Pages

Tuesday, July 29, 2014

ইসলামের প্রথম শহীদ হলেন হযরত সুমাইয়া বিনতে খাব্বার রা.By:ফারাবী

ইসলামের ইতিহাসের প্রথম শহীদ হলেন একজন মহিলা সাহাবী এই কথাটা কি আমরা জানি ? হ্যাঁ হযরত সুমাইয়া বিনতে খুব্বাত রাযিয়াল্লাহু আনহা হলেন ইসলামের ইতিহাসের প্রথম শহীদ। মক্কী জীবনে হযরত সুমাইয়া বিনতে খুব্বাত রাযিয়াল্লাহু আনহাকে নরাধম আবু জাহেল বর্শা মেরে হত্যা করেছিল। সাহাবী হযরত সুমাইয়া বিনতে খুব্বাত রাযিয়াল্লাহু আনহার এই পৃথিবীতে জন্ম হয়েছিল একজন দাসী হিসাবে। নরাধম আবু জাহেলের চাচা আবু হুজায়ফার গৃহে হযরত সুমাইয়া বিনতে খুব্বাত রাযিয়াল্লাহু আনহার জন্ম হয়। হযরত সুমাইয়া বিনতে খুব্বাত রাযিয়াল্লাহু আনহার স্বামী ছিলেন হযরত ইয়াসীর ইবনে আমির রাযিয়াল্লাহু আনহু। ইয়েমেন থেকে হযরত ইয়াসীর ইবনে আমির রাযিয়াল্লাহু আনহু একজন দাস হিসাবে আবু হুজায়ফার গৃহে নীত হন। পরবর্তীতে ইসলাম পূর্ব যুগেই আবু হুজায়ফা উনার দাসী হযরত সুমাইয়া বিনতে খাব্বাত রাযিয়াল্লাহু আনহা কে উনার দাস হযরত ইয়াসীর ইবনে আমির রাযিয়াল্লাহু আনহুর সাথে বিয়ে দিয়ে দেন। উনাদের বিয়ে হবার পরে আবু হুজায়ফা ইবনে আল মুগীরা উনাদের ২ জন কেই স্বাধীন করে দেন। তাই হযরত সুমাইয়া বিনতে খাব্বাত রাযিয়াল্লাহু আনহার সাথে হযরত ইয়াসীর ইবনে আমির রাযিয়াল্লাহু আনহুর সংসার জীবন একজন স্বাধীন মানব মানবী রুপেই শুরু হয়, কিন্তু আরব সমাজের রীতি ছিল কোন দাস দাসী স্বাধীন হয়ে গেলেও স্বাধীন হওয়ার পর আরবের একজন প্রভাবশালী গোত্রপতির অধীনেই উনাদের কে আরব সমাজে বসবাস করতে হবে। যেহেতু আবু হুজায়ফা আবু জাহেলের আপন চাচা ছিল তাই আবু হুজায়ফার মৃত্যুর পর ইসলাম পূর্ব যুগ থেকেই হযরত সুমাইয়া বিনতে খুব্বাত রাযিয়াল্লাহু আনহা এবং হযরত ইয়াসীর ইবনে আমির রাযিয়াল্লাহু আনহু আবু জেহেলের অধীনতা মেনেই একটি স্বাধীন মানুষ দম্পত্তি রুপে মক্কায় বসবাস করছিলেন। উনারা মুলত মক্কার বনু মাখযুম গোত্রের অধীনতা মেনেই মক্কায় বসবাস করতেন। হযরত সুমাইয়া বিনতে খাব্বাত রাযিয়াল্লাহু আনহা যখন বার্ধক্যে আক্রান্ত হন ঠিক তখনই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নব্যুয়ত পান। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দ্বীন ইসলাম প্রচার করার সাথে সাথে হযরত সুমাইয়া বিনতে খাব্বাত রাযিয়াল্লাহু আনহা ও উনার স্বামী হযরত ইয়াসীর ইবনে আমির রাযিয়াল্লাহু আনহু ও উনাদের ছেলে হযরত আম্মার রাযিয়াল্লাহু আনহু মুসলমান হয়ে যান। উনারা প্রথমে গোপনে মুসলমান হলেও কিছুদিন পর প্রকাশ্যে উনারা দ্বীন ইসলাম গ্রহণ করার ঘোষণা দেন। মক্কায় উনাদের এমন কোন আত্মীয় স্বজন ছিল না যারা উনাদের কে