Pages

Friday, August 15, 2014

রাসুলুল্লাহ সা. কি মহিলাদের গাধার সাথে তুলনা করেছেন ? প্রশ্নত্তোর পর্ব

প্রশ্ন: আসসালামু আলাইকুম। আমি নিয়মিত কুরআন শরীফ ও বিভিন্ন হাদীস শরীফের বই (আরবি/ বাংলা/ইংরেজি) নিয়মিত পড়ে থাকি। কিছুদিন আগে কিছু হাদীস পড়ে আমি খুবই মনোকষ্টে আছি। দয়া করে উপযুক্ত ব্যাখ্যা দ্বারা আমার কষ্ট দূর করবেন। আয়শা থেকে বর্নিত, আমাকে বলা হয়েছিল কি কি জিনিস নামাজকে নষ্ট করে। সেগুলো হলো – কুকুর, গাধা ও নারী। — সহী বুখারী, বই-৯, হাদিস-৪৯৩ আমার প্রশ্ন হচ্ছে,এখানে নারীকে কেন উল্লেখ করা হলো? এটা কি অস্মমান জনক নয়? জবাব: ﺑﺴﻢ ﺍﻟﻠﻪ ﺍﻟﺮﺣﻤﻦ ﺍﻟﺮﺣﻴﻢ এই হাদিসের ব্যাখ্যা বুঝার আগে আমরা দু’টি হাদিসের উপর নজর বুলিয়ে নেই। – 338 ﺣﺪﺛﻨﺎ ﺃﺣﻤﺪ ﺑﻦ ﻣﻨﻴﻊ ﺣﺪﺛﻨﺎ ﻫﺸﻴﻢ ﺃﺧﺒﺮﻧﺎ ﻳﻮﻧﺲ ] ﺑﻦ ﻋﺒﻴﺪ [ ﻭﻣﻨﺼﻮﺭ ] ﺑﻦ ﺯﺩﺍﻥ [ ﻋﻦ ﺣﻤﻴﺪ ﺑﻦ ﻫﻼﻝ ﻋﻦ ﻋﺒﺪ ﺍﻟﻠﻪ ﺑﻦ ﻻﺻﺎﻣﺖ ﻗﺎﻝ ﺳﻤﻌﺖ ﺃﺑﺎ ﺫﺭ ﻳﻘﻮﻝ : ﻗﺎﻝ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭ ﺳﻠﻢ ﺇﺫﺍ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﺮﺟﻞ ﻭﻟﻴﺲ ﺑﻴﻦ ﻳﺪﻳﻪ ﻛﺂﺧﺮﺓ ﺍﻟﺮﺣﻞ ﺃﻭ ﻛﻮﺍﺳﻄﺔ ﺍﻟﺮﺣﻞ ﻗﻄﻊ ﺻﻼﺗﻪ ﺍﻟﻜﻠﺐ ﺍﻷﺳﻮﺩ ﻭﺍﻟﻤﺮﺃﺓ ﻭﺍﻟﺤﻤﺎﺭ ﻓﻘﻠﺖ ﻷﺑﻲ ﺫﺭ ﻣﺎ ﺑﺎﻝ ﺍﻷﺳﻮﺩ ﻣﻦ ﺍﻷﺣﻤﺮ ﻣﻦ ﺍﻷﺑﻴﺾ ؟ ﻓﻘﺎﻝ ﻳﺎ ﺍﺑﻦ ﺃﺧﻲ ! ﺳﺄﻟﺘﻨﻲ ﻛﻤﺎ ﺳﺄﻟﺖ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭ ﺳﻠﻢ ؟ ﻓﻘﺎﻝ ﺍﻟﻜﻠﺐ ﺍﻷﺳﻮﺩ ﺷﻴﻄﺎﻥ )ﺳﻨﻦ ﺍﻟﺘﺮﺫﻯ، ﺍﺑﻮﺍﺏ ﺍﻟﺼﻼﺓ، ﺑﺎﺏ ﻣﺎ ﺟﺎﺀ : ﺃﻧﻪ ﻻ ﻳﻘﻄﻊ ﺍﻟﺼﻼﺓ ﺇﻻ ﺍﻟﻜﻠﺐ ﻭﺍﻟﺤﻤﺎﺭ ﻭﺍﻟﻤﺮﺃﺓ، ﺭﻗﻢ ﺍﻟﺤﺪﻳﺚ338-، 347، ( অনুবাদ- আব্দুল্লাহ বিন সামেত বলেন-আমি আবু জর রা. কে বলতে শুনেছি যে, রাসূল সা. বলেছেন, “যখন ব্যক্তি নামায পড়ে, আর তার সামনে হাওদার পিছনের লাকড়ির মত বা হাওদার মাঝের