Pages

Saturday, July 12, 2014

মাহমুদুর রহমানের কলাম

mamdur-sml.jpg ক্রুসেডের লক্ষ্য এখন বাংলাদেশ মাহমুদুর রহমান এগার শতকের শেষ দশক থেকে পরবর্তী প্রায় দু’শ’ বছর ধরে ইউরোপীয় খ্রিস্টান সম্প্রদায় মধ্যপ্রাচ্যের মুসলমানদের বিরুদ্ধে যে লাগাতার যুদ্ধ চালিয়ে গেছে তাকেই ক্রুসেড নামে অভিহিত করা হয়েছে। ১০৯৫ সালে পোপ উরব্ান-২ (Pope Urban II) বাইজেনটাইন সম্রাট এলেক্সিয়াস-১ (Emperor Alexius I)-এর আহ্বানে সাড়া দিয়ে ইউরোপের প্রধানত লাতিন খ্রিস্টানদের সমন্বয়ে সেনাবাহিনী গঠন করে প্রথম তুর্কি সেলজুকদের বিরুদ্ধে যুদ্ধাভিযানে অবতীর্ণ হন এবং শেষ পর্যন্ত ১০৯৯ সালে তখন পর্যন্ত মুসলমানদের নিয়ন্ত্রণাধীন পবিত্র জেরুজালেম নগরী অধিকার করতে সক্ষম হন। প্রকৃতপক্ষে মুসলমানের অর্ধচন্দ্রের (Crescent) বিরুদ্ধে খ্রিস্টীয় ক্রসের (Cross) যে আগ্রাসন তাকেই লাতিন ইউরোপ ক্রুসেড বা ধর্মযুদ্ধ নাম দিয়ে মধ্যযুগে ইউরোপীয় খ্রিস্টানদের মধ্যে ধর্মীয় উন্মাদনা সৃষ্টি করতে সক্ষম হয়েছিল। মুসলমানদের বিরুদ্ধে পরিচালিত এসব তথাকথিত ধর্মযুদ্ধ তত্কালীন সময়ে খ্রিস্টান ধর্মগুরু পোপের অনুমোদন ও নির্দেশক্রমেই পরিচালনা করা হতো। প্রথম ক্রুসেডে মুসলমানরা জেরুজালেম থেকে বিতাড়িত হলেও ১১৮৭ সালের তৃতীয় ক্রুসেডে সুলতান সালাদিনের নেতৃত্বে মুসলমান বাহিনী জেরুজালেম পুনরুদ্ধার করে। ক্রুসেডের হাজার বছরের পুরনো ইতিহাস বর্তমান দশকে নতুন করে প্রাসঙ্গিকতা পেয়েছে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ বুশের সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণার পরিপ্রেক্ষিতে। নবরূপে ক্রুসেডের ধারণার সূত্রপাত অবশ্য ১৯৯৩ সালে স্যামুয়েল পি হান্টিংটন তার সভ্যতার সংঘাত (Clash of Civilizations) তত্ত্বের মাধ্যমেই করে গেছেন। গত এক দশক ধরে আফগানিস্তান ও ইরাকে পশ্চিমা সাম্রাজ্যবাদী যৌথবাহিনীর যে আগ্রাসন চলছে সেটি মূলত মধ্যযুগীয় ক্রুসেডেরই আধুনিক সংস্করণ মাত্র। ২০০১ সালে মার্কিনিদের যুদ্ধ প্রস্তুতিকালীন সময়ে তত্কালীন প্রেসিডেন্ট জর্জ বুশ ক্রুসেড শব্দটি একবার উচ্চারণও করেছিলেন। আন্তর্জাতিক মহলে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টির আশঙ্কা থেকে তার উপদেষ্টারা আর দ্বিতীয়বার তাকে ওই শব্দটি উচ্চারণ করতে না দিলেও স্বঘোষিত Born again Christian জর্জ বুশ (জুনিয়র) যে বর্তমান বিশ্বকে ক্রুসেডের আলোকেই দেখে থাকেন এটা তার সামগ্রিক বক্তব্য, আচার-আচরণে পরিষ্কার। স্ক্যানডিনেভিয়াভুক্ত রাষ্ট্রসমূহসহ আধুনিক ইউরোপের অনেক দেশেই ইসলাম বিরোধিতা ক্রমেই প্রকট রূপ ধারণ করছে। ডেনমার্ক, বেলজিয়াম, নেদারল্যান্ড ইত্যাদি রাষ্ট্রের ইসলামবিদ্বেষীরা রীতিমত উন্মাদের মতো আচরণ করছে। ক্যাথলিকদের ধর্মগুরু