Pages

Thursday, August 7, 2014

ইসলামি যৌন আইনশাস্ত্র

বয়ঃসন্ধিকালকে ইসলামে বুলুগ ও বয়ঃস্বন্ধিতে পৌছানো ছেলেকে বালেগ ও মেয়েকে বালেগা বলা হয়ে থাকে| বয়ঃসন্ধিকাল থেকে নারী ও পুরুষের যৌন বৈশিষ্টসমূহ সক্রিয় হতে শুরু করে| তাই এই সময় থেকেই ছেলে ও মেয়ে উভয়ের জন্য মনোদৈহিক ভারসাম্য, স্থিরতা ও নিরাপত্তার জন্য নামাজ, রোজা, নিজ নিজ আওরাহ ও পবিত্রতার বিধান ফরজ বা বাধ্যতামুলক করা হয়| স্বপ্নদোষ [সম্পাদনা] ইসলামী তথ্যলিপিসমূহ থেকে দেখলে স্বপ্নদোষ অতি সাধারণ ও স্বাভাবিক ঘটনা বলে প্রতীয়মান হয়| স্বপ্নদোষ হলে গোসল করে পবিত্রতা অর্জনের নির্দেশ দেয়া হয়েছে| ঋতুস্রাব [সম্পাদনা] রজঃস্রাব ও ঋতুস্রাব বা হায়েজ ও নেফাসকে ইসলামে সরাসরি নারী জাতির জন্য একটি স্বাভাবিক বৈশিষ্ট বলে উল্লেখ করা হয়েছে| এ সময়ে নারীদের নামাজ ও রোজা থেকে অব্যহতি দেয়া হয়েছে| পাশাপাশি গোসলের মাধ্যমে নিয়মিত পবিত্র হওয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে| বৈবাহিক যৌনাচার [সম্পাদনা] হাদীস [সম্পাদনা] ইসলামে যৌন চাহিদা পূরণের জন্য বিবাহের প্রতি ব্যাপকভাবে উৎসাহিত করা হয়েছে| হাদীসে আছে, "যে যুব সম্প্রদায়, তোমাদের মধ্যে যাদের বিয়ে করার সামর্থ আছে তাদের উচিৎ বিয়ে করা, এটি দৃষ্টিকে নত রাখে এবং যৌনাঙ্গের হেফাযত করে; আর যাদের বিয়ে করার সামর্থ নেই তারা যেন রোজা রাখে, কেননা তা যৌন উত্তেজনাকে প্রশমিত করে" —(বুখারী, মুসলিম) নীতি [সম্পাদনা] ইসলামী আইন অনুসারে, বিবাহের মাধ্যমে স্বামী এবং স্ত্রীর মধ্যকার যৌন সম্পর্ক ও যৌনমিলন বৈধ করা হয়| বিয়ে ইসলামী রীতি মাফিক সম্পাদিত হতে হবে। স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে কোন কারণে তালাক হয়ে গেলে যৌনমিলনের সুযোগ থাকে না। বিয়ে পড়ানোর পর যৌনমিলনের আগে মোহরানার অর্থ পরিশোধ করতে হবে। বিয়ের অন্যতম শর্ত যৌনমিলন। তাই অন্যান্য শর্ত পূরণ হলেও স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে যৌনসঙ্গম না-হওয়া পর্যন্ত বিবাহ অসম্পূর্ণ থেকে যায়। স্বামী-স্ত্রীর যৌন সম্পর্ক [সম্পাদনা] ইসলামে স্বামী স্ত্রীর মধ্যকার স্বাভাবিক যৌন সম্পর্ককে বৈধ করা হয়েছে এবং একে ব্যাপকভাবে উৎসাহিত করা হয়েছে| উপরন্তু, ইসলামে এটিকে সদকার সমতুল্য বলা হয়েছে এবং নফল ইবাদতের চেয়েও অনেক বেশি মর্যাদা দেওয়া হয়েছে| ইসলামে স্বামী স্ত্রীর সম্পর্কই একমাত্র সম্পর্ক যেখানে পর্দার কোন বিধিনিষেধ নেই| তবে পায়ুমৈথুন ও রজস্রাবকালে যৌনসম্পর্ক স্থাপনের ব্যাপারে স্পষ্ট নিষেধাজ্ঞা আছে| যৌনতার বিধিনিষেধসমূহ [সম্পাদনা] জনসম্মুখে প্রকাশ্য যৌনতা [সম্পাদনা] ইসলামে যৌনতা কেবল স্বামী-স্ত্রীর মাঝে বৈধ এবং অবশ্যই তা লোকচক্ষুর আড়ালে নির্জন স্থানে হতে হবে| ইসলামে জনসম্মুখে প্রকাশ্য যৌনাচার ও নগ্নতা, জনসম্মুখে যৌন উষ্কানিমুলক আচরণ ও পোশাক পরিধান অন্যান্য সকল ক্ষেত্র সহ বৈবাহিক সম্পর্কের ক্ষেত্রেও