লাকড়ির মত কোন কিছু না হয়, তখন কালো কুকুর, গাধা, বা মহিলা তার নামায ভেঙ্গে দেয়”। তখন আমি বললাম-“কালো কুকুর কি দোষ করল সাদা বা লাল কুকুর ভিন্ন?” তিনি বলেন-“একথা আমি বীজী সা. কেও জিজ্ঞেস করেছিলাম। তখন তিনি বলেছেন যে, ‘কালো কুকুর হল শয়তান’” (তিরমিযী শরীফ, হাদিস নং-৩৩৮, ৩৪৭) – 492 ﺣﺪﺛﻨﺎ ﻋﻤﺮ ﺑﻦ ﺣﻔﺺ ﻗﺎﻝ ﺣﺪﺛﻨﺎ ﺃﺑﻲ ﻗﺎﻝ ﺣﺪﺛﻨﺎ ﺍﻷﻋﻤﺶ ﻗﺎﻝ ﺣﺪﺛﻨﺎ ﺇﺑﺮﺍﻫﻴﻢ ﻋﻦ ﺍﻷﺳﻮﺩ ﻋﻦ ﻋﺎﺋﺸﺔ . ﻗﺎﻝ ﺍﻷﻋﻤﺶ ﻭﺣﺪﺛﻨﻲ ﻣﺴﻠﻢ ﻋﻦ ﻣﺴﺮﻭﻕ ﻋﻦ ﻋﺎﺋﺸﺔ : ﺫﻛﺮ ﻋﻨﺪﻫﺎ ﻣﺎ ﻳﻘﻄﻊ ﺍﻟﺼﻼﺓ ﺍﻟﻜﻠﺐ ﻭﺍﻟﺤﻤﺎﺭ ﻭﺍﻟﻤﺮﺃﺓ ﻓﻘﺎﻟﺖ ﺷﺒﻬﺘﻤﻮﻧﺎ ﺑﺎﻟﺤﻤﺮ ﻭﺍﻟﻜﻼﺏ ﻭﺍﻟﻠﻪ ﻟﻘﺪ ﺭﺃﻳﺖ ﺍﻟﻨﺒﻲ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭ ﺳﻠﻢ ﻳﺼﻠﻲ ﻭﺇﻧﻲ ﻋﻠﻰ ﺍﻟﺴﺮﻳﺮ ﺑﻴﻨﻪ ﻭﺑﻴﻦ ﺍﻟﻘﺒﻠﺔ ﻣﻀﻄﺠﻌﺔ ﻓﺘﺒﺪﻭ ﻟﻲ ﺍﻟﺤﺎﺟﺔ ﻓﺄﻛﺮﻩ ﺃﻥ ﺃﺟﻠﺲ ﻓﺄﻭﺫﻱ ﺍﻟﻨﺒﻲ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭ ﺳﻠﻢ ﻓﺄﻧﺴﻞ ﻣﻦ ﻋﻨﺪ ﺭﺟﻠﻴﻪ ] ﺭ 486 [ )ﺻﺤﻴﺢ ﺍﻟﺒﺨﺎﺭﻯ- ﻛﺘﺎﺏ ﺍﻟﺼﻼﺓ، ﺃﺑﻮﺍﺏ ﺳﺘﺮﺓ ﺍﻟﻤﺼﻠﻲ، ﺑﺎﺏ ﻣﻦ ﻗﺎﻝ ﻻ ﻳﻘﻄﻊ ﺍﻟﺼﻼﺓ ﺷﻲﺀ، ﺭﻗﻢ ﺍﻟﺤﻴﺪﻳﺚ493-، 514 ( অনুবাদ-হযরত মাসরুক আয়শা রা. থেকে বর্ণনা করেন যে, যখন তাকে এই হাদিস শুনানো হল যে, “গাধা ও কুকুর এবং মহিলাদের কারণে নামায ভেঙ্গে যায়” তখন তিনি বললেন যে, “তোমরা আমরা নারী জাতি কে গাধা ও কুকুরের সমতূল্য বানিয়ে দিলে? অথচ আমি নবীজী সা. এর সামনে কিবলার উপর জানাযার মত শুয়ে থাকতাম। আর নবীজী নামায পড়তেন (তাহাজ্জুদ)। তখন আমার পা ছড়ানো দরকার হলে আ র পা নবীজী সা. এর সিজদার স্থানে চলে যেত। (ঘর অন্ধকার থাকার দরুন) যখন তিনি সিজদার জন্য বসতে চাইতেন, তখন আমার পায়ে খোঁচা দিতেন। তখন আমি পা গুটিয়ে নিতাম। (বুখারী শরীফ-হাদিস নং-৪৯২,৫১৪) ব্যাখ্যা মজার ব্যাপার হচ্ছে যে, আপনি যেই