বর্তমান পোপ বেনেডিক্ট-১৬ তার প্রকাশ্য ইসলামবিরোধী বক্তব্যের জন্য কিছুদিন আগেও যথেষ্ট সমালোচিত হয়েছেন। বিশ্ব রাজনীতির উপরোক্ত বাস্তবতার আলোকে এবার বাংলাদেশের রাজনৈতিক ও সামাজিক দৃশ্যপট বিশ্লেষণ করা প্রয়োজন। আমার অভিজ্ঞতায় বাংলাদেশ পৃথিবীর একমাত্র মুসলমান প্রধান রাষ্ট্র যেখানে সরকারি মদতে গণমাধ্যমে অবিরত ইসলামবিরোধী কুিসত প্রচার চালানো হয়। আমাদের জাতীয় দিবসগুলোতেও ঐক্যের বাণী প্রচারের পরিবর্তে দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ নাগরিকের ধর্ম বিশ্বাসের প্রতি ঘৃণা ছড়ানো হয়ে থাকে। বিস্ময়ের ব্যাপার হলো এই দুষ্কর্মটি যারা করে থাকেন তাদের বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশ আবার মুসলমান পরিবার থেকেই এসেছেন এবং পিতৃ প্রদত্ত মুসলমান নাম ধারণ করেই আছেন। পিতা-মাতার ধর্মবিশ্বাসের প্রতি এই অপরিসীম বিরাগ সৃষ্টির পেছনে ঠিক কোন দর্শন কাজ করেছে তা আমার জানা নেই। তবে বাংলাদেশকে যে একটি শ্রেণী মুসলমানপ্রধান, স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে আর দেখতে চায় না, সেটি ক্রমেই প্রমাণিত হচ্ছে। তারা ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের একাধারে বীরত্বপূর্ণ ও ট্র্যাজিক ঘটনাবলীকে দীর্ঘদিন ধরে সাফল্যের সঙ্গে তাদের উদ্দেশ্য পূরণের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে চলেছে। পশ্চিম পাকিস্তানের পুঁজিপতি, সামন্তবাদী গোষ্ঠী ও সামরিক একনায়কতন্ত্রের বিরুদ্ধে আমাদের স্বাধিকার আদায়ের সংগ্রামকে বাংলাদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ গণমাধ্যমে ইসলামের বিরুদ্ধে লড়াই হিসেবে দেখানোর অপচেষ্টা দীর্ঘদিন ধরে চললেও দৃশ্যত প্রচারণার তীব্রতা বেড়েছে নব্বইয়ের দশক থেকে। স্যামুয়েল হান্টিংটনের চরম ইসলামবিদ্বেষী সভ্যতার সংঘাত তত্ত্বের উদ্ভবও যে প্রায় একই সময়ে হয়েছে এই বিষয়টিকে কেবল কাকতালীয় ভেবে উড়িয়ে দেয়ার সুযোগ নেই। আগেই বলেছি হাজার বছর আগে ইসলামিক ক্রিসেন্টকে মোকাবেলা করার জন্যই খ্রিস্টান ধর্মযাজকরা ক্রুসেড আবিষ্কার করেছিলেন। বাংলাদেশে ১৯৭১ সালে নির্যাতনকারী পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী এবং তাদের স্বল্পসংখ্যক এ দেশীয় দালালগোষ্ঠী মুসলমান ধর্মাবলম্বী হওয়ার বিষয়টিকে সাম্রাজ্যবাদ ও আধিপত্যবাদের বর্তমান দোসররা সুযোগ হিসেবে নিয়ে ইসলামের সব প্রতীককে জনগণের কাছে বিকৃতভাবে উপস্থাপন করে চলেছে। ইসলামের আদিযুগ থেকেই চাঁদ- তারা ইসলামী আন্দোলনের প্রতীক রূপে এই ধর্মাবলম্বীদের পতাকায় প্রদর্শিত হয়ে আসছে। এই প্রতীক কিংবা সবুজ রং পাকিস্তানের পতাকায় আছে বলেই এগুলো সে দেশটির সম্পত্তি হয়ে যায়নি। প্রসঙ্গক্রমে, সমাজতন্ত্রের প্রতীক হিসেবে অনেক দেশেই যে কাস্তে- হাতুড়ি ব্যবহারের রেওয়াজ রয়েছে সেটিও পাঠক জানেন। মহানবী হজরত মোহাম্মদ (সা.)