নিষিদ্ধ| একটি হাদীসে বর্ণিত হয়েছে, নবী মুহাম্মদ(সাঃ) বলেছেন, "যখন কোন জাতির মধ্যে প্রকাশ্য অশ্লীলতা ছড়িয়ে পড়ে, তখন সেখানে প্লেগ মহামারির আকারে রোগের প্রাদুর্ভাব ঘটে; তাছাড়া এমন সব ব্যাধির উদ্ভব ঘটে, যা পূর্বেকার লোকেদের মাঝে দেখা যায় নি" — সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস নং- ৪,০১৯ পবিত্রতা অর্জন এবং পরিষ্কার- পরিচ্ছন্নতা [সম্পাদনা] যৌনক্রিয়া বা সহবাসের সময় যদি শুধুমাত্র দম্পতির যৌনাঙ্গদ্বয়ের পারস্পারিক অনুপ্রবেশ ঘটে অথবা অনুপ্রবেশের পর বীর্যস্খলন ঘটে তবে এই উভয় ক্ষেত্রেই স্বামী ও স্ত্রী উভয়ের পূর্ণরুপে গোসল করা প্রয়োজন, যাতে তারা পরবর্তী সালাতের পূর্বে পবিত্র হতে পারে| গোসলের জন্য প্রয়োজন এমন পরিষ্কার ও দুর্গন্ধবিহীন পবিত্র পানি যা ইতিপূর্বে গোসল বা শৌচকাজে ব্যবহৃত হয় নি| গোসলের জন্য প্রথমে পবিত্রতা ও ইবাদতের নিয়ত বা মনসংকল্প করতে হবে| এরপর বিসমিল্লাহ বলে পূর্ণরুপে একবার অযু করার পর শরীরের প্রতিটি অংশ ধুতে হবে| রোজা এবং রমজান মাস [সম্পাদনা] রমজান মাসে রোজার সময় যৌনসঙ্গম নিষিদ্ধ। এ সময় যৌনসঙ্গম করলে বা কোন কারণে বীর্যপাত ঘটালে রোজা নষ্ট হয়ে যাবে। যৌন উত্তেজনা বশত: কামরস নির্গত হলে রোজা ক্ষতিগ্রস্থ হবে। রজঃস্রাব [সম্পাদনা] স্ত্রীর রজ:স্রাব কালে যৌনসঙ্গম করা হারাম বা নিষিদ্ধ। স্ত্রীর রজ:স্রাবকালে যৌনসঙ্গম করলে হিজড়া সন্তানের জন্ম হয় বলে হাদীসে উল্লেখ রয়েছে| গর্ভনিরোধ [সম্পাদনা] ইসলামী বিধান অনুযায়ী যৌনসঙ্গমকালে বীর্যপাতের পূর্ব মুহূর্তে লিঙ্গ প্রত্যাহার করে গর্ভনিরোধ করা যায়। একে আজল বলে| এছাড়া কনডম ব্যবহারও আজলের অন্তর্ভূক্ত বলে অনেক আলেম ফতোয়া দিয়েছেন| গর্ভপাত [সম্পাদনা] অধিকাংশ আলেমই গর্ভে সন্তান আসার পর গর্ভপাত থেকে বিরত থাকার পরামর্শ দিয়ে থাকেন| তবে কিছু আলেমদের মতে, গর্ভধারণের কারণে মায়ের স্বাস্থ্যঝুঁকি থাকলে যদি গর্ভপাত করার কারণে মায়ের জীবন বাঁচে তবে গর্ভপাতের অনুমতি দেয়া যেতে পারে| এছাড়া প্রয়োজন ব্যতিরেকে বা নবজাতক ভরণ-পোষণের অর্থের অভাবে হলেও গর্ভপাত নিষিদ্ধ| পবিত্র কোরআনে আল্লাহতাআলা অর্থাভাবে হলেও সন্তান হত্যা করতে নিষেধ করেছেন| পায়ূমৈথুন [সম্পাদনা] ইসলামী বিধান অনুযায়ী মানবদেহে পায়ূতে লিঙ্গ প্রবেশ হারাম। নিজ স্ত্রীর সঙ্গেও পায়ূমৈথুন হারাম বা নিষিদ্ধ। ইসলামী বিধান অনুসারে, এ কাজ কবিরা গুনাহ বা সর্বোচ্চ পাপ। ইসলামের দৃ্ষ্টিতে বিবিধ যৌনাচার [সম্পাদনা] বিবাহ বহির্ভূত যৌনতা (ব্যভিচার ও পরকীয়া) [সম্পাদনা] যে কোন ধরণের বিবাহ বহির্ভূত যৌনাচার ইসলামে নিষিদ্ধ। সমাজ থেকে বিবাহ বহির্ভূত যৌনতা নির্মুল করার জন্য ইসলামে সঠিক সময়ে বিয়ের জন্য জোর দেয়া হয়েছে| যার সঙ্গে বিবাহ স্থির হয়েছে তার সঙ্গে যথাযথ পদ্ধতিতে বিবাহ নিষ্পন্ন না-হওয়া পর্যন্তও যৌনমিলন নিষিদ্ধ। ইসলামী বিচারব্যবস্থায় ব্যভিচারের অভিযোগে কেউ অভিযুক্ত হলে তা প্রমাণ করার জন্য কমপক্ষে চারজন সাক্ষী উপস্থিত করতে হবে| অভিযোগ প্রমাণিত হলে অবিবাহিত ব্যভিচারী পুরুষ বা নারীকে আশিটি বেত্রাঘাত এবং বিবাহিত ব্যভিচারী পুরুষ বা নারীকে পাথর নিক্ষেপ করে হত্যা করতে হবে| আর অভিযোগ প্রমাণিত না হলে বা মিথ্যা প্রমাণিত হলে মিথ্যা অপবাদ রটনাকারীকে আশিটি বেত্রাঘাত প্রদান করতে হবে| সমকামী যৌনাচার [সম্পাদনা] ইসলাম কেবল স্বামী এবং স্ত্রীর মধ্যে যৌনসঙ্গম অনুমোদন করে। যেহেতু দুইজন পুরুষ বা দুইজন নারীর মধ্যে বিবাহ নিষিদ্ধ তাই সমকামী যৌনাচারও ইসলামে নিষিদ্ধ।ইসলামের দৃষ্টিতে এটি একটি বিকৃত ও অত্যন্ত নিকৃষ্ট যৌনাচার যা নারী-পুরুষ যৌনতার স্বাভাবিকতা বিবর্জিত এবং যৌনতার মাধ্যমে প্রাকৃতিকভাবে প্রজননের পরিপন্থী, যা সৃষ্টিগতভবে যৌনতার মৌলিক ও কেন্দ্রীয় উদ্দেশ্য| ইসলামের দৃষ্টিতে এটি ব্যভিচার ও পরকীয়া থেকেও খারাপ একটি কাজ| সমকামী যৌনাচারের কারণে অতীতে নবী লূত (আঃ) এর সম্প্রদায়কে আল্লাহ ধ্বংস করে দেয়ার সাবধানকারী ঘটনা কুরআনের একাধিক সূরা ও একাধিক হাদীসে উল্লেখ রয়েছে| এছাড়া নবী মুহাম্মদ (সাঃ) সমকামীদের অভিসম্পাত করেছেন এবং শাস্তি হিসেবে তাদের হত্যা করার নির্দেশ দিয়েছেন; এছাড়া চার খলিফাও এ ব্যাপারে একমত প্রকাশ করেছেন| সমকামিতা রোধ করার জন্য ইসলামে নারী পুরুষকে লিঙ্গ অনুযায়ী পোশাকীয় ও আচরণিক স্বকীয়তা বজায় রাখতে বলা হয়েছে এবং নারীকে পুরূষের বেশভুষা ও আচরণ এবং পুরুষকে নারীর বেশভুষা ও আচরণ অণুকরণ করতে নিষেধ করা হয়েছে| পাশাপাশি নারী বা পুরুষ সমাজেও উষ্কানিমূলক নগ্নতাকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে| উপপত্নী [সম্পাদনা] ধর্ষণ [সম্পাদনা] ধর্ষণ বিবাহ বহির্ভূত জোরপূর্বক যৌনসঙ্গম, যা এক প্রকার অত্যাচার ও নির্যাতন। তাই ধর্ষণ ইসলামে নিষিদ্ধ। ইসলামী আইন অনুসারে, ধর্ষণের অভিযোগ প্রমানিত হলে অভিযুক্ত ধর্ষককে প্রকাশ্যে জনসম্মুখে মৃত্যুদন্ড প্রদান করতে হয়, যেন উপস্থিত জনতা শাস্তি দেখে ভীত হয়ে ধর্ষণ থেকে বিরত থাকে| হস্তমৈথুন [সম্পাদনা] ইসলাম কেবল স্বামী এবং স্ত্রীর মধ্যে যৌনসঙ্গম অনুমোদন করে। হস্তমৈথুন বা স্বকাম তাই ইসলামে অনুমোদিত নয়। অবিবাহিত যুবকদের ধৈর্য্য ধারনের জন্য পরামর্শ দেয়া হয়েছে। মুখমৈথুন [সম্পাদনা] ইসলামে স্বামী স্ত্রীর মধ্যে মুখমৈথুনের ব্যপারে স্পষ্টভাবে কিছু বলা হয় নি| সে কারণে অনেক আলেমই এটির উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ কিংবা সরাসরি বৈধতা প্রদান করা থেকে বিরত থেকেছেন| আবার অনেক আলেম এটিকে মাকরুহ বলে স্বাব্যস্ত করেছেন| কেয়ামতের লক্ষণ [সম্পাদনা] মূল নিবন্ধ: ইসলামী পরকালবিদ্যা সহীহ হাদীসে বেশ কিছু নিষিদ্ধ যৌনতার সমাজে ছড়িয়ে পড়াকে কেয়ামতের পূর্বলক্ষণ হিসেবে স্পষ্টভাবে নির্দেশ করা হয়েছে| এগুলো হল প্রকাশ্যে অবৈধ যৌনাচার, সমকামিতা , সমাজে অবৈধ যৌন সম্পর্ক সহজ হয়ে যাওয়া এবং অজাচার| [১]

1 comment: