরেন সর্ব প্রকারের পূজো দীক্ষা নিয়েছে ।মন্দিরেই থাকে নরেন আর ভগবানদের সেবা করে । নরেন সকলের সম্মানের পাত্র ,কভু কেউ নরেনকে নিয়ে বাজে বকার সাহস পায়না পাছে ভগবান অখুশি হওয়ার ডরে । কারন তারা জানে যে ব্রাহ্মন অখুশি তো ব্রহ্মা অখুশি আর ব্রাহ্মনদের কত সম্মান দিয়েই না ভগবান বানিয়েছেন ,তারা স্বয়ং ব্রহ্মার মুখ হইতে বের হয়েছেন ,আর নিম্ন জাতেরা পা থেকে ।আর একজন নিম্নজাত হয়ে ব্রাহ্মনকে নিয়ে কটু বাক্য ,এ যেন বামুন হয়ে চন্দ্র ছুঁইতে চাওয়া ! কিন্তু এত কম বয়সে নরেন এতটাই যে শ্রদ্ধার পাত্র অথচ কতই বা তার বয়স হবে ? বড় জোড় ৩০ কিংবা ৩৫ ।ভাবতেই মাটিতে পা পরেনা নরেনের,আবার মাঝে মাঝে রাগ ও হয় তার,নরেন চেয়েছে এ বয়সটাতে ঘুরে বেড়াতে,শিক্ষা অর্জন করতে কিন্তু বাপটা মরে যাওয়ার দরুন বাপের কাজটা তারই নিতে হল।অবশ্য বাপের মরার পেছনে যে নরেনের হাত নেই সেটাও বলা যায়না ,বলা যায় অর্ধেক যমরাজ করেছে অর্ধেক নরেনের ।নরেনের বাপের মৃত্যুর পেছনে একটা রহস্যময় কাহীনি শোনা যায় ,এখনো কাসুন্দির গ্রামে।রহস্যময় ঘটনাটা তাহলে খুলেই বলি, নরেনের পিতা মাধবের নাকি অনেক সম্পত্তি ছিল ,ধনদৌলত ছিল ,একদিকে ব্রাহ্মন অন্যদিকে প্রচুর ধনসম্পদ ।তার আমল থেকেই মন্দিরে থেকেই সেবাদাসী নিয়মটা চালু হয়েছে ,তো একদিন নরেনেদের মন্দিরে নাকি শুদ্রদের এক কন্যাকে সেবাদাসী থাকতে দেয়।কন্যাটি ছিল যেমন সুন্দরি তেমন কর্মঠ ,মন্দিরের সব কাজকর্ম সে একাই করে ফেলত ,এভাবে দিন যাচ্ছিল মেয়েটির মাঝে আর নরেনের পিতার মাঝে ফারাক শুধু জাতের ,মেয়েটা নরেনের পিতার কুনজের পতিত হল ।তেতুল যদি জিহ্বার কাছে রাখা হয় জিহ্বায় তো জল আসবেই ,নরেনের পিতার বেলায় ও তাই হল জিহ্বার অবস্থা তৈলাক্ত হল !কিছু সময় জাতপাত ভুলে গিয়ে নরেনের বাপ শুদ্রকন্যার সাথে কামলীলায় মত্ত হল ,কোথায় জাতপ্রথা উড়ে গেল এক ঈশ্বর বৈ অন্য কেউ জানেনা ।এভাবে আস্তে আস্তে যখন দিন পেরোতে লাগল তখন ঐ কন্যার ঔরষে নরেনের পিতার একটি ভ্রুনের দেখা দিলো ।সারা গ্রামময় জানাজানি হলে নরেনের পিতা মেয়েটিকে বিয়ে করে ফেল্ল !তখন সবাই একটু বিস্মিত আহা জাতের কি হবে ? ব্রাহ্মন হয়ে তুমি এ কি কাজ করেছো গো ? নরেনের পিতা তখন লজ্জিত না হয়ে জানিয়ে দিতো ,

আমরা ব্রাহ্মন ,আমাদের কুনো পাপ নাই ,আমাদের জন্য সবের নিয়ম আছে তুমাগো বেলায় নাই বুঝলা ?

সবার জাত গেল জাত গেল বক্তব্য যখন থেমে গেল এরই কিছুদিন পর নরেনের পিতা আর ঐ মেয়ে উধাও!অবশ্য এর ও কিছুদিন পর শুদ্রের ঐ মেয়ে আর নরেনের পিতার লাশ পাওয়া গিয়েছিল ধানক্ষেতে ।নরেন ঐ লাশের উপর পরে অনেক কান্নাও নাকি করেছিল ,নাকি স্বরে কান্নার সাথে জাতের কথা আছেই ,

আমার বাপরে খাইল ঐ নিচু জাতের কন্যে ,আমার বাআআপরে

নরেনের বাপ মাধব কিভাবে মরেছিল যদিও এখনো তা অজানা তবে গ্রামবাসী কেন যেন একটু আলতো করে নরেনের দিকে তাকাতো ।চোরের মনে পুলিশি ভাব এই সূত্রে নরেন ও নাকি তখন বলত,

দেখো কাকু তোমরা আমার দিকে যেইভাবেই চাইয়া থাকোনা কেন এর পিছে কার হাত আছে ঐটা ভগবানই জানে হুঁ!

অনেকে বলত ,নরেন বিষপ্রয়োগে মেরেছিল বন্ধুদের কাছ থেকে পিতার জন্য জাতপ্রথা নিয়ে ধৃত হওয়ার জন্য । অনেকের মতে নরেন তার বাপকে কস্সিম কালেও মারেনি । নরেনের বাপ কিভাবে মরল ?কে মারল ?কেন মারল ? আরো শোনা য়ায়,নরেনের বাপের মৃত্যুর পর ভগবানকে সে মনে মনে প্রত্যহ ১০০বার গালি দিতো কুবুদ্ধিটা তাঁর মাথায় চাপিয়ে দেয়ার জন্য ।বেচারা ভগবান শুধু নরেনের গালি শুনেই যেত প্রতিবাদ করতনা পাছে যদি পূজা আর্চা না পায় ! নরেনের বাপ আর শুদ্রের মেয়ে কিভাবে মরল ?কে মারল ?কেন মারল ? এগুলো চিরজীবনের জন্যই একটা রহস্য ,সে রহস্য না হয় পাঠক মনে আজো থেকে যাক ।
আজ শরীরটা বড় টালবাহানা শুরু করে দিয়েছে ,একটু বিশ্রাম আজ নিতেই হবে নরেনের না নিলে হবেনা ,দিন রাত খালি নিম্নজাত গুলো পূজা দিতেই আইসছে কোন কাজ কাম নেই ছাগলগুলোর ? নিম্নজাতের কথা ভাবতেই গা ঘিনঘিন করে উঠল নরেনের ,বার কয়েক থুথুও ফেল্ল নরেন । মন্দিরে নাপিতদের আসতে নিষেধ করে দিয়েছে নরেন ,তবুও নাপিতগুলো প্রত্যহ এসে নরেনকে বিরক্ত করে ,পূজা আর্চা করতে বলে অথচ অর্থের বেলায় যবনগুলো দাঁত কেলিয়ে হেসে দিয়ে বলে ,পুরোত মশাই আজ্ঞে মাফ কইরবেন,আজ তেমনটি টেয়াটুয়া পাইনাইকো ! নরেন মনে মনে তখন বলে আহাহাহা এ যেন মামুর বাড়ির আবদার নিয়া বইসচে টেয়া নাই তো পূজো দিতে আইসচো কেন ? আসলে নিম্নজাত গুলো কুনদিন মানুষ্য হৈতে ফাইরলনা সবগুলো ভেড়া ছাগলই থাইকা গেলগা! নরেন চিন্তায় আছে মন্দিরের সামনে একটা সাইনবোর্ড টানিয়ে দিবে,নিম্নজাতের হেঁদুরা মন্দিরে আসবেনা ,তোমরা মন্দিরে আসলে মন্দির ৭ বার ধৌঁত করতে হয় !যদিও আসো তাহলে মোটা অঙ্কের অর্থ ও দামী উপঢৌকন নিয়ে আসতে হবে । আবার ভাবে ,দরকার কি ?কিছু অর্থ তো পাওয়া যায় থাকনা ,আবার সবাই ভাববে পুরোত মশায় অর্থলোভী । নরেন শোয়া থেকে উঠে বসল,কাউকে মন্দিরের দিক আসতে দেখে । উঠে বসতে না বসতেই ডাক পরে যায় , পুরোত মশাই আছেন নিকি পুরোত মশাই ? নরেন সাড়া দেয় ,উঁ আছি কেডায় ? আমি ইন্দ্রজিত্‍ । কিল্লাই আইছত ?নরেন বলে । একডা বেবসা কইরতে যাইমু ,পূজা দিতে আইসছি । নারকেল ,তুলশি ,বেলপাতা আইনছস ?নরেন বলে । হ আইনছি । তয় ভিতরে আইসা বয় ,আমি আইসতেছি ।