-এর প্রিয় রং ছিল সবুজ এবং অনেক হাদিসে সবুজকে বেহেস্তিদের পোশাকের রং হিসেবে বর্ণনা করা আছে। সবচেয়ে বড় কথা হলো পবিত্র কোরআন শরীফের সূরা আদ দাহার-এর ২১ নম্বর আয়াতে স্বয়ং আল্লাহ্তায়ালা জান্নাতবাসীদের পোশাকের যে প্রতিশ্রুতি প্রদান করেছেন তা নিম্নরূপ : ‘তাদের আবরণ হবে চিকন সবুজ রেশম ও মোটা সবুজ রেশম।’ দাড়ি রাখা ইসলাম ধর্ম পালনে অপরিহার্য না হলেও আমাদের প্রিয় নবী যেহেতু দাড়ি রাখতেন, কাজেই এটি আমরা সুন্নত হিসেবেই পালন করে থাকি। নামাজ আদায় করার সময় টুপি পরে মাথা ঢেকে রাখাও আমাদের ধর্ম পালনেরই রীতি। মস্তক আবৃত করার এই রীতি অন্যান্য সেমেটিক ধর্মেও রয়েছে। ইহুদি জনগোষ্ঠীর একটি উল্লেখযোগ্য অংশ এক বিশেষ ধরনের টুপি (Skull Cap) পরাকে তাদের ধর্ম পালনের অত্যাবশ্যকীয় আচার বলেই মনে করে। খ্রিস্টান ধর্মযাজকরা যথেষ্ট জাঁকজমকপূর্ণ টুপি পরেই রোববার চার্চে ধর্মোপদেশ প্রদান করে থাকেন। অথচ, বাংলাদেশের অধিকাংশ গণমাধ্যমে আজ যুদ্ধাপরাধীর কল্পিত চেহারা দেখাতে গিয়ে মুখে দাড়ি এবং মাথায় সবুজ রংয়ের চাঁদ- তারাখচিত টুপি পরিহিত এক রক্তলোলুপ, বীভত্স দানবকে তরুণ প্রজন্মের সামনে উপস্থাপন করছে। পশ্চিমা মিডিয়াতেও সবুজ রংকে সচরাচর নেতিবাচকভাবেই প্রদর্শন করা হয়ে থাকে। হলিউডের অধিকাংশ ছবিতে শয়তানকে (Devil) সবুজ দেহাবরণবিশিষ্ট দেখানো হয়। এ দেশেও রাজাকার ও যুদ্ধাপরাধী দেখানোর নামে ইলেক্ট্রনিক এবং প্রিন্ট উভয় মিডিয়াতেই ইসলামের চিহ্নসমূহকে পশ্চিমা সাম্রাজ্যবাদীদের মতো করেই নেতিবাচকভাবে প্রদর্শন করা হচ্ছে। এদিকে আবার সরকারের সব মহল থেকেও টুপি, দাড়ি এবং হেজাবকে জঙ্গিবাদের চিহ্ন হিসেবে প্রচার করা হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কট্টর সাম্রাজ্যবাদী ও ইসলামবিদ্বেষী জর্জ বুশের সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধের একজন স্বঘোষিত সাথী। মন্ত্রিসভায় তার সহকর্মী, আইনমন্ত্রী বাংলাদেশের কওমী মাদ্রাসাগুলোকে জঙ্গিবাদের প্রজনন কেন্দ্র হিসেবে ঘোষণা করেছেন। ইসলামী ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক ইসলাম ধর্মকে জঙ্গিবাদের জন্য দায়ী করে বক্তব্য দেয়ার পরও স্বপদে বহাল রয়েছেন। সরকার এবং তাদের সমর্থকদের কার্যকলাপে মনে হতে পারে অন্তত এদেশে ইসলামকে পরাজিত করতে এক হাজার বছর আগের মতো ইউরোপীয় সাম্রাজ্যবাদীদের আর কষ্ট করার দরকার নেই, বাংলাদেশে ক্রুসেড পরিচালনার দায়িত্ব এদেশের মুসলমান নামের লেবাসে ইসলামবিরোধীরাই গ্রহণ করেছে। সরকার এবং তাদের সমর্থক গণমাধ্যমের অবস্থান হলো, জামায়াতে ইসলামী এ দেশে রাজনীতি করতে পারবে না, কারণ তারা যুদ্ধাপরাধী; হিযবুত তাহরিরকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে কারণ তারা সরকারের বিবেচনায় জঙ্গি; দেশ থেকে কওমী মাদ্রাসা উঠিয়ে দিতে হবে, কারণ আইনমন্ত্রীর ভাষ্য অনুযায়ী সেখানে জঙ্গি প্রজনন কারখানা রয়েছে। সোজা কথা, ইসলাম ধর্মের আদর্শভিত্তিক কোনো রাজনীতি বাংলাদেশে করতে দেয়া হবে না। এ সবই বিদেশি প্রভুদের নির্দেশে ও তাদের সন্তুষ্টির জন্যই করা হচ্ছে। এমতাবস্থায় বিএনপির নীতিনির্ধারকরা যদি আশা করে থাকেন যে, পশ্চিমারা বর্তমান সরকারের মতো অনুগত মিত্র ত্যাগ করে জাতীয়তাবাদী শক্তিকে সমর্থন করবে তাহলে তারা এখনও বোকার স্বর্গে বাস করছেন। জামায়াতে ইসলামীও দীর্ঘদিন ধরে মার্কিন তোষণ নীতি অনুসরণ করার ফল এখন ভালোভাবেই ভোগ করছে। বাংলাদেশের জনগণের উপলব্ধি করা প্রয়োজন, সপরিবারে শেখ মুজিব হত্যার জন্য আওয়ামী লীগ এক সময় সিআইএ ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে সরাসরি দায়ী করলেও মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের কাছে আত্মসমর্পণ করতে শেখ হাসিনার কোনো সমস্যা হয়নি। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রও একদা সোভিয়েতপন্থী আওয়ামী লীগকে বুকে টেনে নিয়েছে একবিংশ শতাব্দীর ক্রুসেডের সাথী হিসেবে। ইঙ্গ-মার্কিন-ইসরাইল-ইউরোপীয় ইউনিয়ন সমন্বয়ে গঠিত সাম্রাজ্যবাদী অক্ষশক্তি শত শত বিলিয়ন ডলার খরচ করে এবং নিজ দেশের হাজার হাজার নাগরিকের প্রাণহানি ও অঙ্গহানির বিনিময়ে ইরাক ও আফগানিস্তানে বুশ কথিত আধুনিক যুগের ক্রুসেড প্রায় এক দশক ধরে অব্যাহত রেখেছে। একবিংশ শতকের ক্রুসেডে ইরাক ও আফগানিস্তান ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। দেশ দুটির লাখ লাখ নাগরিক প্রাণ হারিয়েছে; মানব সভ্যতার আদি নিদর্শন লুটপাট করে বিজয়ীদের দেশে নিয়ে যাওয়া হয়েছে; উভয় দেশকে চিরস্থায়ী দাসত্বের বেড়াজালে আবদ্ধ করার প্রক্রিয়া চলছে। সাম্রাজ্যবাদী অভিন্ন গোষ্ঠী আজ বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম ইসলামিক রাষ্ট্র বাংলাদেশকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য ভিন্ন কৌশল প্রয়োগ করেছে। এক নতুন ধরনের পরীক্ষা চালানো হচ্ছে আমাদের পবিত্র মাতৃভূমি নিয়ে। সাম্রাজ্যবাদী ও আধিপত্যবাদীদের প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় জেনারেল মইন সেনাবাহিনীকে জাতিসংঘ শান্তি মিশন থেকে চাকরিচ্যুতির ভয় দেখিয়ে শিখণ্ডি রূপে দণ্ডায়মান রেখে তিন বছর আগে রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করেছিলেন। ২০০৭ সালে ক্ষমতা দখলের পর মইন-ফখরুদ্দীন জুটি তাদের বিদেশি প্রভুদের নির্দেশনা অনুযায়ী জাতীয়তাবাদী এবং ইসলামী শক্তিকে নির্মূল করার পরিকল্পনা গ্রহণ করে। দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব বিকিয়ে দেয়ার তার এই হীন প্রচেষ্টায় পেছন থেকে পাশ্চাত্যের সঙ্গে আঞ্চলিক আধিপত্যবাদী ভারতও জেনারেল মইনকে সেই সময় প্রয়োজনীয় সমর্থন প্রদান করেছে। এক- এগারো পরবর্তী সময়ে বহুবার লিখেছি, বাংলাদেশের রাষ্ট্রক্ষমতায় ইসলাম বিদ্বেষী একটি সেক্যুলার গোষ্ঠীকে অধিষ্ঠিত করার যে পরিকল্পনা ২০০২ সাল থেকে ক্রমান্বয়ে প্রণয়ন করা হয়েছিল তারই একটি পর্যায় ছিল মইন-মাসুদ গংয়ের ক্ষমতা দখল। আনোয়ার চৌধুরী, বিউটেনিস, রেনাটা, ফ্রয়েন মিলিতভাবে যে কৌশল প্রয়োগ করে বাংলাদেশে চাঁদ- তারাকে পরাজিত করে বিনা খরচায় ক্রুসেডের ঝাণ্ডাকে বিজয়ী করতে পেরেছে সেখান থেকে অন্যান্য মুসলমান সংখ্যাগরিষ্ঠ রাষ্ট্রসমূহেরও শিক্ষা নেয়ার প্রয়োজন রয়েছে। বাংলাদেশে ইউএনডিপি’র সাবেক প্রধান এদেশ থেকে বিদায়ের পূর্বমুহূর্তে ষড়যন্ত্রের সব দায়-দায়িত্ব অবশ্য জেনারেল মইন এবং সেই সময়কার অন্যান্য সিনিয়র জেনারেলদের ঘাড়ে চাপিয়ে গেছেন। এটাই পশ্চিমা সাম্রাজ্যবাদের চিরকালের কৌশল। এক সময়ের মার্কিন মিত্র, সেক্যুলার ভাবাদর্শের সাদ্দাম হোসেনকে সপরিবারে হত্যা করতে বর্তমান বিশ্বের একমাত্র পরাশক্তির নীতিনির্ধারকরা কোনো রকম বিবেকের তাড়না অনুভব করেনি। রেনাটাও বাংলাদেশের দেশদ্রোহী জেনারেলকে ভাগ্যের হাতে সমর্পণ করে চীনদেশে পাড়ি জমিয়েছেন। এক-এগারোর বিদেশি কুশিলবদের মধ্যে এখনও যিনি সর্বশেষ ব্যক্তি হিসেবে বাংলাদেশে রয়ে গেছেন সেই ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত ফ্রয়েন তার যাওয়ার মুহূর্তে বাংলাদেশের বিমূঢ় জনগণকে সর্বশেষ কী তথ্য দিয়ে যান সেটি জানার জন্য আমরা উদগ্রীব হয়ে অপেক্ষা করছি। বাস্তবতা হলো, দীর্ঘদিন ধরে নানা ধরনের প্রচার চালিয়ে এদেশের জনগণের একটি বড় অংশের ধর্মবিশ্বাস দুর্বল করে দিয়েই সাম্রাজ্যবাদীরা রক্তপাতহীন ক্রুসেডে জয়লাভ করেছে। এখন সেই জয়কে সংহতকরণের পালা চলছে। বাংলাদেশে তরুণ প্রজন্মের মধ্যে মূল্যবোধের অবক্ষয়ের নমুনা প্রতিদিনই দেখতে পাচ্ছি। যে বিভ্রান্ত সেনাবাহিনীর প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় মার্কিন ও ইউরোপীয় সাম্রাজ্যবাদ তাদের উগ্র সাম্প্রদায়িক উদ্দেশ্য পূরণে সফল হয়েছে, বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর সর্বপ্রথম সেই সেনাবাহিনীকেই চরম আঘাত করা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে নির্বাচন পূর্বকালে প্রধানমন্ত্রীপুত্র সজীব ওয়াজেদ জয়ের লিখিত একটি নিবন্ধের উল্লেখ করা যেতে পারে, যেখানে তিনি বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে একটি মৌলবাদী প্রতিষ্ঠান রূপে চিত্রিত করেছিলেন। সেই লেখায় তিনি সেনাবাহিনীতে