কুরাইশদের নিষ্ঠুরতার হাত থেকে বাঁচাতে পারেন। হযরত সুমাইয়া বিনতে খাব্বাত রাযিয়াল্লাহু আনহা ছিলেন শুরুর দিক থেকে ইসলাম গ্রহন করার মাঝে ১৭ তম ব্যক্তি। ইসলাম গ্রহন করার পর হযরত সুমাইয়া বিনতে খুব্বাত রাযিয়াল্লাহু আনহার উপর নরাধম আবু জেহেল অকথ্য অত্যাচার শুরু করে। নরাধম আবু জাহেল হযরত সুমাইয়া বিনতে খুব্বাত রাযিয়াল্লাহু আনহা এবং উনার স্বামী হযরত ইয়াসীর ইবনে আমির রাযিয়াল্লাহু আনহা কে মক্কার আল-বাতহা উপত্যকার মরুভূমির তপ্ত বালুর মাঝে লোহার পোষাক পড়িয়ে শুয়িয়ে রাখত। যেহেতু হযরত সুমাইয়া বিনতে খুব্বাত রাযিয়াল্লাহু আনহার কোন নিজস্ব গোত্র ছিল না তাই আবু জাহেল তার ইচ্ছামত হযরত সুমাইয়া বিনতে খাব্বাত রাযিয়াল্লাহু আনহা কে অত্যাচার করত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন হযরত সুমাইয়া বিনতে খুব্বাত রাযিয়াল্লাহু আনহার পাশ দিয়ে যেতেন তখন বলতেন-” হে ইয়াসিরের পরিবার- পরিজন ! ধৈর্য্য ধর। তোমাদের জন্য সুসংবাদ। তোমাদের জন্য রয়েছে জান্নাত ! ” রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন হযরত সুমাইয়া বিনতে খাব্বাত রাযিয়াল্লাহু আনহা কে জান্নাতের সুসংবাদ দিতেন তখন হযরত সুমাইয়া বিনতে খাব্বাত রাযিয়াল্লাহু আনহা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে বলতেন- “ইয়া রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আমি জান্নাতের সুগন্ধ এই তপ্ত মরুভূমির বুকেই শুয়েই পাচ্ছি।” দীর্ঘদিন অত্যাচার নির্যাতন করার পরও যখন হযরত সুমাইয়া বিনতে খুব্বাত রাযিয়াল্লাহু আনহা দ্বীন ইসলাম পরিত্যাগ করল না তখন একদিন নরাধম আবু জাহেল হযরত সুমাইয়া বিনতে খুব্বাত রাযিয়াল্লাহু আনহার লজ্জাস্থানে বর্শা নিক্ষেপ করে উনাকে শহীদ করে ফেলে। হযরত সুমাইয়া বিনতে খুব্বাত রাযিয়াল্লাহু আনহার মৃত্যুর পর নরাধম আবু জেহেল উনার স্বামী হযরত ইয়াসীর ইবনে আমির রাযিয়াল্লাহু আনহু কেও তীরবিদ্ধ করে শহীদ করে ফেলে। হযরত সুমাইয়া বিনতে খুব্বাত রাযিয়াল্লাহু আনহার শাহাদাতের ঘটনাটা ঘটে ৬১৫ খ্রীষ্টাব্দে। অর্থ্যাৎ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নব্যুয়ত পাওয়ার পর ৫ বছর পর হযরত সুমাইয়া বিনতে খুব্বাত রাযিয়াল্লাহু আনহা শাহাদাত বরন করেন। বদর যুদ্ধে নরাধম আবু জেহেল নিহত হলে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হযরত সুমাইয়া বিনতে খুব্বাত রাযিয়াল্লাহু আনহার ছেলে হযরত আম্মার রাযিয়াল্লাহু আনহুকে বলেন- “আল্লাহ সুবহানাতায়ালা তোমার মায়ের ঘাতককে হত্যা করেছেন।” হযরত সুমাইয়া বিনতে খুব্বাত রাযিয়াল্লাহু আনহার একমাত্র সন্তান হযরত আম্মার রাযিয়াল্লাহু আনহুর তত্ত্বাবধানেই মদীনার