প্রশ্নটি করেছেন তা হযরত আয়েশা রা. নবীজী সা. এর মৃত্যুর পরই করে ফেলেছেন। মৌলিকভাবে হাদিসে নারী জ তিকে খাটো করা হয়নি। গাধা ও কুকুরের সাথে তুলনাও করা হয়নি। বরং তাদের স্বাতন্ত্রতা এবং আকর্ষ নীয়তার কথা ব্যক্ত করা হয়েছে। উক্ত হাদিসে মূলনীতি শিখানো হয় ছে যে, কি কি বিষয় নামায ব্যাঘাত ঘটাতে পারে? তিনটি বিষয় নামাযের ব্যাঘাত ঘটাতে পারে বলে হাদিসে উ ধৃত হয়েছে। এই তিনটি বিষয় ভিন্ন তিনটি কারণে নামাযের ব্যাঘাত সৃষ্টি করে। তিনটির কোনটিই একটি আরেকটির মত নয়। সম্পূর্ণই আলাদা। যথা : ১. কালো কুকুর। কালো কুকুর দেখতে ভয়ংকর। অর্থাৎ এটি দেখলে ভীতির সঞ্চার হয়। ভীত হয়ে গেলে মানুষ অস্বাভাবিক আচরণ করে। এ কারণে একে নামায ভঙ্গের কারণ হয়। ২. গাধা। গাধা হল ঘৃণার বস্তু। ঘৃণিত বস্তু দেখলেও মানুষের মাঝে মনযোগিতা হ্রাস পায়। তাই এটিই নামায বিনষ্টের কারণ হয়। ‘ ৩. নারী। নারী হল আকর্ষনীয়। তারপ্রতি মানুষের স্বভাবজাত আকর্ষন থাকে। নারীর কোমনীয়তা, স্বাতন্ত্র সৌন্দর্য মানুষকে আকৃষ্ট করে। আর আকৃষ্ট করে এমন চমকপ্রদ বস্তুও মানুষকে গাফেল করে দেয়। এ কারণে নারীর সামনে আগমণকেও নামায ভঙ্গের কারণ হিসেবে উপস্থাপিত করা হয়েছে। এখানে লক্ষণীয় হল- কুকুরকে ভয়ের কারণে আর গাধাকে ঘৃণার কারণে আর নারীকে সৌন্দর্য ও আকর্ষনীয়তার কারণে নামায ভঙ্গের কারণ বলা হয়েছে। নারীকে আকর্ষনীয়, সৌন্দর্যমন্ডিত বলে উপস্থাপন করাটা কি নারীকে খাটো ক া? অবশ্যই নয়। বরং এটা তাকে সম্মান জানানো। আর তার অনুপম বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করা। (বিষয়টি ভাল করে জানতে পড়ুন- তুহফাতুল আলমায়ী-১/১৬০-১৬)

No comments:

Post a Comment