শুদ্ধি অভিযান পরিচালনারও আগাম ইঙ্গিত প্রদান করেছিলেন। সজীব ওয়াজেদ জয় কোন দেশের নাগরিক তা জাতির কাছে এখনও পরিষ্কার নয়। তার স্ত্রী মার্কিন নাগরিক এ তথ্য আমরা জানি। কিন্তু, তিনি খ্রিস্টান না ইহুদি ধর্মাবলম্বী তা নিয়েও অস্পষ্টতা রয়েছে। কাজেই তথাকথিত বিডিআর বিদ্রোহের নামে ২০০৯-এর ফেব্রুয়ারিতে ঢাকার পিলখানায় নির্বিচার সেনা অফিসার হত্যাকাণ্ডকে শুধু কাকতালীয় বিবেচনার কোনো সুযোগ আছে বলে আমি মনে করি না। বিডিআর হত্যাকাণ্ড- পরবর্তী চৌদ্দ মাসে বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রটি ইতিহাসের ঘৃণ্যতম মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনায় কলঙ্কিত হয়েছে। বিরোধী দল এবং মতকে দমন করার জন্য রাষ্ট্রযন্ত্র তার সব নির্মমতা ও ভয়াবহতা নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েছে। একের পর এক হত্যাকাণ্ড ঘটে চলছে, নারীর সম্ভ্রম ভূলুণ্ঠিত হয়েছে, রিমান্ডে নিয়ে নির্যাতনের মাত্রা এক-এগারোর সরকারকে অতিক্রম করেছে, ইসলাম ধর্ম বিশ্বাসীদের ওপর নিপীড়ন রোমান যুগে খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীদের করুণ অবস্থা স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে, বিচারের বাণী আর নিভৃতে নয় প্রকাশ্যেই কেঁদে চলেছে। যে বিদেশি কূটনীতিকরা উপদেশ- নির্দেশ দিয়ে চার দলীয় জোট সরকারকে পাঁচ বছর একেবারে ব্যতিব্যস্ত করে রেখেছিল, তারাই হঠাত্ করে ভিয়েনা কনভেনশনের প্রতি পরম শ্রদ্ধাশীল হয়ে উঠেছে। বিভিন্ন সূত্রে শুনতে পাই, দূতাবাসের বিভিন্ন গোপনীয় বৈঠকে এরা নাকি বর্তমান সরকারের ইসলামবিরোধী সার্বিক কর্মকাণ্ডে যারপরনাই সন্তুষ্টি প্রকাশ করে থাকে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের অন্তর্ভুক্ত চিহ্নিত চরম দক্ষিণপন্থী, ইসলামবিদ্বেষী দেশগুলোর কূটনীতিকরা বর্তমান সরকারকে পরবর্তী নির্বাচনে বিজয়ী করানোর কলাকৌশল প্রণয়ন নিয়ে আগাম আলাপ-আলোচনা আরম্ভ করে দিয়েছে। বাংলাদেশের সব প্রতিষ্ঠান ইতোমধ্যেই ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। সংসদ, সচিবালয়, আদালত, সেনাবাহিনী, নির্বাচন কমিশন, দুদক ইত্যাদির ভূমিকা এখন সুতোয় টানা পুতুলের চেয়ে বেশি কিছু নয়। এমতাবস্থায়, রাষ্ট্রকে রক্ষা করতে হলে সফল গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে একটি প্রকৃত দেশপ্রেমিক, বিদেশিদের নিয়ন্ত্রণমুক্ত, ধর্মীয় মূল্যবোধে বিশ্বাসী, গণতান্ত্রিক মোর্চাকে রাষ্ট্র ক্ষমতায় বসানোর বিকল্প নেই। প্রথম ক্রুসেডে জেরুজালেম হারানোর পর সেই পবিত্র নগরী তৃতীয় ক্রুসেডে সুলতান সালাদিনের নেতৃত্বে পুনরুদ্ধার করতে মুসলমানদের প্রায় একশ’ বছর অপেক ভাগ করুন ০ কোন মন্তব্য নেই:

No comments:

Post a Comment