কুবা শহরে ইসলামের ইতিহাসের প্রথম মসজিদ তৈরি হয়। আজ থেকে ১৪০০ বছর পূর্বে এই মহান মহিলা সাহাবী হযরত সুমাইয়া বিনতে খাব্বাত রাযিয়াল্লাহু আনহা ইসলামের সুমহান সৌন্দর্য্যে মুগ্ধ হয়ে মুসলমান হয়ে যান। ইসলাম গ্রহন করার কারনে আবু জেহেল হযরত সুমাইয়া বিনতে খুব্বাত রাযিয়াল্লাহু আনহার প্রতি কত অত্যাচারই না করেছিল কিন্তু হযরত সুমাইয়া বিনতে খুব্বাত রাযিয়াল্লাহু আনহা দ্বীন ইসলাম থেকে একচুলও সরে যাননি। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন দ্বীন ইসলাম প্রচার করা শুরু করেন তখন মক্কার একদম প্রান্তিক জন গোষ্ঠীর লোকেরাই প্রথম দ্বীন ইসলাম গ্রহন করেন। হযরত সুমাইয়া, হযরত বেলাল উনারা ছিলেন মক্কার সেই প্রান্তিক জন গোষ্ঠীর লোক। আজকে আমাদের মুসলিম ঘরের মেয়েদের আদর্শ হল হলিউঠের নায়িকা Angelina Jolie, Keira Neightly, Megan fox, Penelope Cruz, Paris Hilton. এলিট পরিবারের কয়টা মুসলিম মেয়ে জানে যে ইসলামের ইতিহাসের প্রথম শহীদ হলেন একজন মহিলা সাহাবী হযরত সুমাইয়া বিনতে খুব্বাত রাযিয়াল্লাহু আনহা ? এই মহান মহিলা সাহাবী মক্কা বিজয়, সাহাবীদের ইরাক ইরান মিশর তুরস্ক সিরিয়া, মুসলমানদের গৌরব উমাইয়া, আব্বাসীয়, উসমানীয় খিলাফত কিছুই দেখে যেতে পারেননি। হযরত সুমাইয়া বিনতে খুব্বাত রাযিয়াল্লাহু আনহা যখন শহীদ হন তখন সারা পৃথিবীতে ১০০ জনেরও বেশী মুসলমান ছিল না। আমরা মুসলমানরা তখন এতই অসহায় ছিলাম যে স্বয়ং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সামনে হযরত সুমাইয়া বিনতে খুব্বাত রাযিয়াল্লাহু আনহা কে লোহার বর্ম পরিয়ে মরুভুমির উত্তপ্ত বুকে শুয়াইয়ে রাখা হত কিন্তু সাহাবীরা কিছুই করতে পারতেন না। কিন্তু মক্কার সেই রুঢ় পরিবেশেও হযরত সুমাইয়া বিনতে খুব্বাত রাযিয়াল্লাহু আনহা দ্বীন ইসলাম থেকে একচুলও সরে দাঁড়াননি। আর আজকে আমরা মুসলমানের ঘরে জন্ম নিয়েও ইসলাম পালন করিনা, মুসলমান ঘরের কত ছেলে আজকে নাস্তিক সংশয়বাদী হয়ে যাচ্ছে কিন্তু এই ছেলে গুলি যদি একটু কষ্ট করে হায়াতুস সাহাবা, আসহাবে রাসূলের জীবন কথা এই বই গুলি থেকে মহান সাহাবীদের জীবনী গুলি পড়ত তাইলে বুঝত ইসলাম গ্রহন করার জন্য এই মক্কী জীবনে সাহাবীদের উপর মক্কার কাফেররা কত অত্যাচারই না করেছে। কিন্তু সাহাবীরা এক চুলও ইসলাম থেকে সরে দাড়ান নি। বাংলা ভাষায় সাহাবীদের জীবনীর উপর ২ টা বই আছে। হায়াতুস সাহাবা ও আসহাবে রাসূলের জীবন কথা। তাছাড়া ইসলামিক ফাউন্ডেশন থেকেও “হাদীস চর্চায় মহিলা সাহাবীদের অবদান” শীর্ষক খুব সুন্দর একটি বই বের করেছে। সকল মুসলিম ভাই বোনকে সাহাবীদের জীবনী পড়ার জন্য বিনীত ভাবে অনুরোধ করছি।

No comments:

Post a Comment